সংক্ষিপ্ত

বাংলার বাতাসে এখন উৎসবের ছোঁয়া। নানা প্রান্তে চলছে দুর্গাপুুজোর প্রস্তুতি। বারোয়ারি পুজোর পাশাপাশি পারিবারিক পুজোগুলিতেও সমান তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।

দেশভাগ হয়েছে, পারিবারিক সম্পত্তি হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু ঐতিহ্য ও রীতি-নীতি একইরকম আছে। পশ্চিমবঙ্গে এরকম পরিবার প্রচুর। উত্তর ২৪ পরগণার রহড়ার চক্রবর্তীপাড়াতেও সেটা দেখা যায়। দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ঢাকা বিক্রমপুরের কুকুটীয়া গ্রামে। দেশভাগের পর সেই পুজো চলে আসে রহড়ায়। পরিবারের সবাই মিলে রীতি মেনেই পুজো করছেন। শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। পারিবারিক পুজো যাতে চালিয়ে যাওয়া যায়, সে ব্যাপারে সবাই এককাট্টা। কিন্তু সমস্যা একটাই, নতুন প্রজন্মকে সেভাবে পুজোয় পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই বিবাহ বা কর্মসূত্রে বাইরে চলে গিয়েছেন। ফলে পুজোর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা চিন্তায় চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা।

চক্রবর্তীপাড়ার পুজোয় একটি অন্যরকম রীতি আছে। এখানে দু'টি আলাদা দুর্গাপ্রতিমা গড়া হয়। একটি প্রতিমা হয় সাধারণ পুজোর জন্য এবং অপর প্রতিমাটি রাখা থাকে সেই শিশুদের জন্য যাদের এখনও পৈতে হয়নি। এই রীতি কীভাবে চালু হল? এই পরিবারের সদস্য প্রলয় চক্রবর্তী জানালেন, 'আমাদের পুজোয় বড় দুর্গার পাশে অপৈতকদের জন্য ছোট দুর্গা থাকে। এর একটা ইতিহাস আছে। আমি বড়দের মুখে শুনেছি, একবার পুজোর সময় একটি ছোট ছেলে প্রতিমা স্পর্শ করতে গিয়েছিল। কিন্তু তখনও তার পৈতে হয়নি বলে বাধা দেন পুরোহিত। তারপর আমাদের পরিবারের পুজোর দায়িত্বে থাকা প্রধান ব্যক্তি স্বপ্নাদেশ পান, পৈতে না হওয়া বালকদের জন্য আলাদা প্রতিমা রাখতে হবে। তারপর থেকেই বড় দুর্গার পাশে ছোট দুর্গা রাখা থাকে। খেলার ছলে ছোট দুর্গার পুজো হয়।'

এই পুজোর আরও একটি রীতি আছে। দুর্গাপুুজোর মধ্যেই হয় কালীপুজো। এ বিষয়ে প্রলয় জানালেন, 'আমাদের পুজোয় অষ্টমী তিথির রাতে কালীপুজো হয়। চক্রবর্তী বংশের ইষ্টদেবীর পুজো করা হয়। দুর্গাপুজোর সঙ্গে এই কালীপুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে পরিবারের এই প্রথা মেনে আসছি আমরা। অতীতে আমাদের পুজোয় বলি হত। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে এবং কালীপুজোয় পাঁঠাবলি হত। তার সঙ্গে আখ, চালকুমড়ো বলিও হত। তবে এখন আর বলি হয় না। ১৯৯৩ থেকে বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে পুজোর আচার-নিষ্ঠা মেনে চলার চেষ্টা করি আমরা।'

পরিবারের হিসেব অনুযায়ী, ১৮৩৮ সাল থেকে চলছে এই পুজো। রহড়ায় পুজো হচ্ছে ১৯৫০ সাল থেকে। এখনও পুজোর সময় পরিবারের সবাই বাইরে থেকে চলে আসেন। সবাই পুজোর কাজে হাত লাগান। একসঙ্গে ভোগ খাওয়া হয়। এভাবেই চলছে চক্রবর্তী পরিবারের পুজো।

আরও পড়ুন-

Durga Puja 2023: একটি নয়, ৩০ বছর পর তিনটি বিরল যোগ ঘটতে চলেছে দেবীপক্ষে

Durga Puja Colour: দেবী দুর্গার পছন্দের নবরং, ৯টি রঙ পুজোর দিনে ব্যবহারে আশীর্বাদ পাবেন গৌরির

YouTube video player