উত্তরপ্রদেশ জল সংরক্ষণে একটি জাতীয় মডেলে পরিণত হয়েছে। ৫২,০০০-এর বেশি জলাশয় পুনরুদ্ধার, নদী পুনরুজ্জীবন, ভূগর্ভস্থ জলস্তর বৃদ্ধি এবং 'হর ঘর জল' যোজনার মাধ্যমে বুন্দেলখণ্ড-বিন্ধ্য অঞ্চলে জল পৌঁছেছে। জাতীয় জল পুরস্কারে ইউপি একাধিক সম্মান পেয়েছে।
লখনউ। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশনায় উত্তরপ্রদেশ জল সংরক্ষণ ক্ষেত্রে দেশের জন্য একটি আদর্শ মডেল হয়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশে জল সংরক্ষণ ও সঞ্চয়ের জন্য 'অমৃত মিশন'-এর অধীনে বড় আকারের কাজ হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ৭৫টি জেলায় জলাশয় পুনরুদ্ধার এবং বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের পরিকল্পনা দ্রুত গতিতে বাস্তবায়িত হয়েছে। ৫২,০০০-এর বেশি জলাশয়, পুকুর এবং ট্যাঙ্ক সিস্টেমের সংরক্ষণের মাধ্যমে গ্রামীণ জলস্তরে বড় উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। বুন্দেলখণ্ড এবং বিন্ধ্য অঞ্চলের ঘরে ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইউপি বড় সাফল্য অর্জন করেছে। এর পাশাপাশি, 'জল সংবর্ধন জন আন্দোলন' চালিয়ে সমাজে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।
৭৫টি জেলায় জলাশয়ের পুনরুদ্ধার ও সৌন্দর্যায়ন সম্পন্ন
অমৃত মিশনের অধীনে রাজ্যের ৭৫টি জেলায় জলাশয়ের পুনরুদ্ধার এবং সৌন্দর্যায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অমৃত মিশন ২.০-তে শহরাঞ্চলের জন্য জল সুরক্ষার লক্ষ্যে বড় আকারের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যে ৫২,০০০-এর বেশি পুকুর এবং জলাশয় পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, যার ফলে গ্রামীণ জলস্তরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২২,০০০-এর বেশি জল কাঠামোতে জলের জোগান বেড়েছে। খাল ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য ৯৫টি নতুন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এগুলি সম্পূর্ণ হলে ৩৬ হাজার হেক্টর জমির সেচ ক্ষমতা পুনরুদ্ধার হবে এবং প্রায় ৯ লক্ষ কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন।
এর সাথে ২৭৩ হেক্টর সরকারি জমিও সুরক্ষিত করা হয়েছে। জলস্তর পর্যবেক্ষণের জন্য সেন্সর-ভিত্তিক জলমাপক যন্ত্র লাগানো হয়েছে। ভূগর্ভস্থ জল রিচার্জের জন্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এবং চেক ড্যামের মতো ৪২ হাজারেরও বেশি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ জল রিচার্জে ২০% এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিদ্যালয় এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে চালানো সচেতনতামূলক কর্মসূচির অধীনে ১.২০ লক্ষেরও বেশি বিদ্যালয় এবং ৫০ হাজারেরও বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র জল সংরক্ষণ অভিযানের সাথে যুক্ত হয়েছে, যার ফলে সম্প্রদায়ের মধ্যে জল বাঁচানোর অভ্যাস গড়ে উঠেছে।
মির্জাপুর: লোহন্দি নদী এবং বড় জলাশয়ের পুনরুদ্ধার
