সংক্ষিপ্ত
- পুলিশকর্ত্রী থেকে বনে গিয়েছেন রাজনীতিবিদ
- চাকরি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে
- জনসভায় ভারতী ঘোষকে 'অগ্নিকন্যা' সম্বোধন
- স্লোগান তুললেন গেরুয়াশিবিরের কর্মী-সমর্থকরা
তপন মালিক: কয়েকদিন আগে কোলাঘাটের দেউলিয়া বাজারে বিজেপির তরফে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে তৃণমূল থেকে যেমন বিজেপিতে যোগদান চলে, তেমনই সেই সভাতেই প্রাক্তন আইপিএস, তথা রাজ্য বিজেপির সহ সভানেত্রী ভারতী ঘোষকে অগ্নিকন্যা বলে সম্বোধন করা হয়।
আরও পড়ুন: ' নিন্দার ভাষা নেই', হাথরাস গণধর্ষণকাণ্ডে নাম না করে বিজেপিকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর
প্রসঙ্গত, বাম জমানায় বাংলার অগ্নিকন্যা বলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বোঝানো হত। কিন্তু সেদিন সভায় ভারতী ঘোষ পৌঁছনোর পরেই স্লোগান উঠল 'বাংলার অগ্নিকন্যা ভারতী ঘোষ স্বাগতম'। 'বাংলার অগ্নিকন্যা ভারতী ঘোষ জিন্দাবাদ'। অনেকেই ওই শ্লোগান শুনে চমকে উঠেছিলেন। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কর্মী, সমর্থকরা এরপরই বললেন, 'অবাক হওয়ার কিছু নেই, মমতা এখন নিভে গেছেন'। একসময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্যা ছিলেন ভারতী ঘোষ। মমতাকে ‘জঙ্গলমহলের মা’বলেও সম্বোধন করেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর আচমকা ছন্দপতন হটে। সম্পর্কে তিক্ততা বাড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে একদিন চাকরি থেকে ইস্তফা দেন ভারতী ঘোষ। এরপরই তাঁর রাজনীতিতে আসা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। এখনও পুলিসের খাতায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। সিআইডির চোখে তিনি অপরাধী। তাঁর বাড়িতে সিআইডি হানা দিয়েছে।
যেদিন থেকে ‘মা’মুখ ফিরিয়েছিলেন তারপর থেকেই গুঞ্জন রটেছিল অনেক। তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে জল্পনাও কম ছিল না। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন ভারতী ঘোষ। একটি অডিও বার্তায় নিজের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করেছিলেন ভারতী ঘোষ। তিনি জানিয়েছিলেন, খুব শীঘ্রই রাজনীতিতে যোগ দিতে চলেছেন। তারপরই দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে মুকুল রায় এবং কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের উপস্থিতিতে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন ভারতী।তারপরই একদা যাকে 'মা' সম্বোধন করতেন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন ভারতী ঘোষ। মমতার সত্যাগ্রহ আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, 'সত্যাগ্রহ নয়, অসত্যাগ্রহ আন্দোলন হচ্ছে। গান্ধীজি সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেছিলেন দেশের জন্য উনি করছেন একজন পুলিশ কমিশনারের জন্য। এইভাবে কোনও তদন্ত বন্ধ করা যায় না। উনি কেন পুলিশ কমিশনারের হয়ে সত্যাগ্রহ করছেন।'
আরও পড়ুন: পুলিশের মানবিক মুখ, এককালীন এক লক্ষ আর্থিক সাহায্য দুই মাতৃহারা শিশুকে
কোলাঘাটের সভায় ভাষণ শুরু করে ভারতী ঘোষ বলেন, '২০২১-এর ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের প্রতিটি বোমা উদ্ধারের মামলা আর বিস্ফোরণের মামলা সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হবে। সারদা-সহ চিটফান্ডের মামলাগুলো যেমন একসঙ্গে সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তেমনই।' তিনি বলেন, 'সাধারণ মানুষ ক্ষেপে গিয়েছে। মানুষ যেমন পাগলা কুকুরকে তাড়া করে বেড়ায়, ঠিক তেমনই তৃণমূল নেতাদেরও তাড়া করবে সাধারণ মানুষ।' ওই সভা থেকে তিনি পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'আইন মেনে কাজ করুন, মিথ্যা মামলা দেওয়া বন্ধ করুন।' তিনি সেদিন গরু পাচার নিয়েও বলেন, 'গরু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেশ কিছু তৃণমূল নেতা এবং প্রশাসনের কর্তাদের নাম উঠে এসেছে। সীমান্ত এলাকার যেসব তৃণমূল নেতার কোনও চালচুলো ছিল না, তারা ফুলে ফেঁপে উঠলেন কী করে?'
গত লোকসভা নির্বাচনে ঘাটালের প্রার্থী ভারতী ঘোষকে নিয়ে বিপাকে পড়েছিল বিজেপি নেতৃত্ব। ভোটের ঠিক আগে ভোট কিনতে টাকা বিলি করার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে৷ সেই ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছিল গেরুয়া শিবির। শুধু তাই নয়, গভীর রাতে পিংলায় নাকা চেকিংয়ের সময় ভারতী ঘোষের গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা৷ তবে, টাকার উৎস সম্পর্কে কোনও সদুত্তর না পাওয়ায় সেই টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। চার ঘন্টা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ভারতী ঘোষকে।
নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী, ভোট চলাকালীন ৫০ হাজার টাকার বেশি নগদ সঙ্গে রাখা যায় না৷ ভারতীর গাড়িতে উদ্ধার হওয়া লক্ষাধিক টাকা তাই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল৷ তখন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থীর প্রার্থীপদ বাতিলের দাবি জানিয়েছিল তৃণমূল৷ সেদিন কিন্তু ভারতীর সেই কৃতকর্মে তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি বিজেপি দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ তিনি সেদিন স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, আইন আইনের পথে চলবে৷ ভোটের সময় এত টাকা সঙ্গে না রাখাই উচিত৷ এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয়৷ শোনা গিয়েছিল, ভারতী ঘোষকে নিয়ে খড়গপুরে বৈঠক করছিলেন দিলীপ ঘোষ৷ এখন সেই ভারতী ঘোষকেই বিজেপি তাদের জনসভায় বাংলার অগ্নিকন্যা বলে সম্বোধন করছে। বাম জমানায় যিনি বাংলায় সিপিএমের সন্ত্রাস রুখতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ তুল্পনায় অনেক দুর্বল হয়ে গিয়েছেন, এই যুক্তিতেও ত্রিণমূল ছেড়ে সদ্য গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়া কর্মী সমর্থেকরাও তাতে গলা মেলাচ্ছেন।