সংক্ষিপ্ত
ক্রিসমাসের (Christmas 2021) দিন মহাকাশে পাড়ি দিল নাসার (NASA) জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (The James Webb Space Telescope)। মহাকাশের জন্মলগ্নের ছবি তুলবে এই টেলিস্কোপ।
সৌরজগতের (Solar System) অনেকটা জানা হলেও, তার বাইরের মহাবিশ্ব (Space) সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানে না মানুষ। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের (hubble Space Telescope) মাধ্যমে সৌরজগতের বাইরেও পৃথিবী-সম গ্রহের (Earth Like Planet) সন্ধান মিলেছে ঠিকই, কিন্তু সেগুলির সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। আর এই অজানার সন্ধানেই, শনিবার, এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপটিকে মহাকাশে পাঠালো নাসা (NASA)। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বেশ কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে, শেষ পর্যন্ত ক্রিসমাসের (Christmas 2021) দিন, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা বেজে ২০ মিনিটে (ভারতীয় সময় শনিবার বিকাল ৫ টা বেজে ৫০ মিনিটে), ফ্রেঞ্চ গায়ানার (French Guiana) কৌরো স্পেস সেন্টার (Kourogu Space Centre) থেকে, 'আরিয়ান ৫' (Ariane 5) রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পাড়ি দিল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (The James Webb Space Telescope)।
জেমস ওয়েব (James Webb) নাসার প্রাক্তন ডিরেক্টর। তাঁর নামেই নতুন মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির নাম রাখা হয়েছে। প্রায় তিন দশক ধরে, কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি করা হয়েছে এই টেলিস্কোপটি। এর আগে ১৯৯০ সালে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, যা মহাকাশ চর্চার এক নতুন দিক খুলে দিয়েছে। ওয়েব টেলিস্কোপ, কিংবদন্তি হাবলের পদাঙ্ক অনুসরণ করলেও, এটি কক্ষপথ হাবলের থেকে অনেকটাই বড়। হাবল যেখানে পৃথিবীর ৬০০ কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে, সেখানে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের কক্ষপথ পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। আর এর প্রধান উদ্দেশ্য, জন্মের সময়, অর্থাৎ প্রায় ১৪ বিলিয়ন বা ১৪০০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব কেমন দেখতে ছিল, সেই ছবি মানুষের সামনে তুলে ধরা।
আরও পড়ুন - Life on Venus: শুক্র গ্রহে কি প্রাণ আছে, বিজ্ঞানীদের দাবি লুকিয়ে আছে মেঘের মধ্যে
আরও পড়ুন - Spacecraft Touches Sun First Time: সূর্যকে ছুঁল মানুষ, প্রথমবার 'করোনা'য় প্রবেশ
আরও পড়ুন - Mystery Hut on Moon: চাঁদের বুকে রহস্যময় কুঁড়েঘর, এবার কি চড়কা-কাটা বুড়িকেও দেখা যাবে
সোশ্যাল মিডিয়ায় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ প্রকল্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জন ম্যাথার (John Mather), টেলিস্কোপটির অভূতপূর্ব সংবেদনশীলতা সম্পর্কে জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, চাঁদের দূরত্বে থাকা একটি মৌমাছির তাপিয় স্বাক্ষর বা হিট সিগনেচারও দেখতে পারে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। আর এর জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে টেলিস্কোপটিকে। এর আয়নাটির ব্যাস ৬.৫ মিটার বা ২১ ফুট, অর্থাৎ হাবল স্পেস টেলিস্কোপের আয়নার তিনগুণ বড়। আয়নাটি ১৮ টি ষড়ভুজাকার অংশ দিয়ে তৈরি। এটি আকারে এতটাই বড় যে, রকেটে এটিকে ভাঁজ করে ঢোকাতে হয়েছে। যাতে সেই আয়নার উপর কোনও কণা মাত্র, এমনকী মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসও না লাগে, তার জন্য এই ঢোকানোর প্রক্রিয়াটি লেজার-নির্দেশিতভাবে করেছে নাসা। তারা জানিয়েছে, কয়েকশো কোটি বছর আগে যখন ছায়াপথ প্রথম তৈরি হয়েছে বা প্রথম নক্ষত্র গঠিত হয়েছে, সেই সময় তাদের থেকে যে দুর্বল আভা নির্গত হয়েছে, তা সনাক্ত করার জন্য এই রকম শক্তিশালী টেলিস্কোপই প্রয়োজন।
জানা গিয়েছে, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১২০ কিলোমিটার উপরে যাওয়ার পরই, ওজন কমানোর জন্য, রকেটটি থেকে তার 'প্রতিরক্ষামূলক নাক' বা 'ফেয়ারিং' অংশটিকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। টেলিস্কোপ-সহ রকেটটি তাঁর গন্তব্যে পৌঁছালে, ওই আয়না সম্পূর্ণরূপে বের করা হবে এবং একটি টেনিস-কোর্টের আকারের ঢাল স্থাপন করা হবে সূর্যের আলো থেকে আয়নাটিকে রক্ষা করার জন্য। এই অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। নাসার বিজ্ঞানীদের আশা, সব প্রক্রিয়া শেষ করে ওয়েব টেলিস্কোপ পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারবে ২০২২ সালের জুন মাসেই।