সংক্ষিপ্ত

  • কৃষকদের কথা ভাবার মতো মন নেই মুখ্যমন্ত্রীর
  • আয়ুষ্মান প্রকল্প চালু করতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী 
  • প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্প চালু করা নিয়ে গড়িমসি করল তৃণমূল সরকার
  • কৃষকদরদী ভাবমূর্তি আরও বেশি করে প্রশ্নচিহ্নের মুখে 

শমিকা মাইতি- রাজনীতি, রাজনীতি, কৃষকদের কথা ভাবার মতো মন নেই মুখ্যমন্ত্রীর। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ‘একার প্রচার’ পাবে বলে পশ্চিমবঙ্গে আয়ুষ্মান প্রকল্প চালু করতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর, চাষিদের টাকা কেন কেন্দ্র থেকে সরাসরি অ্যাকাউন্টে যাবে, ভায়া রাজ্য নয়, এই যুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্প চালু করায় এতদিন ধরে গড়িমসি করল তৃণমূল সরকার। ভোটবাজারে চাষিদের বঞ্চনা নিয়ে বিজেপি জোরদার প্রচার শুরু করায় ডিগবাজি খেয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পটিতে সদ্য সায় দিয়েছেন মমতা। তাতে করে তাঁর কৃষকদরদী ভাবমূর্তি আরও বেশি করে প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছে।  

আরও পড়ুন- এক নজরে বঙ্গ-ভোটের সমস্ত তথ্য, নন্দীগ্রাম থেকে নন্দকুমার দ্বিতীয় দফার ভোট -চিত্র ...

২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্প চালু করেছিল। এই প্রকল্পে সর্বোচ্চ ২ একর পর্যন্ত জমির মালিক এমন কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বছরে তিন দফায় মোট ৬ হাজার টাকা সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের দাবি ছিল, চাষিদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি না পাঠিয়ে  প্রকল্পের টাকা রাজ্য সরকারের হাতে দিক কেন্দ্র। রাজ্য ওই টাকা কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পাঠাবে। কিন্তু কেন্দ্র তাতে রাজি হয়নি। এই নিয়ে গত দু’বছর ধরে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে চাপানউতোর চলছিল।
ইতিমধ্যে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট বেজে উঠলে বিজেপি নেতারা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে রাজ্যের চাষিদের বঞ্চনার বিষয়টি নিয়ে সরব হন। হলদিয়ায় জনসভা করতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে কৃষকদের জন্য এই প্রকল্প চালু করবে। এমনকী এতদিন ধরে যে টাকা বকেয়া হয়েছে এই রাজ্যের চাষিদের, সেই ১৮,০০০ টাকাও মিটিয়ে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- 'ইলেকশনটা হয়ে যাক- তারপর দেখি কে আশ্রয় দেয়', নন্দীগ্রামের ভোটের আগে উদ্বেগ বাড়ল কি মমতার 

বিষয়টা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে অবশেষে এই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনা চালু করতে রাজি হন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো কাজ শুরু হয়েছে মাস খানেক আগে। রাজ্য সরকারের কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্তদের মধ্যে যাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন, তাঁদের কাছে এসএমএসে বার্তা পাঠানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কৃষি দফতরের অফিসে এসে ওই চাষিদের একটা ফর্মে সই করতে হচ্ছে। এরপর কৃষি দফতর থেকেই কেন্দ্রের পোর্টালে চাষিদের যাবতীয় তথ্য আপলোড করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পুরো কাজটাই করা হচ্ছে নিঃশব্দে। যাতে ভোটের বাজারে এই নিয়ে বিজেপি কোনও সুবিধা করতে না পারে। বিজেপি কিন্তু যা সুবিধা করার করে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কোচবিহারের জনসভায় মমতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘কেন কেন্দ্রের এই প্রকল্প থেকে চাষিদের এতদিন বঞ্চিত করে রেখেছেন? আপনি কি ভয় পেয়েছেন যে চাষিরা হাতে টাকা পেলে মোদিজীর প্রশংসা করবে?’
তৃণমূলের বক্তব্য, রাজ্যে চাষিদের জন্য কৃষকবন্ধু প্রকল্প আগে থেকেই চালু আছে। নতুন করে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দরকার নেই। 
তাহলে আচমকা ভোটের দোরগোড়ায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পটিতে সায় দেওয়া হল কেন?
কোনও উত্তর নেই তৃণমূলের কাছে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনী ইস্তাহারে চাষিদের বার্ষিক ১০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চাইছেন মমতা। 
বিজেপি পাল্টা তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে চাষিদের বার্ষিক ভাতা ১০ হাজার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর বকেয়া ১৮,০০০ এককালীন অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে উপরি।  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাঁথির জনসভায় বলেন, ‘ভারত সরকার কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দিদি কৃষকদের শত্রু হয়ে বসে রয়েছেন। ২ মে সব দেওয়াল ভেঙে যাবে। বিজেপি সরকার আসবে। আর কৃষকদের তিন বছরের বকেয়া টাকাও আমি দেব। গত তিন বছর ধরে যে টাকা দিদি আপনাদের দিতে দেয়নি, সেটা আমি দেব।’