ভোটের ক্লাব গুলিকে আর্থিক ঘোষণা ভোটের আগে কেন টাকা বিলি? প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক মহল মুখ্যমন্ত্রীর অনুদান নিয়ে সরব বিরোধীরা

তপন মল্লিক চৌধুরী- রাজ্য বাজেটের তিন দিনের মাথায় ফের রাজ্যের ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। অনুদান দেওয়া হবে ৮২৮৯টি ক্লাবকে ৮২ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি এলাকার ক্লাবগুলি একটু ক্যারাম খেলে, কখনো ফুটবল খেলে, রচনা প্রতিযোগিতা, দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে অঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করে একইসঙ্গে রক্তদান শিবিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজন করে, মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকে। কিন্তু আসল কথা হল দুয়ারে ভোট তাই টাকা দিয়ে পাড়ার ক্লাবগুলিকে হাতে রাখা। মমতা একদিকে বলছেন, রাজ্যের কোষাগারে টাকা নেই। আবার তিনিই ক্লাবগুলিকে দেদার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করছেন।

আরও পড়ুন-'দিদি আমাদের চাকরি দিন, নাহলে মৃত্যু দিন', মমতার সভায় পোস্টার দেখে পুলিশের তৎপরতা


ভোটের সময় ক্লাবগুলি যে প্রচারে নামে সে কথা নতুন নয়। বিরোধীদের প্রবল চাপ প্রতিহত করতে, দলীয় রাজনীতির সমালোচনাকে সরিয়ে রাখতে, নিজের প্রতি আনুগত্য সুনিশ্চিত করতেই মমতা ক্লাব-অনুদান চালু করেছেন। তৃণমূল দলে্র ভাঙন পর্বে মেদিনীপুরের কলেজিয়েট স্কুল মাঠে মমতার জনসভাস্থলের আশেপাশে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত বড় বড় ফেস্টুন দিয়েছে ‘অ্যারিয়ান্স’ ক্লাব। সরাসরি ক্লাবের নামেই ফেস্টুন কারণ তৃণমূল প্রভাবিত ক্লাব বলেই। তাই মমতার ছবির সঙ্গে লেখা থাকে- ‘বাংলা জুড়ে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক আমি’, ‘২১ শে দিদিই ফিরছে’ বা ‘আমাদের সাথে পাঙ্গা নিলে, আমরা চাঙ্গা হয়ে যাই।’ এছাড়া ‘কন্যাশ্রী’, ‘যুবশ্রী’ ইত্যাদি প্রকল্পের নামও রয়েছে ফেস্টুনে। মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘ক্লাবের ছেলেরাই আমাদের সংস্কৃতি ধরে রেখেছে।’ তার মানে এটাই হল মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক সংস্কৃতি। সে কারণে ক্ষমতায় আসার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্লাবগুলির জন্য মমতা অনুদান চালু করেছিলেন। 


প্রশ্ন হল, চাওয়া- পাওয়ার জায়গা থেকে একটা-দু’টো ক্লাব তৃণমূলের সমর্থনে ভোট যুদ্ধে নেমে পড়তেই পারে, লড়েও যেতে পারে, কিন্তু ক্লাব বা সংঘের যুবসমাজ কি আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আছে? ক্লাবগুলি খেলাধুলোর উন্নতির স্বার্থেই অনুদানের আবেদন করে। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলেই তো আজ তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে উন্নয়নের নামগন্ধ নেই। বেকারত্বে ডুবে থাকা যুবসমাজ সরকারের ভূমিকাকে যে ভাল চোখে দেখছে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই অবস্থায় পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি থেকে যুবসমাজের একাংশ কিছুটা ফায়দা তুলে নিতে পারলেও বাকি অংশের যে মিলবে না কিছুই সেটাও যুবসমাজ আজ জেনে বুঝে গিয়েছে। তাই এবার টাকার বিনিময়ে ক্লাবের যুবকরা ভোট তুলতে ঝাপিয়ে পড়বে কিনা সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন।


ক্ষমতায় আসার পর থেকে এক দশক রাজ্যের অর্থ ভান্ডারের সঙ্কট নিয়ে কাঁদুনি গেয়ে কাটালেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কথায় কথায় তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের বকেয়া সুদের টাকা কেটে না-নিলে তিনি গোটা বাংলাকে সোনায় মুড়ে ফেলতেন। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডি-এর ৭ শতাংশ দিতে তাঁর বুক ফাটে, অথচ করোনা কালেও পুজো কমিটিকে টাকা দেওয়ার জন্য তিনি ছটফট করেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী কোন আক্কেলে জনগণের করের টাকা এই ভাবে ক্লাবগুলিকে অকাতরে বিলোচ্ছেন? আগেও ক্যাগ রিপোর্টে সে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কোন যুক্তিতে তিনি মাগ্গি গণ্ডার বাজারে চিট ফান্ডে প্রতারিত মানুষের টাকা ফেরাতে সরকারি কোষাগার থেকে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা বলেন? এরপর আবার ভোট বৈতরণী পেরতে ক্লাবকে টাকা? এবার মনে হয় না সেটা সম্ভব।