সন্তানের জেদ বা একগুঁয়েমির পেছনে শুধু সন্তানের একার দোষ নয়, অনেকটা দায় অভিভাবকের আচরণ এবং অভ্যাসও। তাই শিশুর আচরণে পরিবর্তন আনতে চাইলে, আগে অভিভাবকদের নিজেদের আচরণে বদল আনতে হবে।

ছেলে কিছুতেই কথা শোনে না, মেয়েটা একগুঁয়ে হয়ে যাচ্ছে - এমন অভিযোগ অনেক মা-বাবার মুখেই শোনা যায়। কিন্তু এই জেদ বা একগুঁয়েমির পেছনে শুধু সন্তানের একার দোষ নয়, অনেকটা দায় অভিভাবকের আচরণ এবং অভ্যাসও। আজকের শিশুরা খুব সংবেদনশীল। তারা যা দেখে, তা-ই শেখে। তাই শিশুর আচরণে পরিবর্তন আনতে চাইলে, আগে অভিভাবকদের নিজেদের আচরণে বদল আনতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বা তুলনা করার পরিবেশ শিশুদের বেশি জেদি, আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে।

তাই সন্তানকে সহবত শেখাতে হলে, সবচেয়ে আগে অভিভাবকদের সংযত হতে শিখতে হবে। তাঁদের আচরণ ও অভ্যাসে এমন কিছু বদল আনতে হবে, যা দেখে সন্তানও তা অনুসরণ করতে পারে।

সন্তানের জেদি আচরণের নেপথ্যে মা-বাবার কোন অভ্যাসগুলি দায়ী?

১। সন্তানের কথা শুনুন

সন্তান যদি স্কুল বা বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো দিনের গল্প শেয়ার করতে চায়, তখন তাকে গুরুত্ব না দিলে সে কষ্ট পায়। আপনি সন্তানের কথা উপেক্ষা করে তখন ফোন স্ক্রল করেন, টিভি দেখেন বা চ্যাটে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে সে মনে করতে পারে তার কথা শোনার কেউ নেই। গুরুত্বহীন মনে করতে পারে নিজেকে, আত্মকেন্দ্রিক ও জেদি হয়ে উঠতে পারে। পরবর্তী কালে আপনার কথাও সে শুনতে চাইবে না।

উপেক্ষা না করে সন্তানের কথা শুনুন, সময় কাটান তার সাথে। তাতে ওর মনে হবে সে গুরুত্বপূর্ণ।

২। পক্ষপাত বা তুলনা করা

পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পারমিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, দুই সন্তানের মধ্যে এক জনের প্রতি পক্ষপাত, বা সবসময় অন্যদের সঙ্গে তুলনা করার অভ্যাস সন্তানের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়। এতে সে হীনম্মন্যতায় ভোগে, নিজেকে গুটিয়ে নেয় বা আরও বেশি জেদি হয়ে উঠবে।

প্রতিটি সন্তানের নিজস্ব গুণ আছে। হতেই পারে আপনার সন্তান অন্য কিছুতে ভীষণ ভালো, আপনি যাদের সাথে তুলনা করছেন তারা হয়তো সেগুলি পারেনা। তাই আপনার সন্তানের মনোযোগ দিয়ে করা প্রতিটি কাজকেই সম্মান করুন, অন্যের সঙ্গে তুলোনা নয়।

৩। লক্ষ্য চাপিয়ে দেওয়া

“বড় হয়ে ডাক্তার হবি!” - এর উত্তরটা অপনার সন্তানকেই দিতে দিন। জোর করে শিখিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। এই ধরনের অভ্যাস শিশুদের স্বাধীন চিন্তাকে বাঁধা দেয়, ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়তে পারে।

সন্তানকে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন সে কী হতে চায়, চাপিয়ে দেবেন না, শুধু সঠিক দিশা দেখান। সে জানুক, মন দিয়ে করা কোনও কাজই ছোট নয়। শুধু তাকে বোঝাতে হবে সে যাই করুক আপনি পাশে আছেন।

৪। অলস অভ্যাসের প্রভাব

আপনি যদি সারাক্ষণ শুয়ে থাকেন, সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটেন, সন্তান সেটাই শিখবে। মা-বাবার গতিশীল জীবন না থাকলে সন্তানেরাও শারীরিক ও মানসিকভাবে অলস হয়ে পড়বে। অন্যের সঙ্গে মেলামেশার অভ্যাস তৈরিই হবে না।

সক্রিয় জীবনযাপন করুন, সন্তানকেও খেলাধুলা, বইপড়া বা বাইরে সময় কাটানোর অভ্যাস শেখান।

৫। সবসময় খুঁত ধরা নয়, উৎসাহ দিন

সব কাজেই ভুল ধরা, শোনালোচনা করা শিশুর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। শিশুর আত্মবিশ্বাস ধ্বংস হয়ে যায়। বোরং ছোট ছোট কাজের প্রশংসা করলে শিশু চেষ্টা করতে শেখে। চিকিৎসক পারমিতার মতেও, ছোটখাটো কাজেরও প্রশংসা করুন। ভুল-ত্রুটি থাকলেও সহানুভূতির সঙ্গে বোঝান। শিশু যেন বোঝে, আপনি তার পাশে আছেন।