শিশু জেদ করলে তাকে বকাঝকা না করে তাকে ভালোবেসে সঠিক যুক্তি দিয়ে নম্রভাবে বোঝানোর চেষ্টা করুন।

শিশুদের ভালো মানুষ হিসেবে বড় করে তোলার জন্য বাবা মায়ের প্রথমেই যেটা করা প্রয়োজন সেটা হল নিজের পছন্দ-অপছন্দকে সম্পূর্ণ শিশুর ওপর চাপিয়ে না দেওয়া। আর দ্বিতীয়তঃ শিশুর মনকে একটু পড়ার চেষ্টা করা। কখনোই কোন কিছু বোঝাতে হলে তাকে ধমক দিয়ে জোর গলায় না বুঝিয়ে ভালোভাবে বোঝাতেই পারেন কিন্তু সেখানেও কিছু কৌশল আছে।

* যেমন পার্কে বা কোথাও গেম খেলতে নিয়ে গিয়েছেন সন্তানকে। খেলায় এমন মত্ত যে, সে ফিরতে চাইছে না। এমনটা অনেক সময়েই হয়। সরাসরি সন্তানকে বাড়ি চল বলে না ধমকে, বলা যেতে পারে, ‘‘সন্ধ্যা হয়ে গেল। পার্ক বন্ধ হবে। এ বার কিন্তু আমাদের যাওয়া দরকার।’’ এ ভাবে কথা বললে সন্তানের উপর নির্দেশ দেওয়া হয় না। আর সেও খুব অতি সহজেই মেনে নেবে।

* এখানে এক ঘরে যদি একজনের বেশি ভাই বোন থাকে সেক্ষেত্রে অন্য ভাইবোনের সঙ্গে তুলনা টানা সন্তানের আত্বিশ্বাসে আঘাত করে। এতে হিতে বিপরীত হয়, বলছেন মনোবিদেরা। বরং সন্তানের ভাল গুণগুলিকে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে।

* সন্তান কাঁদলে, ‘‘কেঁদো না’’ বললেই কিন্তু সে থামে না। কোনও কারণে রাগ হলে, তার সঙ্গে সহজ ভাবে সহমর্মিতার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। বলা যায়, ‘‘সমস্যাটা আমরা দু’জনে মেটাব।’’

* ‘‘তুমি ছোট, বুঝবে না’’— এই জাতীয় কথা বলাও ঠিক নয়। অতীতে শিশু মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় উঠে এসেছে, শিশুরাও বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে পারে। তাদেরও যুক্তিবোধ রয়েছে। সুতরাং তাদের অগ্রাহ্য না করে কোনও কথা যুক্তি দিয়ে বোঝানো দরকার।

* ‘‘ফাঁকিবাজ, অলস, কিছুই হবে না তোমার দ্বারা’’— এমন নেতিবাচক বাক্য প্রয়োগ না করার পরামর্শ দেন মনোবিদেরা। বরং কথায় যেন ইতিবাচক ভাবনা থাকে। ছোটদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করাই অভিভাবকদের লক্ষ্য হওয়া দরকার। ছোট ছোট সাফল্যের প্রশংসাও শিশুদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

শিশুদেরকে সঠিকভাবে বড় করে তোলার জন্য মা-বাবার কি করনীয়:

* তাদের রক্ত তার শরীরে বইলেও মানসিকভাবে সে সম্পূর্ণ আলাদা একটি মানুষ। তাই তার পছন্দ-অপছন্দকে মর্যাদা দিতে শেখা একজন আদর্শ মাতা-পিতার অবশ্য প্রয়োজন ।

* একটি শিশু ছোটবেলা থেকে মা-বাবা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে অনেকটা কপি করে বড় হতে থাকে। তাই এক্ষেত্রে বাবা মায়ের আচরণ তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর দারুণ প্রভাব বিস্তার করে।

* সন্তান যখন ছোট থাকে, তখন সে পিতা-মাতার আচরণ সম্পর্কে অবগত না থাকলেও, কিছুটা আন্দাজ অবশ্যই করতে পারে। আর তার সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ হয় কান্না, অতিরিক্ত জেদ, না খাওয়া প্রভৃতির মাধ্যমে।

* শিশু মনস্তত্ত্ববিদরা মনে করেন, বাচ্চা স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বাবা মায়ের একটু অতিরিক্ত দেখভালের দরকার পরে। সবথেকে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে বেশিরভাগ বাবা-মারা করেনও তাই।

* কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা এসে যায়, তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বাচ্চার সহন ক্ষমতার মধ্যে। মা ছোটবেলায় গান ভালোবাসতেন, কোন কারনে হয়ত গান শিখতে পারেননি, তাই তাঁর বাচ্চাকে অবশ্যই শেখাতে হবে। এই ধরনের মতবাদগুলো বদলানো দরকার।

* বাবা গিটার শিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু অর্থাভাবে কেনা হয়ে ওঠেনি। তাই এখন নিজের বাচ্চাকে শেখাতে চান। যদিও তার পুত্র যে মিউজিক একেবারেই পছন্দ করে না সেটা উনার কাছে কোন বিবেচ্য ব্যাপারই নয়।

অর্থাৎ বাচ্চা কে বুঝতে শিখুন, তার মতামতকে গুরুত্ব দিন। শুধু বইয়ের পিছনে তাকে ঠেলে দেবেন না। পড়ার ফাঁকে সে যদি রান্নাঘরে এসে মায়ের পাশে এসে বসে, " যাও পড়তে বস" বলে দূরে ঠেলে দেবেন না, বরং পাশের কোন তরকারির খোসা তুলে দিয়ে তাকে ছুরি দিয়ে কাঁটা শেখান। যদি বাবা বাজার করতে যাবার সময় শিশুকে সঙ্গে করে নিয়ে যান, তাকে ফল, সবজি হাতে দিয়ে দেখান সেগুলি আসলে দেখতে কেমন? বাচ্চাকে পড়ার ফাঁকে অনবরত ব্রেক দিন, বিশ্বাস করুন এই ব্রেক এর ফলে তার পড়া মনে রাখার ক্ষমতা বাড়বে বৈ কমবে না।