বেবি ওয়াকার, কার সিটের মতো আধুনিক সরঞ্জামের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুর বিকাশ ব্যাহত করতে পারে, যা কন্টেইনার বেবি সিনড্রোমের দিকে নিয়ে যেতে পারে। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য পেটের উপর খেলতে দেওয়া এবং প্রয়োজন ছাড়া এসব সরঞ্জাম ব্যবহার না করাই উত্তম।

আধুনিক প্রযুক্তির দোহাইতে অভিভাবকত্ব এখন যেমন সহজ, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে অজান্তেই শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে। বেবি ওয়াকার, কার সিট, দোলনা, স্ট্রলার—এইসব আধুনিক ব্যবস্থা শিশুকে সাময়িকভাবে নিরাপদ রাখলেও, দীর্ঘ সময়ে এসব ব্যবহার শিশুর স্বাধীন বিকাশকে ব্যাহত করতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানেড় ভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় কন্টেইনার বেবি সিনড্রোম (Container Baby Syndrome)। এটি শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

কী এই কন্টেইনার বেবি সিনড্রোম?

কন্টেইনার বেবি সিনড্রোম এমন একটি অবস্থা যেখানে শিশুকে দিনের অধিকাংশ সময় একই অবস্থায় কোনো নির্দিষ্ট জায়গায়, যেমন - গাড়ির সিট, দোলনা, স্ট্রলার, বুস্টার চেয়ারে রেখে দেওয়া হয়। এই সমস্ত জিনিস শিশুর চলাচলকে সীমাবদ্ধ করে এবং তাকে এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকতে বাধ্য করে। এতে তার পেশীর বিকাশ, ভারসাম্য, মোটর দক্ষতা এবং মানসিক বৃদ্ধির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

কন্টেইনার বেবি সিনড্রোমের কারণসমূহ

- ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে একই অবস্থানে একটি পাত্রে থাকা।

- পেটের উপর ভর দিয়ে খেলাধুলার অভাব। এটি ঘাড়, পিঠ ও হাতের পেশী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ।

* অভিভাবকদের আধুনিক সরঞ্জামের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। বিশেষ করে সময় বাঁচানোর জন্য শিশুকে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝুকিয়ে বা বসিয়ে রাখা হয়।

কন্টেইনার বেবি সিনড্রোমের প্রভাব

* শিশুর বৃদ্ধি বিলম্বিত হয়। যার ফলে শিশুটি দেরিতে বসতে, হামাগুড়ি দিতে বা হাঁটতে শুরু করতে পারে।

* ঘন্টার পর ঘন্টা একই অবস্থানে বসে থাকার ফলে কখনও কখনও শিশুর পেশীগুলি খুব শক্ত বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যা শরীরের ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে।

* শিশুকে অনেক ঘন্টা একা রেখে দিলে তার মানসিক বিকাশও হ্রাস পেতে পারে।

* দীর্ঘ সময় ধরে পিঠের উপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকলে শিশুর মাথার পিছনের অংশ চ্যাপ্টা হতে পারে।

তবে কী করণীয়?

* প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা শিশুকে পেটের উপর মাটিতে বসে খেলতে দিন। এতে তার শরীরের সমস্ত পেশী সক্রিয় থাকবে।

* গাড়ির সিট বা দোলনার মতো আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করুন তবে ভ্রমণের সময় প্রয়োজন হলেই।

* যদি কোনও কারণে আপনার মনে হয় যে শিশুটি অন্য শিশুদের মতো কথা বলতে, হাঁটতে বা বসতে ভালোভাবে বিকশিত হচ্ছে না, তাহলে অবিলম্বে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।

সারাংশ: কোন অভিভাবকই চাইবেন না অভিভাবকত্বের সুবিধার্থে তার শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হোক। তবে আমাদের অজান্তেই এমন কিছু ছোট ভুল হয়ে থাকে যা শিশুদের জন্য নেতিবাচক। অভিভাবকদের উচিত প্রযুক্তি ব্যবহার ও নির্ভরতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখা।