সংক্ষিপ্ত
খাদ্য দপ্তরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কোটাতে এস আই পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এক ডিভোর্সি মহিলা ও তাঁর পরিবারের কাছ থেকে প্রায় কয়েক মাস যাবৎ খেপে খেপে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মস্যাৎ, স্থানীয় অমিত সাহার বিরুদ্ধে ঘোরতর অভিযোগ।
চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার জালিয়াতি পশ্চিমবঙ্গে অব্যাহত। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় যখন হাইকোর্টের শ্যেন দৃষ্টি এসে পড়ল, তখন থেকেই শুরু রাজ্য জুড়ে আলোড়ন। আর এই আলোড়নের মধ্যেই জেলায় জেলায় ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ছে একের পর এক বেড়াল।
এবারের ঘটনা হাবড়ার অশোকনগরে এবং সেখানে জড়িয়ে গেল রাজ্যের বন মন্ত্রী তথা, তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম। তবে, সরাসরি ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে না থাকলেও কীভাবে প্রতারণা কাণ্ডে জড়িয়ে গেল মন্ত্রীর নাম?
জানা যাচ্ছে, রাজ্যের খাদ্য দপ্তরে এস আই পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এক ডিভোর্সি মহিলা ও তাঁর পরিবারের কাছ থেকে প্রায় কয়েক মাস যাবৎ খেপে খেপে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছিলেন অমিত নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি, যাকে এলাকার মানুষ তৃণমূল কর্মী ও মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ বলেই জানতেন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কোটাতেই খাদ্য দপ্তরে ওই চাকরি পাইয়ে দেওয়া হবে বলে প্রথমে ২ লাখ টাকা থেকে প্রলোভন শুরু করেন তিনি। এরপর চাকরির ডিম্যান্ড বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে দাবি করেন আরও দু’লাখ। এইভাবে ক্রমাগত লোভ দেখাতে দেখাতে সর্বস্বান্ত হয়ে প্রতারক অমিতের হাতে মোট ৮ লাখ টাকা হস্তান্তর করেন ওই মহিলার বাবা।
এই ঘটনায় ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে হাবড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রতারিত হওয়া অশোকনগরের ওই পরিবার। অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে জানা যায়, শুধু তাঁরাই নন, ওই একই ব্যক্তির দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন ওই এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবারের লোকজন। অভিযোগ করার মাস খানেক বাদে অভিযুক্ত অমিতকে থানায় ডেকে এনে হাবড়া থানার আইসির সামনে তাকে দিয়ে একটি মুচলেকা লেখানো হয়, যেখানে আগামি ৪ মাসের মধ্যে সে আদায় করা সমস্ত টাকা পরিশোধ করে দেবে বলে উল্লেখ করে বলে দাবি প্রচারিত হওয়া পরিবারের। তবে, সেই ঘটনার পর থেকে কোনও টাকাই সে পরিশোধ করেনি, ফোনও ধরছে না বলে অভিযোগ।
অবশেষে প্রতারিত হওয়া পরিবার টাকা ফেরত চেয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুললেন। অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীর নাম অমিত সাহা ওরফে ফেলা, বাড়ি হাবড়ার বাণীপুর এলাকায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ২০১৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২২ এর মার্চ মাস পর্যন্ত অশোকনগরের একটি পরিবারের কাছ থেকে চেক ও নগদে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম করে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোট ৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে ওই পরিবার দেখা করলে তিনি অমিতকে চিনতে পারলেও তাঁর অনুগামী হয়ে, তাঁরই দেওয়া চাকরি পেয়ে এবং তাঁরই নাম নিয়ে অমিত এভাবে প্রতারণা করেছে শুনে তিনি বেশ অবাক হন। কিন্তু, টাকা ফেরতের ব্যাপারে বা অভিযুক্তের বিষয়ে কোনও রকম ব্যবস্থাই তিনি নেননি বলে জানিয়েছেন প্রতারিতরা।
প্রতারিত হওয়া অশোকনগরের বাসিন্দা গোপাল দাস জানান, তাঁর মেয়ে শ্রেয়া বিবাহ বিচ্ছিন্না। শ্রেয়া দাসকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এই টাকা নেয় অভিযুক্ত। নিজের সমস্ত গয়না বিক্রি করে চাকরি পাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁদের অভিযোগ আরও একাধিক মানুষের কাছ থেকে অভিযুক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত সমস্ত টাকা প্রতারকের হাতে তুলে দিয়ে দাস পরিবার আজ সর্বস্বান্ত।
তাঁর বিরুদ্ধে দোষারোপ সম্পর্কে তাঁর মতামত নিতে গেলে অভিযুক্ত অমিত সাহাকে নিজের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে চাননি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটাই যে, গোটা ঘটনায় তৃণমূলের তরফ থেকে কোনওরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন-
'গোহারা হারবে বিজেপি', পুরভোট নিয়ে বললেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক
মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উদ্যোগে হাবড়ায় উদ্বোধন হল দুয়ারে অক্সিজেন প্রকল্প -র
দেশের লক্ষ্মী ভান্ডারের অবস্থা কী, বিজেপিকে খোঁচা জ্য়োতিপ্রিয়র