সংক্ষিপ্ত
চাঁদের উত্তর মেরুর কাছে নাসার (NASA) মহাকাশযান এলআরও (LRO)-র সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে চলেছিল ইসরোর (ISRO) চন্দ্রযান-২ অরবাইটারের (Chandrayaan-2 Orbiter)। কীভাবে রক্ষা পেল মহাকাশযান দুটি?
মহাকাশে ভারত এবং আমেরিকার মহাকাশযানের মধ্যে প্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটতে চলেছিল। চাঁদের উত্তর মেরুর কাছাকাছি এলাকায় খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরোর (ISRO) চন্দ্রযান-২ অরবাইটার (Chandrayaan-2 Orbiter) এবং নাসার (NASA) লুনার রিকনেসেন্স অরবিটার বা এলআরও (LRO)। শেষে সংঘর্ষ এড়াতে ইসরোকে কলিসন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভার বা সিএএম (CAM) সম্পাদন করতে হয়। আর তাতেই শেষ পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা খরচে গবেষণার উদ্দেশ্যে পাঠানো মহাকাশযান দুটি রক্ষা পায়।
আরও পড়ুন - বছরের শেষেই ISRO-র আদিত্য এল- ১ অভিযান - চাঁদের পর লক্ষ্য এবার সূর্য, হবে কি ইতিহাস
আরও পড়ুন - ২০২২ সালেই চাঁদে পাড়ি দেবে ভারত, চন্দ্রায়ন-৩ তৈরি হচ্ছে জোরকদমে, জানিয়ে দিল কেন্দ্র
আরও পড়ুন - মহাকাশে মানুষ পাঠানোর পথে ISRO'র আরও এক সাফল্য, বড় বদল ঘটছে GSLV রকেটে
অবশ্য ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় ১ মাস আগে, গত ২০ অক্টোবর। তবে, মঙ্গলবারই (১৬ নভেম্বর) এই খবর জানিয়েছে ইসরো। সংস্থার পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, চন্দ্রের উত্তর মেরুর (Lunar North Pole) কাছে এক অঞ্চলে এই সংঘর্ষ ঘটতে চলেছিল। তবে তার এক সপ্তাহ আগেই, ইসরো এবং নাসা - দুই মহাকাশ গবেষণা সংস্থাই নিজ নিজ বিশ্লেষণে বিষয়টি ধরতে পেরেছিল। দেখা যায়, ২০ অক্টোবর দুই দেশের দুই মহাকাশযানের মধ্যে রেডিয়াল ব্যবধান (Radial Separation) ১০০ মিটারেরও কম হতে চলেছে এবং তাদের মধ্যে নিকটতম দূরত্বটি হতে চলেছে প্রায় ৩ কিলোমিটার। এরপরই ইসরো ও নাসা সংঘর্ষের ঝুঁকি এড়াতে সিএএম সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ইসরো জানিয়েছে, দুই সংস্থাই ঠিক করে, সম্ভাব্য সংঘর্ষের দুদিন আগে, অর্থাৎ ১৮ অক্টোবর কলিসন অ্য়াভয়ডেন্স ম্যানুভার বা সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করবে ইসরো। পরবর্তী নিকটতম সংযোগের সময় যাতে দুই মহাকাশযানের মধ্যে পর্যাপ্ত রেডিয়াল ব্যবধান থাকে, সেটা নিশ্চিত করার মতো করেই এই কৌশলটি নকশা করা হয়েছিল। ১৮ অক্টোবর রাত ৮টা ২২ মিনিটে সিএএম কার্যকর করা হয়। সংঘর্ষ ওড়ানোর কৌশল প্রয়োগের পর চন্দ্রযান-২ অরবাইটারের পরবর্তী কক্ষপথ ফের নির্ধারণ করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্য অনুযায়ী, যে এখন চন্দ্রযান ২-এর অরবাইটর ঘুরছে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে এলআরও-এর কাছাকাছি এসে পড়ার আর সম্ভাবনা নেই।
নীল রেখা - যে পথে গিয়েছে নাসার এলআরও
গোলাপি রেখা - যে পথে যাওয়ার কথা ছিল চন্দ্রযান-২ অরবাইটরের
সবুজ রেখা - সিএএম প্রয়োগের পর যে পথ দিয়ে গিয়েছে চন্দ্রযান-২ অরবাইটর
ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সিএএম বা কলিসন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভর, চন্দ্রযান-২ বা কোনও মহাকাশ অভিযানের মহাকাশযানে এই প্রথমবার প্রয়োগ করা হলেও, এই কৌশল ব্যবহারের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থার। পৃথিবীর কক্ষপথে ইসরোর যে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটগুলি রয়েছে, সেগুলিকে মহাজাগতিক বস্তুর ধ্বংসাবশেষ এবং অন্যান্য মহাকাশযান বা উপগ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি এড়াতে প্রায়শই সিএএম ব্যবহার করা হয়। ইসরো এই ধরনের গুরুতর সংঘর্ষগুলি এড়াতে সবসময় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যায়। যখনই কোনও সংঘর্ষের ঝুঁকিকে গুরুতর বলে মূল্যায়ন করা হয়, তখনই তার উপগ্রহগুলিতে সিএএম প্রয়োগ করা হয়।