সংক্ষিপ্ত
মার্কিন প্রত্যাশার অনেক আগে কাবুলের পতন ঘটাতে চলেছে তালিবানরা। গোয়েন্দা রিপোর্ট পেয়েও সিদ্ধান্ত বদলাতে নারাজ জো বাইডেন।
গত জুন মাসে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, মার্কিন সেনা আফগান মাটি ছাড়ার ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে পতন হতে পারে রাজধানি কাবুল-এর। কিন্তু, গত একমাসে অবস্থা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। বর্তমানে তালিবানরা, আফগান সরকারী বাহিনীর দখল থেকে যেভাবে একের পর এক জায়গা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে শুরু করেছে, যে সেই হিসাব পাল্টে গিয়েছে। গত ৫ দিনে অন্তত ৮টি আফগান প্রাদেশিক রাজধানী তালিবানদের দখলে এসেছে। এই অবস্থায় আগের মূল্যায়নের অনেকটা আগেই তালিবানরা কাবুলে পা রাখবে বলে মেন করছে বাইডেন প্রশাসন। সেইমতো প্রস্তুতি নিলেও, সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে একপাও সরে আসতে নারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
প্রাক্তন মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা বটেই, বাইডেন প্রশাসনেরও অনেকে মনে করছেন যে গতিতে এগিয়ে চলেছে তালিবানরা, তাতে কাবুলের পতন হতে ৬ মাসও লাগবে না। পরিচয় গোপন রেখে এক শীর্ষস্থানীয় মার্কিন প্রশাসনিক কর্তা জানিয়েছেন, মার্কিন সেনাবাহিনীর বর্তমান মূল্যায়ন বলছে, ৯০ দিনের মধ্যে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ হারাবে আফগান সরকার। কেউ কেউ অবশ্য আরও একদাপ এগিয়ে বলছেন, কাবুল টিকবে আর এক মাস। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগও জানিয়েছে, জুনের থেকে পরিস্থিতি এখন অনেক বেশি ভয়াবহ। রাখঢাক রাখলেও বাইডেন প্রশাসনের কর্তারা বলতে ছাড়ছেন না, 'সবকিছুই ভুল পথে চলছে'।
"
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবস্য মঙ্গলবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও তর্ক বিতর্ক তিনি শুনবেন না। আফগানদের সামরিকভাবে দুর্বল, তা মেনে নিয়েও জানিয়েছেন ২০ বছরের এই অভিযান শেষ করার জন্য তিনি আদৌ 'দুঃখিত' নন এবং তালিবানের বর্তমান দাপট প্রদর্শনেও তা বদলাবে না। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছর ধরে এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করে, অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আফগান বাহিনীকে তৈরি করেচে। এবার আফগান নেতাদের তাদের বিষয়টা বুঝে নিতে হবে।
মঙ্গলবার পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র জন কিরবিও বলেছেন, আফগানিস্তানে যখন এবং যেখানে সম্ভব আফগান বাহিনীর সঙ্গে এবং তাদের সমর্থন নিয়ে আমেরিকা বিমান হামলা চালাবে, কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেমন জানিয়েছেন, এবার থেকে বাকি দায়িত্ব নিতে হবে আফগানদের। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, তালিবানরা কাবুল বা আফগানিস্তান দেশ দখল করে নেবে এটা অনিবার্য হিসাবে ধরছে না বাইডেন প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্ভাব্য পরিণতিগুলির জেনেই মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিদেশ দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস আবার আফগান সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা যে তালেবান যোদ্ধাদের থেকে অনেক বেশি, সেই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
মজার বিষয় হল, অতীতে মার্কিন গোয়েন্দাদের মূল্যায়নই জানিয়েছে, খাতায় কলমে আফগান সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা যা, কার্যক্ষেত্রে তার থেকে বাহিনীর শক্তি অনেকটাই কম। বহু সংখ্যক 'ভূত সৈনিক' রয়েছে। মানে তারা কাগজে কলমে সেনা সদস্য হলেও, কাজের সময় তাদের দেখা মেলে না। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে তো তালিবানদের হুমকির মুখে পড়ে বহু সেনা সদস্য তাদের পোস্ট ছেড়ে পালিয়েছে। আরও ভয়ের বিষয় হল, আফগান সামরিক বাহিনীকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু আধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছে। সাম্প্রতিককালে সেগুলি আফগান বাহিনীর হাত থেকে যেতে শুরু করেছে তালিবানদের হাতে।
আরও পড়ুন - 'সোনার খনি' গ্রহাণু, পৃথিবীর সবাইকে করতে পারে কোটিপতি - এবার অভিযানে নামছে NASA
আরও পড়ুন - অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি লোকসভার কাজ, ঝোড়ো আবহাওয়াতেই শেষ হল বাদল অধিবেশন
আরও পড়ুন - OBC Reservation Bill - সংসদে পাস হল ঐতিহাসিক বিল, সমর্থন জানাল আরএসএস
এই অবস্থায় প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তা ব্রুস রিডেল বলেছেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি 'অত্যন্ত আশঙ্কাজনক, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত খারাপ হচ্ছে। বিপদ হল, তালিবানদের আক্রমণের গতি দেকে আফগান সরকারকে ভয় পেয়ে যাবে এবং তার ফলেই কাবুলের প্রতিরক্ষা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।' প্রসঙ্গত এই ব্রুস রিডেল, প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নীতির পর্যালোচনাকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন।