প্রায় ৩৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বালির চৈতলপাড়া বুড়িমা পুজো হয়ে আসছে। এই পুজোর প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল সাদা 'ঘোড়ামুখো সিংহ' এবং এখানকার বিশেষ রীতির মধ্যে রয়েছে কাম্য পুজো, পান্তা ভোগ ও বেড়া অঞ্জলী। জেনে নিন বিস্তারিত।

পুুজো ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার প্রামাণ্য কোনও নথি নেই। অনুমান করা হয়, বালির চৈতলপাড়া বুড়িমা আটচালায় প্রায় ৩৫০ বছরেরও বেশি দিন ধরে পুজিত হচ্ছেন মা দুর্গা। প্রচীনত্বের কারণে দেবীকে বুড়িমা বলা হয়। তেমনই পুজো শুরু ইতিহাস থেকে পুজোর রীতি- বালির চৈতলপাড়া বুড়িমার পুুজো ঘিরে আছে নানান কাহিনি।

ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে জানা যায়, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দিক্ষাগুরু রামভদ্র ন্যায়লঙ্কার জমিদারি পাট্টা পেয়ে বালিতে বসবাস শুরু করেন। তিনি সংস্কৃত শিক্ষা কেন্দ্র বা টোল স্থাপন করেন। যা আটচালা সংস্কৃত শিক্ষাকেন্দ্র নামে খ্যাতি পায়। তিনি সেই আটচালায় মা দূর্গার আরাধনা শুরু করেন। এখনও হয়ে আসছে সেই পুজো। বৃহৎনান্দিকেশ্বর মতে এখানে পুজিত হন মা দুর্গা। বুড়িমার মন্দিরের প্রতিমার মূল বৈশিষ্ট্য হল একচালার প্রতিমা, সাদা রঙের ‘ঘোড়ামুখো সিংহ’।

এখানের পুজোর রীতিতে আছে নানান বিশেষত্ব। তার মধ্যে আছে কুমারী পুজো। মা চণ্ডীর পাশাপাশি মহালয়ার পর থেকে ছয় দিন কুমারীকে নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে ভোগ নিবেদন করা হয়। কুমারীর অনুমতি নিয়ে শুরু হয় পুজো।

অষ্টমীতে বিশেষ পুজো হয় যা হল কাম্য পুজো। বালিতে অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে খ্যাত বুড়িমা। তাই তাঁকে আলতা, সিঁদুর, গয়না, কাপড় দিয়ে সকলে ‘মানতের পুজো’ দিয়ে থাকেন। সেই ‘মানতের পুজো’-ই হল কাম্য পুজো। যা বর্তমানে অষ্টমীর দিন হয়ে থাকে। তেমনই এই দিন বিশেষ ধরনের শুকনো প্রসাদ বিতরন করা হয়। তা হল পক্কানো।

দশমীর দিন এখানে হয় বেড়া অঞ্জলী। তেমনই দেবীকে বিদায় বেলায় পান্তা ভোগ নিবেদন করা হয়। এই তালিকায় থাকে পান্তা ভাত, কচুর শাক, ইলিশ মাছে অম্বল নিবেদন করা হয়ে থাকে।

বুড়িমার বিসর্জন দেখতেও দূর দূর থেকে মানুষ আসেন। দুটি বাঁশে কাঁধ দিয়ে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা। সেখানে জোড়া নৌকা করে দেবীর প্রতিমা নিয়ে গিয়ে মাঝ গঙ্গায় হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। এই পুজোর পুরোহিত, ঢাকি, প্রতিমা শিল্পী থেকে আচার্য্য সবাই বংশানুক্রমে তাঁদের দায়িত্ব সামলে আসছেন। সব মিলিয়ে জাঁকজমক পূর্ণ ভাবে প্রতি বছর এখানে পুজিত হন মা দুর্গা।

পুজো ছাড়াও সমাজসেবা মূলক কাজ করে থাকে এই সমিতি। বুড়িমার পরনের বেনারসি কাপড় থেকে পুজোয় জমা পড়া সব বস্ত্র গরীবদের মধ্যে দান করা হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় বিভিন্ন সমাজসেবা মুলক প্রতিষ্ঠানে। তেমনই আয়োজন করা হয় স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের মতো অনুষ্ঠান।