BrahMos Missile Manufacturing Plant: লখনউতে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগের সাথে, উত্তরপ্রদেশ হবে প্রতিরক্ষা উৎপাদনের কেন্দ্র।
BrahMos Missile Manufacturing Plant: এবার দেশের শত্রুদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে লখনউও পিছিয়ে থাকবে না। রাজধানীতে তৈরি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। এই হাই-টেক কেন্দ্রের উদ্বোধন ১১ই মে করবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এটি কেবল দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই শক্তিশালী করবে না, উত্তরপ্রদেশকে প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বীকৃতিও এনে দেবে।
এবার লখনউতেও তৈরি হবে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র
সরোজিনীনগরে তৈরি এই অত্যাধুনিক কেন্দ্রে এখন বিশ্বের দ্রুততম সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মোস তৈরি হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে লখনউ কেবল কৌশলগত দিক থেকেই শক্তিশালী হবে না, হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থানও হবে।
ব্রহ্মোস কী?
ব্রহ্মোস একটি র্যামজেট সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যা স্থল, জল এবং আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এটি রাশিয়ার পি-৮০০ ओंকিস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এর গতি এবং নির্ভুলতা এটিকে শত্রুদের জন্য ভয়ঙ্কর অস্ত্র করে তোলে। এই ব্রহ্মোস মিসাইলটি মাটি, সমুদ্রের পাশাপাশি যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা যাবে। শব্দের থেকেও দ্রুতগতি সম্পন্ন এই মিসাইলের গতি ম্যাক ২.৮। সমর বিশেষজ্ঞদের কথায় শব্দের থেকেও তিন গুণ দ্রুতগতিতে ছুটবে এটি।
প্রায় সাড়ে আট মিটার লম্বা ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র ৩০০ কেজি বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। এর সাহায্যে পরমাণু হামলাও চালানো যেতে পারে। এক একটি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন তিন হাজার কেজি। বর্তমানে একে ‘হাইপারসোনিক ক্যাটেগরি’তে বদলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন ভারত ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। সে ক্ষেত্রে শব্দের আট গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারবে ‘ব্রহ্মস’। এর পাল্লা বেড়ে দাঁড়াবে দেড় হাজার কিলোমিটার।
কী কী তৈরি হবে এই কেন্দ্রে?
এই ইউনিটে কেবল ব্রহ্মোসই নয়, আরও অনেক আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও তৈরি হবে—
- ড্রোন এবং অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম
- ইলেকট্রনিক সেন্সর এবং UAV
- ইলেক্ট্রো-অপটিক সিস্টেম
- ক্ষুদ্রাস্ত্র
- অগ্নি সুরক্ষা সরঞ্জাম
- প্রতিরক্ষা পোশাক
১০,০০০ এর বেশি যুবকের কর্মসংস্থান হবে
রাজ্য সরকার এই প্রকল্পটি ২০২১ সালে অনুমোদন করেছিল এবং ৮০ হেক্টর জমি বিনামূল্যে দিয়েছিল। সাড়ে তিন বছরে এই কেন্দ্র উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। আগামী ৫-৬ বছরে এই প্রকল্প থেকে প্রায় ₹১০,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ১০,০০০ এর বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রহ্মোস কেন্দ্রের আশেপাশে অনেক অ্যানসিলারি ইউনিট এবং পরীক্ষার সুবিধা তৈরি করা হবে। এর ফলে স্থানীয় শিল্পকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রতিরক্ষা পণ্য রপ্তানিকেও নতুন উড়ান দেবে।
ব্রহ্মোস মিসাইলের বৈশিষ্ট্য হল এটি যুদ্ধজাহাজ থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়। এটি ২০০ কেজি ওয়ারহেড বহন করতে পারে। ক্ষেপণাস্ত্রটি ম্য়াক ৩.৫ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতি অর্জন করতে পারে। অর্থাৎ ঘণ্টায় ৪৩২১ কিলোমিটার গতিবেগ এটির। এটিতে একটি সেকেন্ড স্টেজ প্রপালশন সিস্টেম রয়েছে। প্রথম কঠিন ও দ্বিতীয় তরল। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামজেট ব্যবহার করে এই মিসাইল। এই বিশেষ ইঞ্জিন এইটিকে সুপারসনিক গতি দেয়। পাশাপাশি জ্বালানি খরচও তুলনামূলকভাবে কমিয়ে দেয়।
২০০৫ সালের নভেম্বর থেকে এই ব্রহ্মাস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে ভারতীয় সেনার তিন বাহিনী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে এর চাহিদা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার নেপথ্যে চিনের আগ্রাসী মনোভাব এবং সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাভাবনাকেই দায়ী করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। আত্মরক্ষার জন্য ভারতের ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র কার্যকর হবে বলে মনে করছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সেনাকর্তারা। এই অস্ত্র হাতে পেলে চোখের নিমেষে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে অনায়াসেই হামলা চালাতে পারবেন তাঁরা। ডোবানো যাবে চিনা রণতরী। পাশাপাশি ব্রহ্মসের নিশানায় চলে আসবে ড্রাগনের কৃত্রিম দ্বীপের সেনাছাউনিও।
বর্তমানে ভারতীয় সেনা এবং নৌবাহিনী যে ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, তার পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার। অন্য দিকে এ দেশের বিমানবাহিনীর হাতে থাকা এই হাতিয়ার ৪৫০-৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। যদিও রফতারির ক্ষেত্রে ২৯০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার শ্রেণির ‘ব্রহ্মস’ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।


