সংক্ষিপ্ত
- ভোট প্রচারে ব্যস্ত অর্জুন সিং
- বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে
- জয়ই একমাত্র লক্ষ্য অর্জুনের
- কাজে গাফিলতি দিতে রাজি নন অর্জুন
ভোটপ্রচারে বাংলা চষে বেড়াচ্ছেন ব্যারাকপুরের বাহুবলী নেতা অর্জুন সিংহ। ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে এবার বিজেপির হয়ে লড়ছেন তাঁর ছেলে পবন। খাসতালুকে ছেলের জয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগতে রাজি নন অর্জুন। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার শুরু করে করে দিয়েছে বাবা-ছেলের জুটি। পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে সভা, রোড-শো করছেন বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি অর্জুন। বুধবার হুগলির উত্তরপাড়ায় বিজেপি প্রার্থী প্রবীর ঘোষালের সমর্থনে রোড শো করেন। তার দু’দিন আগে ময়নায় ক্রিকেটার অশোক দিন্দার সমর্থনে সভা করেছেন। এককথায়, দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে ভোটের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ব্যারাকপুরের বেতাজ বাদশা।
পারিবারিক সূত্রে রাজনীতি অর্জুন সিংহের রক্তে। তাঁর বাবা সত্যনারায়ণ সিংহ ভাটপাড়ার তিন বারের বিধায়ক। উচ্চ মাধ্যমিকের পর নৈহাটির ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে ভর্তি হলেও কিছুদিনের মধ্যেই লেখাপড়ায় দাঁড়ি টানেন অর্জুন। চটকল-সহ বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন দিয়ে রাজনীতিতে হাতখড়ি হয় তাঁর। ক্রমে শ্রমিক আন্দোলন থেকে মূল রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন তিনি। ১৯৯৫ সালে ভাটপাড়া পুরসভায় কংগ্রেসর কাউন্সিলর হয়ে প্রথম ভোটে জেতেন তিনি। ১৯৯৮ সালে জন্মলগ্নেই যোগ দেন তৃণমূলে। বাম আমলে কার্যত নিজ কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ঘাসফুল ফুটিয়েছিলেন হিন্দিভাষী এই নেতা। ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে দাপুটে সিপিএম নেতা তড়িৎ তোপদারের বিরুদ্ধে তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল। সেবার মাত্র ৪০ হাজার ভোটে হেরে যান অর্জুন। ২০০১ সালে তৃণমূলের হয়ে ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়েন অর্জুন এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের রামপ্রসাদ কুণ্ডুকে হারিয়ে দিয়ে বিধায়ক হন। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে ফের তৃণমূলের হয়ে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন অর্জুন আর ফের একবার সিপিএম নেতা তড়িৎবরণ তোপদারের কাছে হেরে যান। তবে, ভাটপাড়া কেন্দ্রকে বরাবর নিজের দখলে রেখেছেন অর্জুন। পরপর চার বার এখান থেকে বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি। ভাটপাড়া পুরসভায় দু’দফায় পুরপ্রধানও হয়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাটপাড়া থেকে পুরো ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায় তাঁর প্রভাব বিস্তার হয়েছে। দলের মধ্যেই পৃথক অনুগামী-বৃত্ত তৈরি হয়েছে। তাঁকে নিয়ে দলে ঝামেলাও কম হয়নি। তাঁর প্রশ্রয়েই শিল্পাঞ্চলে ত্রাসের রাজনীতি, দাদাগিরি, তোলাবাজি বেড়েছে বলে অভিযোগ। এহেন অর্জুন সিংহ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে চাইলে তৃণমূল নেতৃত্বর সঙ্গে মতভেদ হয়। মমতা দীনেশ ত্রিবেদীকে প্রার্থী করেন। ক্ষোভে-দুঃখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্জুন। মুকুল রায় ততদিনে বিজেপিতে। তিনি হাত বাড়িয়ে ডেকে নেন অর্জুনকে এবং ব্যারাকপুর আসনে প্রার্থী করেন।
অর্জুন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ভাটপাড়ায় অশান্তি শুরু হয়ে যায়। ভাটপাড়া পুরসভায় অচলাবস্থা নেমে আসে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে পুরপ্রধান ছিলেন অর্জুন সিং নিজে। তিনি দলত্যাগ করার সময় তৃণমূলের ১১ জন কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে যান বিজেপিতে। ওই সময় অর্জুনের অনুগামীরা পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেও তৃণমূল তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দেয়। স্থানীয় কাউন্সিলর সোমনাথ তালুকদারকে অ্যাক্টিং চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয় তৃণমূল।
কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফল সামনে আসার পরে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। এক দিকে অর্জুন নিজে যেমন ব্যারাকপুর থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন, তেমনই ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রেও বিজেপির টিকিটে জয়ী হন অর্জুনপুত্র পবন। জুন মাসে ভাটপাড়া পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট দিয়ে সরকারি ভাবে বোর্ডের দখল নেয় বিজেপি। পুরপ্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন অর্জুন সিংহের ভাইপো সৌরভ সিংহ। এই ভাবে অর্জুনের নেতৃত্বে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে মাথা চাড়া দেয় বিজেপি।
নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে খোঁচা অভিষেকের, বললেন 'বিশ্বাসঘাতকদের বিসর্জন হবে' ... R
প্রচার যুদ্ধে শুরুতেই ব্যাকফুটে কংগ্রেস, বাংলায় কবে আসছেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা ...
শাসকদল তৃণমূল এত সহজে হার মানতে রাজি নয়। অগত্যা হামলা-বোমাবাজি চলতে থাকে দু’তরফে। বিভিন্ন মামলায় নাম জড়িয়ে রাতবিরেতে অর্জুনের দোরগোড়ায় পুলিশ পাঠানো শুরু করে শাসকদল। অর্জুন যখন ক্রমশ ব্যাকফুটে, তখন ভাটপাড়া পুরসভা পুনরুদ্ধার করে তৃণমূল। গত অক্টোবরে অর্জুন ঘনিষ্ঠ টিটাগড়ের বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লকে গুলি করে খুন করে একদল দুষ্কৃতী। অর্জুনের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেরাই এই হামলার পিছনে রয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, অন্তর্ঘাতের কারণে এই হত্যা।
এদিকে, বিধানসভা ভোটকে ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল। জগদ্দলের মেঘনা মোড় এলাকায় অর্জুন সিংহের বাড়ির সামনে বোমাবাজি হয়েছে সম্প্রতি। অর্জুনের অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূল পুলিশের ভয় দেখিয়ে থামাতে না পেরে এখন সরাসরি হামলা করছে।