সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, রাতের খাওয়া যদি পরিবারের সঙ্গে বসে খায় শিশু, তবেই তার চিন্তাভাবনা, ব্যবহারে বদল আসবে। শুধু ব্যবহারে নয়, শিশুর মেধারও বিকাশ হবে। তুখোড় হবে পড়াশোনায়।

এক টেবিলে বসে খাওয়ার আদবকায়দা ছোট থেকেই যদি শেখানো যায় শিশুকে তাহলে শিশু হবে স্বাবলম্বী। এমনই বলেন পেরেন্টিং কনসালট্যান্টেরা। গবেষকরা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে বসে একসঙ্গে খাওয়া শিশুদের মেধাবী ও পড়াশোনায় তুখোড় করে তোলে কারণ এর ফলে তাদের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা, উন্নত শব্দভান্ডার, ভালো আচরণ এবং সামগ্রিক জ্ঞান বাড়ে, যা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা তাদের জানার পরিধি বাড়ায় এবং একাগ্রতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। ব্যস্ত জীবনে এই অভ্যাস কমে গেলেও, এটি শিশুর সামাজিক দক্ষতা ও শিক্ষাগত পারফরম্যান্সের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে বলে বিভিন্ন গবেষণা ইঙ্গিত দেয়।

** কেন এই অভ্যাস মেধাবী করে?

* জ্ঞান ও শব্দভান্ডারের বিকাশ:

খাওয়ার টেবিলে পরিবার সদস্যরা খেলাধুলা, রাজনীতি, সাম্প্রতিক ঘটনা বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। শিশুরা এসব আলোচনা শুনে ও তাতে অংশ নিয়ে নতুন শব্দ শেখে, তাদের শব্দভান্ডার বাড়ে এবং তাদের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।

* সামাজিক ও আবেগিক বিকাশ:

একসঙ্গে খাওয়া শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহানুভূতি ও সমন্বয় বাড়ায়। এটি তাদের স্বার্থপরতা কমাতে এবং সামাজিক দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

* মানসিক ও আচরণগত উন্নতি:

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে খায়, তাদের মধ্যে ইতিবাচক আচরণ, সংবেদনশীলতা এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বেশি থাকে। এটি তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতেও সাহায্য করে।

আত্মবিশ্বাস ও স্বাবলম্বীতা: খাওয়ার টেবিলে নিজেদের মতামত প্রকাশ করা ও অন্যদের কথা শোনায় শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়। এছাড়া, খাওয়ার আদব-কায়দা শেখার মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।

পারিবারিক বন্ধন ও নিরাপত্তা: এটি শিশুদের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তা ও ভালোবাসার অনুভূতি তৈরি করে, যা তাদের মানসিক বিকাশে অপরিহার্য।

* গবেষণার সমর্থন: কলম্বিয়া ও হার্ভার্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছরের গবেষণা বলছে, পরিবারের সঙ্গে খাওয়া শিশুর বুদ্ধিবিকাশে সহায়ক, যা পড়াশোনায় ভালো করতে সাহায্য করে। পেরেন্টিং কনসালট্যান্টরাও এই অভ্যাসকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, কারণ শিশুরা দেখে শেখে এবং এতে তাদের সামগ্রিক বিকাশ ঘটে। সুতরাং, পরিবারের সঙ্গে বসে খাওয়া কেবল একটি খাদ্যাভ্যাস নয়, এটি শিশুর সামগ্রিক বিকাশে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা তাকে পড়াশোনায় তুখোড় এবং জীবনযুদ্ধে সফল হতে সাহায্য করে।