সংক্ষিপ্ত
কোরান (Quran) অবমাননার অভিযোগে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব (Pak Punjab) প্রদেশের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে পাথর ছুড়ে আঘাত করে করে হত্যা করা হল। তারপর তার দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয় গাছে।
একুশ শতকে এসেও যেন মধ্য যুগে পড়ে রয়েছে পাকিস্তান (Pakistan)। কোরান (Quran) অবমাননার অভিযোগে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব (Pak Punjab) প্রদেশের খানেওয়াল জেলার এক গ্রামে, এক মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে পাথর ছুড়ে আঘাত করে করে হত্যা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, মাগরিবের নামাজের পরই জঙ্গল ডেরা গ্রামে রটে যায়, ওই ব্যক্তি কোরানের কিছু পৃষ্ঠা ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এরপরই শত শত স্থানীয় লোক জড়ো হয়ে তাকে পাথর ছুড়ে ছুড়ে হত্যা করে। শেষে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ওই ব্যক্তির মৃতদেহ।
পাক সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদন অনুসারে, নিহত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছিলেন। কিন্তু, উন্মত্ত জনতা তাঁর কথা কানেই তোলেনি। প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, পাথর ছোড়া শুরু হওয়ার আগেই, স্থানীয় পুলিশের একটি দল ওই গ্রামে উপস্থিত হয়েছিল। অভিযুক্তকে তারা আটকও করেছিল। কিন্তু, হিংস্র জনগণ এসে তাঁকে পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারপর একটি খুটির সঙ্গে বেঁধে তাঁকে লক্ষ্য করে একের পর ইট-পাথর ছুড়ে মারা হয়। একসময় তার দেহ নেতিয়ে পড়ে যায়।
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার দায়ে গণপিটুনিতে হত্যার (Mob Lynching) ঘটনা এই প্রথম নয়। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (Center for Research and Security Studies) পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার দায়ে হত্যা করা হয়েছে অন্তত ১,৪১৫ জনকে। ইমরান খান (Imran Khan) সরকারের আমলে এই ধরণের ঘটনা আরও বাড়ছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মাসের শুরুতেই, পাকিস্তানে কোরানের সুরা লেখা এক পোস্টার ছেঁড়ার অপরাধে উন্মত্ত জনতা এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে প্রকাশ্য রাস্তায় লাঠি, লোহার রড ইত্যাদি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল।
মেরে মেরে থেতলে দেওয়া হয়েছিল তার মাথা। যারপরনাই নির্যাতন করা হয়েছিল। তারপরে প্রকাশ্যেই তার দেহ আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাটি শিয়ালকোটের (Sialkot) ওয়াজিরাবাদ রোড এলাকায় ঘটেছিল। এক বেসরকারী কারখানার রফতানি ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতেন ওই শ্রীলঙ্কার নাগরিক। প্রাথমিকভাবে সেই আক্রমণ চালিয়েছিল কারখানার শ্রমিকরাই। তবে তাদের উসকেছিল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান বা টিএলপি দলের কর্মী-সমর্থকরা। সেই ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রচুর হইচই হয়েছিল। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, কড়া ভাষায় ঘটনার নিন্দা করে, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে, এতদিনের মধ্যেও তদন্ত কিছু এগোয়নি।