সংক্ষিপ্ত

প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভ ২০২৫-এ ৬৬ কোটিরও বেশি তীর্থযাত্রী অংশগ্রহণ করেছেন। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় সত্ত্বেও, অসাধারণ ব্যবস্থাপনা এটিকে একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে।

প্রয়াগরাজে আয়োজিত মহাকুম্ভ ২০২৫ কেবল সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিক মহিমাকেই প্রদর্শন করেনি, ভিড় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এক নতুন কীর্তিমান স্থাপন করেছে। এই মেলায় গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি তীর্থযাত্রী সঙ্গমে স্নান করেছেন এবং কোনও বাধা ছাড়াই নিজেদের গন্তব্যে ফিরে গেছেন। এত বিশাল সংখ্যক মানুষের ব্যবস্থাপনা করা নিজেই এক চ্যালেঞ্জ ছিল, যা শাসন ও প্রশাসন তাদের সূক্ষ্মবুদ্ধি দিয়ে একটি মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছে। উল্লেখযোগ্য যে, ৪৫ দিনব্যাপী এই মহাআয়োজনে ৬৬ কোটিরও বেশি তীর্থযাত্রী অংশগ্রহণ করেছেন। এই সংখ্যা ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। শুধু তাই নয়, এই ৪৫ দিনে মহাকুম্ভ নগর ভারত ও চিনের পর তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল অঞ্চল হয়ে ওঠে।

ব্যাপক কর্মযোজনায় কাজ করা হয়েছে: 

মহাকুম্ভে ভিড় ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাপক কর্মयোজনা তৈরি করা হয়েছিল। আসা-যাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা রাস্তা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যার ফলে ভিড়ের প্রবাহ সুচারু ছিল। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ২৪×৭ নজরদারি নিশ্চিত করা হয়েছিল, যাতে যে কোনও পরিস্থিতিতে কোনও এক জায়গায় বেশি ভিড় জমলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন দিক থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা পার্কিং স্থান তৈরি করা হয়েছিল, যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয়। এই ব্যবস্থাপনা কেবল ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।

সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক আয়োজনের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি: 

আন্তর্জাতিক স্তরে ভিড় ব্যবস্থাপনার আরও কিছু উদাহরণ উল্লেখযোগ্য। সৌদি আরবে হজের সময় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মুসলিম মক্কায় যান। সেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং রাস্তা পরিকল্পনার মাধ্যমে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। একইভাবে, ব্রাজিলের কার্নিভালেও লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করেন, যেখানে পুলিশ এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়। তবে, মহাকুম্ভের বিশালতা এবং এর জটিলতা এটিকে অনন্য করে তোলে। হজ এবং কার্নিভালে যেখানে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ লক্ষ মানুষের ব্যবস্থাপনা করা হয়, সেখানে মহাকুম্ভে প্রতিদিন ১ থেকে দেড় কোটি তীর্থযাত্রীর উপস্থিতি ছিল। মৌনী অমাবস্যায় এটি সর্বাধিক ৮ কোটিতে পৌঁছেছিল। ৪৫ দিনে দুইবার এটি ৫ কোটি বা তার বেশি, তিনবার ৩.৫ কোটি বা তার বেশি, ৫ বার ২ কোটির বেশি এবং মোট ৩০ বার ১ কোটি বা তার বেশি ছিল। এর তুলনা বিশ্বের কোনও আয়োজনের সঙ্গেই করা যায় না।

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: 

মহাকুম্ভে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক ক্যামেরা, ড্রোন এবং হোল্ডিং এরিয়ার মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও করা হয়েছে। এই আয়োজন কেবল আস্থার প্রতীকই হয়নি, ভিড় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড তৈরি করেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং প্রশাসনের এই সাফল্য ভবিষ্যতের বড় আয়োজনগুলির জন্য অনুপ্রেরণা হবে।