সংক্ষিপ্ত

অতিথি দেব ভব সম্পর্কিত অনেক পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কৃষ্ণ ও সুদামার কাহিনী।

পুরাণ মতে, অতিথি হল দেবতুল্য। অতিথির প্রকৃত অর্থ হল যে ব্যাক্তির আগমনে কোনো দিন ক্ষণের বিচার নেই। তার তুলনা হয় দেবতার সাথে, যেখানে দেবতা রূপে পূজার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ শতাব্দী নাগাদ আর্যরা ভারতবর্ষে আসে। তাদের দ্বারা পরিচালিত সমাজব্যাবস্থায় সমাজের যে চারটি ভাগ চোখে পড়ে তা হল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র। যেখানে সমস্ত কিছুতেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মণদের। পূজিত ছিলেন তাঁরা সমাজে পথ প্রদর্শক হিসেবে। “মাতৃ দেব ভব, পিতৃ দেব ভব, আচার্য দেব ভাব, অতিথি দেব ভব”- এর মধ্যে মাতৃ এবং পিতৃ বাদ পরলে বাকি দুটি বাক্য নির্দেশ করে দিয়েছে অতিথি ও ব্রাহ্মণ হলেন দেব তুল্য। হিন্দু ধর্মে চতুর্বর্ণ সমাজ ব্যাবস্থার ব্রাহ্মণ ছাড়া কেউ শিক্ষাদান করতে পারত না এবং আচার্য হতে পারত না। ব্রাহ্মণ ব্যতীত বৈশ্য ও শুদ্ররা কখনোই কারোর অতিথি হতে পারত না।

অতিথি দেব ভব সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনী

অতিথি দেব ভব সম্পর্কিত অনেক পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কৃষ্ণ ও সুদামার কাহিনী। সুদামা দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা শহরে পৌঁছেছিলেন। তার প্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। খবর পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ খালি পায়ে ছুটে আসেন সুদামার কাছে। তাকে নিজের থেকে উচ্চ আসন দেওয়া হয়েছিল। তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সুদামার সেবা করে শ্রীকৃষ্ণ তাকে না চাইতেই অনেক কিছু দিয়েছিলেন। সুদামার কুঁড়েঘর রাতারাতি প্রাসাদে পরিণত হয়েছিল। তার জীবন ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। সেই ভাবে অতিথি আমাদের কাছে আত্মার আত্মীয়, পরম আপন। এই বিশ্বাস রয়েছে হিন্দু ধর্মে।

উপনিষদেও অতিথি দেব ভবের বর্ণনা

তৈত্তিরীয় উপনিষদ শিক্ষাবল্লী উপনিষদের ১১তম বিভাগে অতিথি দেব ভব বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মাতৃ দেব ভব, পিতৃ দেব ভব এবং আচার্য দেব ভবও বলে। এর অর্থ মা, বাবা, শিক্ষক এবং অতিথি-সবাই দেবতার মতো এবং তাদের সকলকে সম্মান করা উচিত।

এই বাক্যটির প্রকৃত অর্থ কি

অতিথি- তিথি মানে তারিখ এবং আমরা যদি সংস্কৃত অর্থ দেখি, অতিথি মানে এমন কেউ যার আগমনের তারিখ নির্ধারিত নয়।

দেব ভব:- এর অর্থ হল তাঁরা দেবতার মতো।

অতিথি শব্দটি দেওয়া হয়েছে কারণ অতিথিদের আসার সময় নেই। কিংবা কোন তারিখ নেই। এর পাশাপাশি তাদের চলে যাওয়ার সময়ও নেই। এমনকি ছাড়ার তারিখও নেই। এই বাক্যটির অর্থ হল, বাড়িতে যে অতিথি আসবেন, যতক্ষণ অতিথি থাকতে চান তাকে সেবা ও সম্মান করতে হবে, অন্য কোনো তারিখের পার্থক্য বোঝা উচিত নয়। আমরা যেমন বাড়িতে ভগবানের পূজা করি, তেমনি অতিথির সেবা করা উচিত।