সংক্ষিপ্ত
ধাক্কা মেরে একটি গ্রহাণুকে ছিটকে দিতে স্পেস এক্স (SpaceX) সংস্থার ফ্যালকন রকেটের সাহায্যে উড়ে গেল নাসার ডাবল অ্যাস্ট্রয়েড রিডিরেকশন টেস্ট (Double Asteroid Redirection Test) বা ডার্ট (DART) মহাকাশযান। আমরা কি তাহলে বিপদে পড়েছি?
মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সবথেকে বড় হুমকি রয়েছে গ্রহাণুর (Asteroids) থেকে। বিরাট আকারের এরকমই এক মহাজাগতিক বস্তুর পৃথিবীতে আঘাত করায়, সভ্যতার বুক থেকে হারিয়ে গিয়েছে ডাইনোসরদের (Dinosaurs) মতো শক্তিশালী প্রাণীরা, মানুষ তো কোন ছাড়। এই হুমকি কিন্তু, সবসময়ই রয়েছে। আর এরই মোকাবিলা করতে, নাসার (NASA) বিজ্ঞানীরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি মহাকাশযানকে পাঠাচ্ছেন একটি 'ডিমরফোস' (Dimorphos) নামে একটি গ্রহাণুকে সজোরে ধাক্কা মারার জন্য। বুধবার, ভারতীয় সময় দুপুর ১১টা ৫১ মিনিটে স্পেস এক্স (SpaceX) সংস্থার ফ্যালকন রকেটের সাহায্যে যাত্রা শুরু করল নাসার সেই ডাবল অ্যাস্ট্রয়েড রিডিরেকশন টেস্ট (Double Asteroid Redirection Test) বা ডার্ট (DART) মহাকাশযান।
তাহলে কি মানব সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি? স্পষ্ট জানিয়ে রাখা ভাল, যে ডিমরফোস গ্রহাণুটিতে ধাক্কা মারতে যাচ্ছে ডার্ট মহাকাশযান, সেটি আমাদের গ্রহের দিকে এগিয়ে আসছে না। সেই গ্রহাণুটি থেকে মানব সভ্যতার কোনও হুমকি নেই। কিন্তু, এই গ্রহাণুটি আসছে না বলে, কোনও গ্রহাণুই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে না, তা নয়। নাসা এই অভিযান চালাচ্ছে, যদি কোনওদিন, সভ্যতাকে ধ্বংস করতে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে কোনও দৈত্যাকার মহাজাগতিক শিলাখণ্ড, তাহলে মহাকাশযান দিয়ে ধাক্কা মেরে তাকে কি কোনওভাবে অন্যপথে চালিত করা যাবে - এই প্রশ্নে উত্তর খুঁজতে। এই পদ্ধতিকে বলে 'কাইনেটিক ইমপ্যাক্টর' (Kinetic Impactor) পদ্ধতিটি। এরই হাতে কলমে পরীক্ষার লক্ষ্যে এদিন, ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে রওনা দিল ডার্ট মহাকাশযান।
আরও পড়ুন - ISRO: মুখোমুখি ভারতের চন্দ্রযান-২ এবং আমেরিকার এলআরও, কীভাবে সংঘর্ষ এড়ালো দুই মহাকাশযান
আরও পড়ুন - 'সোনার খনি' গ্রহাণু, পৃথিবীর সবাইকে করতে পারে কোটিপতি - এবার অভিযানে নামছে NASA
জানা গিয়েছে, ডার্ট মহাকাশযান ঘন্টায় প্রায় ২৪,০০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়বে ডিমরফোসের বুকে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন এতে করে ডিমরফোসের কক্ষপথের কিছুটা পরিবর্তন ঘটবে। ৫২৫ ফুট ব্যাসের ডিমরফোস গ্রহাণুটি, আবার ডিডাইমোস (Didymos) নামে ২,৫০০ ফুট ব্যাসের আরেকটি বিরাট গ্রহাণুকে প্রদক্ষিণ করে। এই জোড়া গ্রহাণু আবার একসঙ্গে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ডিমরফোসের সঙ্গে ডার্টের সংঘর্ষটি ঘটবে ২০২২ সালের শরত্কালে। সেই সময় এই যমজ গ্রহাণুদ্বয় পৃথিবীর সবথেকে কাছাকাছি থাকবে, দূরত্ব দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ কিলোমিটার। এই পরীক্ষা করতে মোট খরচ পড়ছে ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। তবে নাসার শীর্ষ বিজ্ঞানী টমাস জুবারচেন (Thomas Zuburchen) বলেছেন, আমাদের গ্রহের সম্ভাব্য হুমকিকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে এই অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্যালকন রকেট থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, ডার্ট মহাকাশযান, দেখুন -
ডিমরফোসের বা ডিডাইমোস - কোনও গ্রহাণুই পৃথিবীর জন্য কোনও হুমকি তৈরি না করলেও, এগুলি নিয়ার-আর্থ অবজেক্টস (Near-Earth Objects) বা এনইও (NEO)। যেসব গ্রহাণু, ধূমকেতু বা মহাজাগতিক অন্যান্য বস্তু - আমাদের গ্রহের ৩ কোটি মাইলের মধ্যে চলে আসে, সেগুলিকেই পৃথিবীর কাছে থাকা বস্তু বা নিয়ার-আর্থ অবজেক্টস বলে। এগুলির প্রত্যেকটিই আচমকা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। নাসার প্ল্যানেটারি ডিফেন্স কোঅর্ডিনেশন (Planetary Defense Coordination Office) অফিস বিশেষ করে এই এনইওগুলির মধ্যে যেগুলির ব্যাস ৪৬০ ফুটের বেশি, সেগুলিকে নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। কারণ, এই ধরণের বস্তুগুলি পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে, একটি পারমাণবিক বোমা (Atom Bomb) বিস্ফোরণের চেয়েও বেশি শক্তি নির্গত হবে। তাদের একটা গোটা শহর, এমনকী গোটা দেশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
সূর্যের কিরণ পেতেই, সোলার প্যানেলের ডানা খুলল ডার্ট -
বর্তমানে, ৪৬০ ফুটের চেয়ে বেশি ব্যাসের ১০,০০০ গ্রহাণু পৃথিবীর কাছাকাছি রয়েছে। তবে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে কোনোটিই পৃথিবীতে আঘাত করে বলে মনে করেন না বিজ্ঞানীরা। তবে, এরকম আরও অন্তত ১৫,০০০ মহাজাগতিক বস্তু রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা, যেগুলি এখনও আবিষ্কার হয়নি। মহাকাশযানের ধাক্কায় মহাজাগতিক বস্তুর কক্ষপথ বদলে দেওয়ার পরীক্ষা এর আগে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে ক্ষুদ্রাকারে করে সফল হয়েছেন। তবে, সত্যিকারের গ্রহাণুর সঙ্গে মহাকাশযানের সংঘর্ষের কী প্রভাব হতে পারে, তা এই অভিযানেই প্রথমবার জানা যাবে।