শুভদিনে দরজায় আম পাতার মালা কেন বাঁধা হয়? জেনে নিন আশ্চর্যজনক কারণ!
- FB
- TW
- Linkdin
বাড়িতে কোনও শুভ অনুষ্ঠান বা উৎসবের সময় দরজায় তোরণ ঝুলিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ আছে। এটি কেবল বাড়ির সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং নানা উপকারও বয়ে আনে বলে বিশ্বাস করা হয়। শুভ অনুষ্ঠানে আম পাতার তোরণ বাঁধলে বাড়ির নেতিবাচক শক্তি দূর হয় বলে অনেকেই মনে করেন।
মন্দিরের উৎসবেও তোরণ অপরিহার্য। এগুলি শুভ লক্ষণ বয়ে আনে। তোরণ তৈরি করতে খুব বেশি খরচ হয় না। প্রকৃতিতে পাওয়া উপকরণই যথেষ্ট। দীপাবলি, পোঙ্গলের মতো উৎসব, বিবাহ ইত্যাদি শুভ অনুষ্ঠানে অবশ্যই তোরণ থাকে। বাড়ির দরজায় তোরণ ঝোলানোর কিছু বিশেষ কারণ আছে কিনা তা এখানে জানা যাবে।
আমাদের সংস্কৃতির অনেক বিষয় ভালো করে লক্ষ্য করলে, তাতে অনেক গুপ্ত উপকারিতা পাওয়া যায়। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির ক্ষমতা এগুলিতে থাকে। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যেসব বিষয় অনুসরণ করে আসছেন, তার অনেকগুলিই বৈজ্ঞানিকভাবে উপকারী।
আগেকার দিনে শুভ অনুষ্ঠানের জন্য নিমন্ত্রণপত্র দেওয়ার রেওয়াজ ছিল না। বাড়িতে কোনও শুভ বা অশুভ ঘটনা ঘটলে, তা বোঝাতে বাড়ির দরজায় তোরণ বাঁধা হত। তোরণ বাঁধার ধরণ দেখেই বোঝা যেত কোন অনুষ্ঠান। যদি তোরণ না বাঁধা হত, তাহলে দরজায় একগুচ্ছ আম পাতা বা নিম পাতা রাখা হত। এরও আলাদা কারণ ছিল। এই বিষয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত জানা যাবে।
নারকেলের কুঁড়ি পাতা:
নারকেলের কুঁড়ি পাতা দিয়ে তৈরি তোরণ দুই প্রকার: শুভ ও অশুভ। এর ভাঁজ, নকশাকে বলা হয় 'কুঁড়ি'। ধর্মীয় উৎসব এবং বিবাহের মতো শুভ অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত তোরণ শুভ তোরণ।
এই ধরণের তোরণে '৪' টি কুঁড়ি থাকে। কুঁড়ির মাথা উপরে এবং লেজ নিচের দিকে থাকে। মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনায় অশুভ তোরণ বাঁধা হয়। এতে তিনটি কুঁড়ি থাকে। এটি শুভ তোরণের বিপরীত। এই তোরণে কুঁড়ির মাথা নিচে এবং লেজ উপরের দিকে থাকে। পূর্বপুরুষদের প্রতীকগুলি কত সূক্ষ্ম ছিল।
আম পাতার তোরণ:
হিন্দু ধর্মে শুভ প্রতীক হিসেবে আম পাতার তোরণ বাঁধার রেওয়াজ আছে। আজও সব উৎসবে মানুষ আম পাতার তোরণ বাঁধে। বিশেষ করে শুভ দিনে বাড়ির দরজায় আম পাতার তোরণ বাঁধা অপরিহার্য ঐতিহ্য। এতে বাড়িতে দুঃখজনক খারাপ শক্তি প্রবেশ করতে পারে না বলে বিশ্বাস।
বাড়ির দরজায় আম পাতার তোরণ কীভাবে বাঁধবেন?
হলুদ মাখানো সুতোয় আম পাতা (একই আকারের) বেঁধে নিতে হবে। আম পাতায় হলুদ লাগিয়ে তার উপর সিঁদুর দিতে হবে। এগুলিকে ছায়ায় শুকিয়ে বাড়ির দরজায় বাঁধুন। আম পাতার তোরণ এমনি এমনি বাঁধা যাবে না। এর জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। তোরণে ১১ টি আম পাতা থাকতে পারে। বেশি হলে ২১ বা ১০১ টি আম পাতা দিয়ে তোরণ বাঁধতে হবে।
ধর্মীয় উৎসবে আম পাতার তোরণের সাথে নিম পাতার গুচ্ছ যোগ করা হয়। আম পাতার অদ্ভুত শক্তি হল, এটি ছিঁড়ে নেওয়ার পরেও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। মানুষ যে অক্সিজেন গ্রহণ করে, আম পাতা সেই অক্সিজেন ত্যাগ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। আম পাতার তোরণ বাড়ির ভিতরে ও বাইরের খারাপ শক্তি দূর করে। ইতিবাচক শক্তি ধরে রাখে।
আম পাতার তোরণের বিশেষত্ব!
আম পাতায় মহালক্ষ্মী এবং নিম পাতায় আদিশক্তি বাস করেন বলে প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বাস করা হয়।
আম পাতার তোরণ আমাদের মনে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা সঞ্চার করে। এছাড়াও আম পাতা বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। নিম পাতা বাতাসের বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে। এ দুটিই পচনশীল পাতা নয়। পচে না, শুকিয়ে যায়। তাই তোরণে এগুলি বেশি ব্যবহৃত হয়।
নিম পাতার তোরণ:
হলুদ মাখানো সুতোয় নিম পাতার গুচ্ছ বেঁধে নিম পাতার তোরণ তৈরি করা হয়। এই তোরণ সাধারণত দেবীর মন্দিরের উৎসবে বেশি ব্যবহৃত হয়। উৎসবের সময় রাস্তায় এই তোরণ বাঁধা হয়। সবুজ পতাকার মতো রাস্তায় এগুলি দুলতে থাকে। এটি উৎসবেরই অংশ। এছাড়া, বাড়িতে কারও বসন্ত হলে, সেখানে নিম পাতার তোরণ বাঁধা হয়। নিম পাতা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। বসন্ত রোগ নিরাময়ে নিম পাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে আজও গ্রামে বিশ্বাস করা হয়।
ফুলের তোরণ:
সাধারণত সাজসজ্জার জন্য মন্দির এবং বাড়িতে ফুলের তোরণ বাঁধা হয়। এই তোরণে গোলাপ, জুঁই, গাঁদার মতো সুন্দর এবং সুগন্ধি ফুল ব্যবহার করা হয়। শিশুদের জন্মদিন, মেয়েদের অনুষ্ঠান ইত্যাদি শুভ অনুষ্ঠানে ফুলের তোরণ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পোঙ্গল উৎসবে কাস্তে ফুল, আবর্জনা ফুল দিয়ে তোরণ বাঁধা বিশেষ রেওয়াজ।