বর্ষায় ঘোরার তালিকায় রাখতে পারেন পরেশনাথ পাহাড়। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য বর্ষা ভেজা স্বর্গের মতো এই ট্রেকিং। মেঘ আর সবুজে ঢাকা পাহাড়ি যাত্রাপথ মনে গেঁথে থাকার মতো। রইলো সম্পূর্ণ গাইড।

বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বর্ষাকাল প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক অন্যরকম অনুভূতি। একঘেয়ে বরফে ঢাকা পাহাড় বা সমুদ্রের বালিয়াড়ির থেকে বেরোতে চাইলে, ঘুরে আসতে পারেন ঝাড়খণ্ডের গিরিডি জেলার পরেশনাথ পাহাড়। জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি এক অতি পবিত্র তীর্থস্থান, আবার পর্যটকদের কাছে প্রকৃতির শান্ত ও রোমাঞ্চকর রূপ দেখার সুযোগ।

পরেশনাথ পাহাড়ের মন্দির ও যাত্রাপথ জুড়ে রয়েছে ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা, অ্যাডভেঞ্চার এবং বর্ষার অভুতপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শীতে এর যাত্রা সব সময়েই জনপ্রিয়। তবে বর্ষার রূপ আলাদাই। কখনো মেঘে ঢেকে যায় পাহাড়। আবার পরোক্ষণেই বৃষ্টির পর মেঘ সরলে রোদে ঝলমলিয়ে ওঠে পাহাড়। জৈন ধর্ম অনুযায়ী, এখানেই ২০ জন তীর্থঙ্কর মোক্ষ লাভ করেছেন, যার মধ্যে পার্শ্বনাথ অন্যতম। পাহাড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য টোংক বা ছোট মন্দির।

যাত্রা শুরু হয় মধুবন থেকে। পরেশনাথ রেল স্টেশন থেকে গাড়িতে মাত্র আধ ঘন্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় মধুবন। মধুবন থেকে পার্শ্বনাথ মন্দির প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ, ট্রেক করে উঠলেই উপভোগ করা যাবে সৌন্দর্য। হাঁটতে না চাইলে এখান থেকেই পেয়ে যাবেন বাইক, টাকা দিলে ওরাই আপনাকে ছড়িয়ে দেবে পাহাড়। তবে শেষে রয়েছে সিঁড়ি, সেগুলি হেঁটেই উঠতে হবে।

পাহাড়ে ওঠার মুখেই টুকুটাকি খাবার, পাহাড় চড়ার লাঠি, বর্ষার ছাতা কিনে নিতে পারবেন। ট্রেকিং শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখে পড়বে আদিবাসীদের দেবতা মারাংবুরুর মন্দির। তাই এই পাহাড়কে কেউ কেউ মারাংবুরু পাহাড় নামেও চেনে। পাহাড় চড়ার পথে তিরচিহ্ন দিয়ে দিকনির্দেশ করা রয়েছে প্রতি পদক্ষেপে। কোথাও সিঁড়ি, কোথাও আবার রাস্তা সংক্ষিপ্ত করার জন্য পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ওঠার ব্যবস্থাও আছে। তবে বর্ষায় পরেশনাথ গেলে, ঝোপঝাড় এড়িয়ে চলাই ভাল। কারণ, সাপখোপের ভয় তো আছেই, রয়েছে পিচ্ছিল পথে পা হড়কে যাওয়ার ঝুঁকিও।

যাত্রাপথে মাঝেমধ্যেই মিলবে ছোট গুমটি। সেখানেই চা, খাবার পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও বিশ্রামের জন্য খাটিয়া ভাড়া নিতে পারেন, তবে খরচাসাপেক্ষ। রাস্তায় খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়লে ডুলি ভাড়া করা যায়। বাইকে গেলে যাত্রাপথে যে যে জায়গায় সিঁড়ি আছে, সেই স্থানগুলি বাইকে গেলেও হেঁটেই উঠতে হয়। তবে নামা তুলনামূলক সহজ। হেঁটে ওঠা-নামা করলে ১০ ঘণ্টা মতো সময় লাগতে পারে।

কী কী দেখবেন ঘুরে?

ট্রেকিং-এ পাহাড়ে ওঠার পথে পাহাড় জুড়ে ছড়িয়ে থাকা জৈন তীর্থঙ্করদের টোঙ্ক বা মন্দিরগুলি ঘুরে দেখে নিতে পারেন। হাতে সময় থাকলে ধানবাদও পুরোটা ঘুরে নিন, ভটিন্ডা জলপ্রপাত, তোপচাঁচি জলাধার, আবার গিরিডিতে রয়েছে উশ্রী জলপ্রপাত ও খণ্ডৌলি জলাধার।

কোথায় থাকবেন?

ট্রেকিং যাত্রার সবচেয়ে কাছে থাকতে হলে মধুবনে থাকবেন। ধর্মশালা ও হোটেল পেয়ে যাবেন অনেক। ৭০০–১২০০ টাকার মধ্যেই রুম ভাড়া পেয়ে যাবেনা। তবে যাওয়ার আগে বুকিং করে রাখলেই সুবিধা সবচেয়ে বেশি।

কীভাবে যাবেন?

পরেশনাথ যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে হাওড়া থেকে - দুন এক্সপ্রেস, নেতাজি এক্সপ্রেস, হাওড়া-জোধপুর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস-সহ একাধিক ট্রেন দাঁড়ায় পরেশনাথ স্টেশনে। রাত সাড়ে ১১টার হাওড়া-জোধপুর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ধরলে ভোর চারটে নাগাদ পরেশনাথ স্টেশনে পৌঁছে যাওয়া যায়। সেই সময় আন্দাজ করেই পছন্দের ট্রেন ধরবেন। আবার শিয়ালদহ থেকে আসতে চাইলে শিয়ালদহ-অজমের সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস আছে, রাত ১০টা ৫৫-তে ছাড়ে পরেশনাথের উদ্দেশ্যে। আবার ফেরার সময়ও আছে অনেক ট্রেন, গয়া-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।

মধুবন যাওয়ার শেয়ার গাড়ি, মাথাপিছু খরচ ৬০-৭০ টাকা। হেঁটে পাহাড় চড়লে তো সেক্ষেত্রে কোনো খরচ নেই, তবে বাইকে গেলে যাতায়াতের জন্য ৭০০-১০০০ টাকা খরচ পড়বে জনপ্রতি। তবে খরচ অনেকটাই বেশি।