যখন একজন মা সন্তানের সামনে তার বাবার প্রতি অসম্মানজনক ভাষাব্যবহার, ঝগড়া বা অভিযোগ করেন, তখন সেটি শুধু সম্পর্ক নষ্ট নয়, শিশুদের মন ও মস্তিষ্কে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা হ্রাস পেতে পারে।
শিশুর মানসিক বিকাশ শুধু শিক্ষা, খেলাধুলা বা খাওয়া-দাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে পরিবারের পরিবেশ এবং মা-বাবার আচরণ। বলা হয় সন্তানরা মা বাবার আয়না। প্রথম শিক্ষা পায় মা বাবার কাছ থেকেই, তাদের পারস্পারিক কথাবার্তা ও সম্মান আদান-প্রদান, আচরণ দেখে।
এমন পরিস্থিতিতে, যখন একজন মা সন্তানের সামনে তার বাবার প্রতি অসম্মানজনক ভাষাব্যবহার, ঝগড়া বা অভিযোগ করেন, তখন সেটি শুধু সম্পর্ক নষ্ট নয়, শিশুদের মন ও মস্তিষ্কে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা হ্রাস পেতে পারে। আর অভিভাবকোত্বে বাবা-মা উভয়ের প্রতিই সন্তানদের শ্রদ্ধা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
বাবার প্রতি মায়ের অসম্মানজনক ভাষা কীভাবে শিশু মনে প্রভাব ফেলে
১। শিশুর দৃষ্টিভঙ্গিতে বাবার প্রতি শ্রদ্ধা পতন
যখন সন্তান তার মায়ের মুখে বারবার বাবার সম্পর্কে অবমাননাকর কথা শুনে, তখন বাবার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ ক্ষয় হতে শুরু করে। অথচ শিশুর কাছে বাবা-মা উভয়ই আদর্শ, উভয়ের প্রতিই সন্তানদের শ্রদ্ধা থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যে কোনো একজনকে ছোট করে দেখালে, সে আদৰ্শ ভেঙে পড়ে।
২। ভবিষ্যতের সম্পর্কের ধারণা নিয়ে বিভ্রান্তি
যে শিশু শৈশবে সম্পর্কের মধ্যে অসম্মান, অপমান এবং ঝগড়া দেখে, সে ভবিষ্যতে সেগুলিকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিতে পারে। মা বাবাকে বারবার অপমান করলে ভবিষ্যতে সন্তানরা নিজেরাই সম্পর্কের ক্ষেত্রে শ্রদ্ধার গুরুত্ব বুঝতে পারবে না। তাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, যে তারা যাকে ভালোবাসে তার সম্পর্কে এত খারাপ কথা বলা হয় কেন? ফলে চিন্তাভাবনায় নেতিবাচকতা আসবে, বাচ্চারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে।
যে শিশুরা শৈশবে তাদের বাবা-মায়ের মধ্যে তিক্ততা এবং সমালোচনা দেখে, তারা বড় হওয়ার পরেও একই দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পর্ক দেখতে শুরু করে। তারা হয় নিজেরাই কঠোর হয়ে ওঠে অথবা প্রতিটি ছোট জিনিসের জন্য মানুষের মধ্যে দোষ খুঁজে পেতে শুরু করে।
৩। বাচ্চাদের ওপর প্রভাব ও সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতা বোধ
একজন মা যদি বারবার বাবাকে দোষারোপ বা অসম্মানজনক কথা বলেন, তবে শিশুর মধ্যে আত্মগ্লানি জন্মাতে পারে, আত্মবিশ্বাসের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুরা নিজেদের দোষারোপ করতে শুরু করে, ভাবতে পারে সম্ভবত তাদের কারণেই তাদের বাবা-মায়ের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হচ্ছে। মানসিক চাপ বাড়তে পারে এতে, ঘুম, পড়াশোনা ও আচরণে প্রভাব পড়ে।
৪। মায়ের ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব
মা সন্তানের সামনে তার বাবার সম্পর্কে সবসময় খারাপ কথা বললে, সন্তানের চোখে কেবল বাবার ভাবমূর্তি নষ্ট করে না, বরং মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাও কমতে শুরু করে। বাচ্চারা বারবার তাদের মাকে অভিযোগ করতে, কটূক্তি করতে বা রাগান্বিতভাবে কথা বলতে দেখে, তখন তাদের চোখে মায়ের ভাবমূর্তিও খারাপ হতে শুরু করে।
তারা মাকে শান্ত, বিচক্ষণ এবং স্নেহশীল নারীর পরিবর্তে, একজন রাগান্বিত, অভিযোগমুখর ও নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ হিসেবে দেখতে শুরু করে। এর ফলে, সন্তান মায়ের সাথে মনের দিক থেকে দূরত্ব তৈরি করে এবং তার সঙ্গে খোলামেলা কথাবার্তাও বলতে লজ্জা পায়।

