সংক্ষিপ্ত
কিছুদিন আগেই ঘটা করে পিয়ালি বসাককে কলকাতার বুকে সেরা মহিলা ক্রীড়াবিদের প্রশংসায় প্রশংসিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই পিয়ালি ৩০ লক্ষ টাকার দেনার বোঝা কাঁধে নিয়ে ফিরে আসছেন কলকাতায়।
কলকাতায় ফিরছেন পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক। ফ্রস্ট বাইটের করাল অভিঘাত এখনও দগদগ করছে শরীরে। এছাড়াও রয়েছে নিউমোনিয়ার প্রকোপ। পুরোপুরি সুস্থ নন পিয়ালি। প্রায় বিনা চিকিৎসাতেই তিনি ফিরে আসছেন নিজের বাড়ি চন্দননগরে। সবকিছু ঠিক থাকলে ১ জুন বিকেলে কলকাতা বিমান বন্দরে পৌঁছবে পিয়ালি-র বিমান।
২৬ মে সন্ধ্যায় কাঠমাণ্ডুর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন পিয়ালি। অর্থের অভাবে চিকিৎসাতে যে ফাঁক থেকে গিয়েছে তা এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারেই জানিয়েছিলেন পিয়ালি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকেও পিয়ালির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। ২৬ জুন দুপুরে কাঠমাণ্ডুর হাসপাতালে শুয়ে থাকা পিয়ালির সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্স করার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এক মন্ত্রীর। কিন্তু, ব্যস্ত আছেন বলে সেই ভিডিও মিটিং বাতিল করে দেন ওই মন্ত্রী। যার ফলে অর্থের হাহাকার যে মিটছে না সহজে তা বুঝে গিয়েছিলেন পিয়ালি। এই মুহূর্তে মাকালু সামিট-সহ হাসপাতালের বিল এবং আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন খরচ ধরে একটি পর্বতারোহণ সংস্থাকে ৩০ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন পিয়ালি। এই বিপুল অর্থ তিনি দেশে না ফেরা পর্যন্ত যে দেওয়া সম্ভব নয় তাও ওই সংস্থাকে জানিয়েছেন তিনি।
যার ফলে প্রায় একপ্রকার জোর করেই চিকিৎসা মাঝপথে থামিয়ে রেখে আপাতত হাসপাতাল থেকে হোটেলে ফিরে গিয়েছেন পিয়ালি। কারণ, রোজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার থেকে হোটেলের রুম অনেকটাই সস্তা। হোটেলে ফিরে আপাতত ফ্রস্ট বাইটে আক্রান্ত পায়ের দুই বুড়ো আঙুলে সমানে গরম জলের সেক দিয়ে যাচ্ছেন পিয়ালি। ফ্রস্ট বাইটে আক্রান্ত দুই পায়ে যে বিশাল ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তা আপাতত খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল থেকে কিছু ব্যান্ডেজও দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তবে, আগের মতো ওতটা মোটা পুরু ব্যান্ডেজ নয়, এগুলো অনেকটাই পাতলা ও হালকা ব্যান্ডেজ। পায়ের আঙুলে যাতে নতুন কোনও সংক্রমণ না লাগে তার জন্য এই ব্যান্ডেজ দেওয়া হয়েছে পিয়ালিকে।