মির্জাপুর জল সংরক্ষণ এবং নদী পুনরুজ্জীবনের একটি সফল উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এখানে ১২টি উন্নয়ন ব্লক এবং ৮০৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে, যেখানে আগে জলস্তর কমে যাওয়া এবং খরার সমস্যা ছিল। গ্রীষ্মকালে হ্যান্ডপাম্প এবং কুয়ো শুকিয়ে যেত। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানের অধীনে লোহন্দি নদীর পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এই ১৫ কিমি দীর্ঘ নদীটি ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে। এর ১০.৬৩ কিমি অংশে মনরেগা (MGNREGA)-র অধীনে কাজ হয়েছে এবং বাকি অংশে জনসাধারণের অংশগ্রহণে কাজ করানো হয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে বড় রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। এক বছরে ৩৮৯৪ হেক্টর জমিতে স্প্রিংকলার সেচ যুক্ত করে জলের সাশ্রয় করা হয়েছে। আগে শুকিয়ে যাওয়া হ্যান্ডপাম্পগুলি এখন চালু হয়েছে। ছয়টি উন্নয়ন ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলস্তর গড়ে ১ মিটার পর্যন্ত বেড়েছে। নদীর ধারের গ্রামগুলিতে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ২.২৭ মিটার পর্যন্ত বেড়েছে, যার ফলে শুকনো কুয়ো এবং বোরওয়েল আবার ভরে গেছে। এছাড়া ১৫৬টি কৃষি পুকুর এবং ৪টি চেক ড্যাম তৈরি হওয়ায় কৃষকরা সেচের সুবিধা পেয়েছেন এবং উৎপাদন বেড়েছে। ৪.২৩ লক্ষ মানব-দিবস কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে ৫২% মহিলা ছিলেন।
জালাউন: নুন নদীর পুনরুজ্জীবন এবং বৃষ্টির জল সঞ্চয়
জালাউন জেলাতেও জল সংরক্ষণের চিত্র বদলে গেছে। কোচ তহসিলের সাতোহ গ্রাম থেকে উৎপন্ন ৮৩ কিমি দীর্ঘ নুন নদী দীর্ঘদিন ধরে শুকনো ও দূষিত ছিল। স্থানীয় মানুষ এবং প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদীটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের জন্য চেক ড্যাম তৈরি করা হয়েছে এবং নদীর দুই তীরে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। আজ নুন নদীর জল সেচের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এলাকায় জল সংকট কমেছে।
বুন্দেলখণ্ড ও বিন্ধ্য অঞ্চলে 'হর ঘর জল': বড় সাফল্য
'হর ঘর জল' যোজনা উত্তরপ্রদেশের সবচেয়ে কার্যকর প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি। বুন্দেলখণ্ড এবং বিন্ধ্য অঞ্চল, যা একসময় জলের জন্য লড়াই করত, আজ সেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছাচ্ছে।
বুন্দেলখণ্ডে নলের জলের জোগান
- মহোবা: ১,৩৯,৯০৪টি বাড়ি (৯৯.৮৩%)
- ঝাঁসি: ২,৪৯,১১১টি বাড়ি (৯৯.১৬%)
- ললিতপুর: ২,০৫,৯৬৬টি বাড়ি (৯৯.৫১%)
- চিত্রকূট: ১,৬৩,৬৯৮টি বাড়ি (৯৯.৮৩%)
- জালাউন: ২,০৮,১৭০টি বাড়ি (৯৮.১৬%)
- বান্দা: ২,৬৮,৫৮৩টি বাড়ি (৯৯.৮৬%)
- হামিরপুর: ১,৮৫,৬৭৪টি বাড়ি (৯৯.৫৪%)
বিন্ধ্য অঞ্চল
- মির্জাপুর: ৩,৪৯,৩৩২টি বাড়ি (৯৮.৩৫%)
- সোনভদ্র: ২,৯২,৯০৫টি বাড়ি (৯৩.৩৪%)
জাতীয় পুরস্কারে ইউপির অসাধারণ প্রদর্শন
যোগী সরকারের পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ফল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় জল পুরস্কারে দেখা গেছে। জল সংরক্ষণ বিভাগে উত্তর অঞ্চল থেকে মির্জাপুর, বারাণসী এবং জালাউন যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান পেয়েছে। গোরখপুর পৌরসভাও জল সঞ্চয় জনঅংশগ্রহণ বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে। জল সংরক্ষণের স্থানীয় উদ্যোগগুলি জাতীয় মঞ্চে সম্মান পেয়েছে।


