সংক্ষিপ্ত
রাত পোহালেই দক্ষিণ হাওড়ায় ভোট
ঠিক তার আগে গুরুতর অভিযোগ বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে
রন্তিদেব সেনগুপ্ত করোনা লুকিয়ে প্রচার করেছেন
কমিশনে অভিযোগ জানালো তৃণমূল কংগ্রেস
রাত পোহালেই দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ। ঠিক তার আগে করোনা লুকিয়ে প্রচার করার অভিযোগ উঠল, বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্তর বিরুদ্ধে। করোনা পজিটিভ হয়েও বাড়িতে স্ববিচ্ছিন্নতায় বা কোনও হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে না থেকে, রাজনৈতিক প্রচার করে বেরিয়েছেন। শুক্রবার, নির্বাচন কমিশনে এমনই অভিযোগ দায়ের করলেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী নন্দিতা চৌধুরী। যদিও রন্তিদেব সেনগুপ্তের দাবি তিনি করোনা নেগেটিভ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত ৬ এপ্রিল হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচারসভা ছিল। প্রোটোকল মেনে, ওই সভার আগে গত ৪ এপ্রিল করোনা পরীক্ষা করান রন্তিদেব। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ ডুমুরজলা মাঠ থেকেই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীরা থেকে তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করেন। ওই দিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে তার নমুনা পাঠানো হয়েছিল করোনা পরীক্ষার জন্য। ৬ এপ্রিল রন্তিদেব সেনগুপ্তর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ইতিবাচক এসেছিল।
স্বাস্থ্য দফতরের কাছে থাকা হাওড়া দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্তর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট
এরপরও, ৮ এপ্রিল বিকাল পর্যন্ত, প্রতিদিনই মিছিল-মিটিং, রোড শো এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে অংশ নেন দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী, এমনটাই অভিযোগ। এমনকী, বিজেপির একাধিক প্রথম সারির নেতা এবং সদ্য গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়া চলচ্চিত্র তারকা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে রোডশোতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে। এরপরই করোনা পজিটিভ হয়েও তাঁর প্রচারে অংশ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
রন্তিদেব সেনগুপ্ত অবশ্য এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি তিনি করোনা পজিটিভ নন। প্রমাণ হিসেবে তিনি একটি করোনা নেগেটিভ রিপোর্টও দেখিয়েছেন। সেই রিপোর্টে তাঁর করোনা পরীক্ষার ফল নেতিবাচক লেখা থাকলেও, প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে।
যে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাচ্ছেনহাওড়া দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত
প্রথমত, এই রিপোর্ট অনুযায়ীও, ৪ এপ্রিলই তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে তা, মানিকতলায় আর রাত ন'টার পর। অথচ, সরকারি ল্যাবরটরি থেকে রাত নটার পর আর কারোর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। সেইসঙ্গে, আশ্চর্যজনকভাবে ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সোয়াব সংগ্রহের অনেক আগেই, সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ রন্তিদেবের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পৌঁছে গিয়েছিল স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনস-এ। এছাড়া, রন্তিদেব সেনগুপ্তের দেখানো রিপোর্টটির ফরম্যাটও অনেক পুরনো।
এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে একইসঙ্গে আদর্শ আচরণবিধি এবং কোভিড মহামারি কালীন আইন ভাঙার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। হাওড়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী নন্দিতা চৌধুরীর নির্বাচনী এজেন্ট দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'যেভাবে করোনা সংক্রমণ ফের লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে তাঁর (রন্তিদেব সেনগুপ্তের) রাজনৈতিক প্রচারে অংশ নেওয়া উচিত হয়নি। এর ফলে ওই এলাকায় করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে।' হাওড়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান তথা বিদায়ী মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, 'তাঁর হোম আইসোলেশনে থাকা উচিত ছিল। তা তিনি করেননি। এটা অন্যায়। কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'
আরও পড়ুন - কৃষি না শিল্প - একদশক পর নির্বাচনে ফিরে এল পুরোনো প্রশ্ন, কী বলছে সিঙ্গুর
আরও পড়ুন - বাদ 'জয় শ্রীরাম', ভরসা নিজের কাজ - শুভেন্দুর থেকেও কঠিন পরীক্ষায় এবার রাজীব, দেখুন
আরও পড়ুন - বঙ্গের কোন কোন কেন্দ্রে সহজে জিতবে বিজেপি, কোথায় লড়াই কঠিন - কী বলছে দলের গোপন বিশ্লেষণ
এদিকে, এত বিতর্কের পরও নিজ অবস্থানে অনড় রন্তিদেব সেনগুপ্ত। তাঁর দাবি, তাঁর কোভিড-১৯ হয়নি। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগকেও তিনি গুরুত্ব দিতে নারাজ। এমনকী নাকে-মুখে কোনও মাস্ক ছাড়াই এদিনও তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। তবে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। তাদের রেকর্ড অনুযায়ী বিজেপি প্রার্থী কিন্তু করোনা পজিটিভ। সব মিলিয়ে ভোটের আগের দিন করোনা বিতর্কে বিজেপি প্রার্থী।