সংক্ষিপ্ত
নীরজ চোপড়ার সোনা জয়ের পর অলিম্পিক্সে আরও এক সোনা জয়ের স্বাদ পাওয়ার আশা দেখছিল ভারত। এমনকী খোদ ভাবিনাও যথেষ্টই উত্তেজিত ছিলেন প্যারা অলিম্পিক্সের টেবিল টেনিসে তাঁর সোনার লড়াই-এ। হার মানলেও ভাবিনার লড়াকু মানসিকতাকে কুর্ণিশ করেছে দেশ এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মহল।
চিনের ইংয় ঝু-এর কাছে সোনার জয়ের লড়াই-এ হেরে গেলেন ভারতের ভাবিনা প্যাটেল। যার ফলে প্যারাঅলিম্পিক্সে টেবিল টেনিসে মহিলা বিভাগে ভাবিনাকে রুপোর পদক জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। রবিবার সকালে ভারতীয় সময় অনুযায়ী ৭টা নাগাদ সোনা জয়ের লড়াই শুরু হয় ভাবিনা ও ঝু-এর মধ্যে। টেবিল টেনিসে ক্লাস ফোরের এই ফাইনালে ০-৩ গেমে হার মানেন ভাবিনা। তবে, গোটা প্রতিযোগিতায় ভাবিনা বারবার যেভাবে তাঁর লড়াকু মানসিকতার পরিচয় রেখেছেন তা মুগ্ধ করেছে অনেককেই।
সোনা জয়ের লড়াই-এ হার হলেও এক অসামান্য ইতিহাস কিন্তু লিখে ফেলেছেন ভাবিনা। কারণ, প্য়ারা-অলিম্পিক্সের আসরে টেবিল টেনিসে এই প্রথম ভারত রুপোর পদক জয় করল। এদিন খেলা শুরু হতেই যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ছিলেন ভাবিনা। এর সত্ত্বেও চিনের ঝু প্রথম সেট ১১-৭-এ জিতে নেন। প্যারা-টেবিল টেনিসের বিশ্ব তালিকায় ঝু এই মুহূর্তে এক নম্বরে। ফলে ঝু-এর সঙ্গে ভাবিনার লড়াইটা যে সহজ নয় তা সকলেই জানতেন। ভাবিনার লড়াকু মানসিকতা ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি এক অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে কি না সে দিকেই নজর ছিল ক্রীড়াপ্রেমীদের। ভাবিনার প্রবল প্রত্যাঘাত এবং ম্যাচে ফেরার কঠোর মানসিকতা বিশ্বের ১ নম্বর ঝু-কেও মাঝে মাঝে বিব্রত করছিল। কিন্তু, ঝু-তাঁর ১ নম্বর থাকার যে চাপটা প্রতিপক্ষের উপর চাপিয়ে রাখতে বজায় ছিলেন, তাতেই ভর করে ভাবিনাকে মাত দিয়ে বেরিয়ে যান। বলতে গেলে আচমকাই বিশ্বের ১ নম্বর প্লেয়ারের সামনে পড়ে যাওয়াটা ব়্যাকিং-এ পিছনে থাকা যে কোনও প্রতিযোগীকে মানসিকভাবে চাপে রাখে, ভাবিনার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি।
দ্বিতীয় সেটও চিনের ঝু- ১১-৫ পয়েন্টে ঝুলিতে পোরেন। কিন্তু, তৃতীয় সেটে ভাবিনা ও ঝু-এর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। শেষে ভাবিনা ১১-৬ পয়েন্টে ঝু-এর কাছে হার মানেন। পরপর তিন সেট জিতে নেওয়ায় ঝু-ম্যাচে ৩-০ গেমে বিজয়ী বলে ঘোষিত হন এবং সেই সঙ্গে সোনার পদকও ঝুলিতে পোরেন।
আরও পড়ুনঃপ্রতিটি দলেই একাধিক পরিবর্তন, দেখে নিন মরুদেশে আইপিএলের ৮ দলের পুরো স্কোয়াড
প্যারাঅলিম্পিক্সের টেবিল টেনিসের ক্লাস ফোর-এর ইভেন্টের সেমিফাইনালে ভাবিনার প্রবল পরাক্রমের সামনে হার মেনেছিলেন বিশ্বের তিন নম্বর প্লেয়ার চিনের মিয়াও ঝাং। খেলার ফল ছিল ৭-১১, ১১-৭, ১১-৪, ৯-১১, ১১-৮। খেলার এই ফল-ই বলে দিচ্ছে যে কীভাবে পিছিয়ে গিয়েও ম্যাচে ফিরেছিলেন ভাবিনা। আর সেই সঙ্গে পরপর দুটো সেট জিতে নিয়েছিলেন। পঞ্চম সেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই-এও ম্যাচ বের করে নিয়েছিলেন তিনি। ভাবিনার এই লড়াই সকলকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল। সেমিফাইনালের এই ম্যাচে এক অনবদ্য রূপকথা যেন লিখেছিলেন ভাবিনা।
আরও পড়ুনঃ'CR7'-কে পাচ্ছে না ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, হতাশ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো সমর্থকরা
এমনকী, সেমিফাইনালে উঠার পথেও বিশ্বের ২ নম্বর প্লেয়ারকে স্ট্রেট সেটে হারিয়েছিলেন ভাবিনা। সার্বিয়ার বরিসালভা পেরিক আবার গত প্যারা-অলিম্পিক্সের সোনা জয়ী ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এমন সব প্লেয়ারদের বিরুদ্ধে ভাবিনার জয় তাঁকে রাতারাতি পাদপ্রদীপে নিয়ে আসে। ভাবিনার লড়াকু মানসিকতা মুগ্ধ করে দেয় সকলকে।
আরও পড়ুনঃআন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরপর ৩ ম্য়াচে আউট করেছেন সচিনকে, বর্তমানে এসি মিস্ত্রি সেই ক্রিকেটার
মাত্র ১২ বয়সে পোলিও-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন ভাবিনা। সেই থেকে এক লড়াই লড়ছেন তিনি। তাঁর মানসিকতা যে কতটা ইস্পাত কঠিন তা সার্বিয়ার বরিসালভা বুঝে গিয়েছিলেন। কারণ বরিসালভাকে হারাতে ভাবিনা যে খেলাটা খেলেছিলেন তার ফল ছিল ১১-৫. ১১-৬ ও ১১-৭। সেমিফাইনাল জয়ের পর এক অসাধারণ মন্তব্যও করেছিলেন ভাবিনা, বলেছিলেন- 'আমি নিজেকে কখনও প্রতিবন্দী বলে বিচার করি না। আমি মনে করি আমি যে কোনও কিছু করতে পারি এবং আজকে আমি প্রমাণ করে দিয়েছি যে আমরা খুব একটা পিছিয়ে নেই। প্যারা-টেবিল টেনিস অন্যান্য খেলার মতোই এগিয়ে রয়েছে।'