মহালয়া অমাবস্যার এই তিথিতে কী করবেন আর কী করবেন না জেনে নিন সেই নিয়মগুলি
- FB
- TW
- Linkdin
প্রতি বছর ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার পরের দিন, প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয়ে অমাবস্যা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ভাদ্র মাসে আসা অমাবস্যাই হল মহালয়া অমাবস্যা। সাধারণত অমাবস্যা তিথিতে পূর্বপুরুষদের তর্পণ প্রদান করা হয়। কিন্তু, এই মহালয়া অমাবস্যা তিথিতে মাতৃকুল, পিতৃকুলের পূর্বপুরুষ, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সকলের জন্যই তর্পণ প্রদান করা হয়।
সাধারণত প্রতিটি অমাবস্যা তিথিতে আমাদের মৃত পূর্বপুরুষরা আমাদের বাড়িতে আসেন এবং আমরা তাদের জন্য যে নৈবেদ্য প্রদান করি তা গ্রহণ করে আমাদের এবং আমাদের বংশধরদের আশীর্বাদ করেন বলে শাস্ত্রে বলা হয়েছে। অমাবস্যা তিথিতে আমাদের পূর্বপুরুষদের যথাযথভাবে পূজা করলে সন্তান লাভ হয়, শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। দীর্ঘায়ু লাভ হয়। সমস্ত সুখ-সমৃদ্ধি লাভ হয়।
অমাবস্যা তিথিতে আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য যদি আমরা কিছুই না করি, এমনকি তাদের ভুলে যাই, তাহলে তাদের অভিশাপ পেতে পারি। প্রতিটি অমাবস্যা তিথিতে পূর্বপুরুষরা ঘরে ঘরে এসে দেখে যান। আমরা তাদের মনে রেখেছি কিনা তা যাচাই করেন। এভাবে ঘরে ঘরে আসা আমাদের পূর্বপুরুষদের মন প্রসন্ন রাখা উচিত। নাহলে তাদের অভিশাপ পেতে হবে।
এর ফলে পরিবারে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি দেখা দেয়। সন্তান লাভে বিলম্ব হয়। শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। মহালয়া মানে হল এক সঙ্গে আসা। আমাদের পূর্বপুরুষরা একসঙ্গে মিলিত হন, সেই সময়কালকেই মহালয়া পক্ষ বলা হয়। পক্ষ মানে ১৫ দিন। মৃত পূর্বপুরুষরা ১৫ দিন - কখনও কখনও ১৬ দিন, আমাদের সঙ্গে থাকেন, সেই সময়কালকেই মহালয়া পক্ষ বলা হয়।
প্রতি বছর আসা মাঘী এবং ভাদ্র অমাবস্যার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ যারা তাদের পিতামাতা, পূর্বপুরুষদের জন্য ৭০, ৮০, ১০০ বছর ধরে একবারও তিথি, তর্পণ করেননি, তারাও যদি এই মহালয়া অমাবস্যা তিথিতে তিথি, তর্পণ করেন তাহলে তাদের আত্মার শান্তি লাভ হয়। এই অমাবস্যা তিথিতে দরিদ্রদের খাবার খাওয়াতে হবে। দরিদ্র, মেধাবী ছাত্রদের লেখাপড়ার জন্য সাহায্য করতে হবে। পুরোহিতদের পোশাক কিনে দিতে হবে।
মহালয়া পক্ষের ১৫ দিনের ফলাফল:
১ম দিন - প্রতিপদ তিথি - অর্থ প্রাপ্তি।
২য় দিন - দ্বিতীয়া তিথি - আদর্শ সন্তান লাভ।
৩য় দিন - তৃতীয়া তিথি - মনোবাঞ্ছা পূর্ণ।
৪র্থ দিন - চতুর্থী তিথি - শত্রুর হাত থেকে রক্ষা।
৫ম দিন - পঞ্চমী তিথি - বাড়ি, জমি ইত্যাদি সম্পত্তি ক্রয়ের যোগ।
৬ষ্ঠ দিন - ষষ্ঠী তিথি - খ্যাতি লাভ।
৭ম দিন - সপ্তমী তিথি - উচ্চ পদ লাভ।
৮ম দিন - অষ্টমী তিথি - তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, জ্ঞান লাভ।
৯ম দিন - নবমী তিথি - আদর্শ জীবনসঙ্গী, পরিবারের জন্য উপযুক্ত পুত্রবধূ লাভ।
১০ম দিন - দশমী তিথি - দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ।
১১তম দিন - একাদশী তিথি - লেখাপড়া, খেলাধুলা, শিল্পকলায় উন্নতি।
১২তম দিন - দ্বাদশী তিথি - পোশাক, অলঙ্কার প্রাপ্তি।
১৩তম দিন - ত্রয়োদশী তিথি - কৃষি উন্নয়ন, দীর্ঘায়ু, স্বাস্থ্যের উন্নতি।
১৪তম দিন - চতুর্দশী তিথি - পাপ মোচন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মঙ্গল।
১৫তম দিন - মহালয়া অমাবস্যা - উপরে উল্লেখিত সমস্ত ফলাফল লাভ।
মহালয়া অমাবস্যা তিথিতে যা করবেন না:
১. মাথায় তেল দিয়ে স্নান করা যাবে না।
২. চুল কাটা যাবে না।
৩. মাংস খাওয়া যাবে না।
৪. দরজায় রঙোলি দেওয়া যাবে না।
৫. পূজা করা যাবে না।
৬. সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে।
৭. কাক খাওয়ার পরেই উপবাস করতে হবে। সকালে খাওয়া যাবে না। দুপুরে উপবাসের নৈবেদ্য তৈরি করতে হবে। দুপুরে কোনও বয়স্ক ব্যক্তিকে বাড়িতে ডেকে খাওয়াতে হবে।
অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ার সময়:
০১ অক্টোবর - রাত ১০.৩৫ মিনিটে
অমাবস্যা তিথি শেষ হওয়ার সময়:
০৩ অক্টোবর - দুপুর ১২.৩৪ মিনিটে
তর্পণ প্রদানের শুভ সময়:
০২ অক্টোবর - সকাল ০৬.০৪ মিনিট থেকে ০৭.২৫ মিনিট পর্যন্ত। এছাড়াও, রাত ০৯.০৫ মিনিট থেকে ১১.৫৫ মিনিট পর্যন্ত।