নিউমোনিয়ার জন্য অবিলম্বে যে সিটি স্ক্যান করাতে হত, তাও অর্থের অভাবে আর সম্ভব হয়নি। তবে, নিউমোনিয়ার থেকেও এখন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ফ্রস্টবাইটে আক্রান্ত দুই আঙুল। মোট ৪টি আঙুলে ফ্রস্টবাইট ছিল। ২টো আঙুল ঠিক হলেও, কালো হয়ে গিয়েছে পায়ের দুই বুড়ো আঙুল। ৬ মাসের মধ্যে এই দুই বুড়ো আঙুল ঠিক না হলে তখন তা কেটে ফেলতে হতে পারে। আঙুল বাদ চলে গেলে আর হয়তো কোনওদিনই পর্বতারোহণ করতে পারবেন না পিয়ালি। অচিরেই শেষ হয়ে যাবে এক সাহসী মেয়ের বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ট পর্বতারোহী হওয়ার স্বপ্ন।
এভারেস্ট জয়ের পর পিয়ালির পর্বতারোহণের ঝুলিতে সবচেয়ে বর্ণময় অধ্যায় ছিল এবারের একাধিক সামিট। একসঙ্গে এই সামিটগুলো-তে অংশ নিয়েছিলেন পিয়ালি। দুর্গম অন্নপূর্ণা শৃঙ্গ জয়ের পর মকালু অভিযানে গিয়েছিলেন পিয়ালি। মাকালু পর্বত শৃঙ্গ জয়ের পর নিরাপদেও ফিরে আসছিলেন তিনি। কিন্তু বরফের ফাটলে পড়ে যাওয়া এক পর্বতারোহীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে বিপদে ফেলেন পিয়ালি। ২৪ ঘণ্টা ধরে একা হিমালয়ের প্রবল ঠাণ্ডা ও তুষারে পড়েছিলেন। অন্য পর্বতারোহীকে বাঁচাতে ব্যস্ত পিয়ালি-র শেরপারা তাঁকে একলা ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন। শেষমেশ একটি উদ্ধারকারী দল গিয়ে পিয়ালিকে উদ্ধার করে বেস ক্যাম্পে নিয়ে আসে। ততক্ষণে নিউমোনিয়া এবং ফ্রস্ট বাইটে আক্রান্ত পিয়ালি।
মাকালু শৃঙ্গ জয়ের পর পিয়ালিকে শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন বহু ক্ষমতাবান মানুষ এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা। কিন্তু, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পিয়ালির খোঁজ এদের অধিকাংশ কেউই রাখেননি। এমনকী পিয়ালির হয়ে অনেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এঁদের সাড়া মেলেনি। পিয়ালির চন্দননগরের বাড়িতে রয়েছেন অসুস্থতায় শয্যাশায়ী বাবা। রয়েছেন অশক্ত শরীরের মা এবং বোন। এঁরা সকলেই প্রতীক্ষায় রয়েছেন কতক্ষণে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরবে। যেভাবে একটা সময় কাঞ্চনজঙ্খা সামিটে গিয়ে নিখোঁজ ছন্দা গায়েনের মা করতেন, ঠিক তেমনটাই। তবে, ছন্দার মতো হারিয়ে যাননি পিয়ালি। তিনি আপাতত ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ক্রাউড ফান্ডিং করে বিমানের অগ্রিম টিকিট কাটা হয়েছে পিয়ালির জন্য। বর্তমান সময়ে রাজ্যের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদের এমন বেহাল দশায় শুধুই যে রাজ্য সরকার নীরব তা নয়, সেই সঙ্গে চুপ রাজ্যের একাধিক নামজাদা পর্বতারোহী। সকলের এই নিশ্চুপ থাকাটা সত্যিকারে অনেক প্রশ্নের সম্ভাবনাকে তুলে ধরছে। আপাতত ভালোয় ভালোয় ঘরে ফিরুক পিয়ালি, তারপর হয়তো আরও এক অন্য লড়াই লড়তে হবে এই পর্বতারোহীকে।
আরও পড়ুন---
Piyali Basak Exclusive: ৩০ লক্ষ টাকা দেনা, প্রায় বিনা চিকিৎসায় কাঠমাণ্ডুর হাসপাতালে পিয়ালি
Piyali Basak Exclusive: নেপালের হাসপাতালে একা পড়ে পিয়ালি, অসহায় পরিবার
বিশ্বের পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ মাকালু জয়, নতুন নজির চন্দনগরের পিয়ালি বসাকের