সংক্ষিপ্ত
- মুক বধির যুবককে বাড়ি ফেরানোর চেষ্টা
- ভারতে এসে খোঁজ চালাচ্ছেন বাংলাদেশি যুবক
- চোদ্দ বছর আগে কিশোরকে উদ্ধার করেন বাংলাদেশের আরিফুল
- ভাইয়ের মতোই বড় করেছেন তাঁকে
ভিটে ছাড়া হওয়ার ভয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ ফিরে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে গত কয়েক মাসে। সরকারি তথ্য অন্তত সেরকমই বলছে। এই পরিবেশের মধ্যেই মুখ বধির কিশোরের বাড়ির ঠিকানা খুঁজে দিতে ভারতের
সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার কৃষক মহম্মদ আরিফুল। চোদ্দ বছর আগে যে কিশোরকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন আরিফুল।
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের গেদে চেকপোস্ট থেকে মাত্র দু' কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের চুয়াডাঙায় বাড়ি মহম্মদ আরফুলের ইসলামের। চাষাবাস করে দিনযাপন করেন আরিফুল এবং তাঁর পরিবার। বাড়িতে ছয় ভাই আর বাবা,মা। চোদ্দ বছর আগে সীমান্ত লাগোয়া চাষের জমিতে চাষ করতে গিয়ে এক মুকবধির কিশোরকে দেখতে পান আরিফুল। অসহায়ের মতো বসে কাঁদছিল সে। কী তার পরিচয়, হিন্দু না মুসলিম, এ সব না ভেবেই সেদিন অসহায় ওই কিশোরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি ওই যুবক।
দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে অতিরিক্ত একজনের অন্ন সংস্থান কীভাবে হবে, তা না ভেবেই ওই কিশোরকে আপন করে নেয় আরিফুলের পরিবার। তার পর থেকে ওই কিশোরকেও নিজের সন্তানের মতোই বড় করেছেন আরিফুলের মা। ওই কিশোর আরিফুলেরই পরিবারের একজন হয়ে ওঠে।
সেই সময় আরিফুলের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল ছিল না। তাই বাংলাদেশে নিজের গ্রামের আশপাশের এলাকায় খোঁজ করলেও বর্ডার পেরিয়ে ভারতে এসে কিশোরের পরিবারের খোঁজ করার মতো প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে পারেনি সে।
কিন্তু দীর্ঘদিন চাষ করে আরিফুলের পরিস্থিতি কিছুটা ফিরেছে। টাকা পয়সা জমিয়ে পাসপোর্ট এবং ভিসা বানিয়ে ভারতে এসেছেন। চোদ্দ বছর আগে উদ্ধার হওয়া সেই কিশোর এখন যুবক। গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে এসে ওই যুবকের ছবি নিয়ে সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম এবং বাজারগুলিতে ঘুরছেন আরিফুল। তাঁর উদ্দেশ্য একটাই, যদি কেউ তাঁর সঙ্গে থাকা যুবকের ছবি দেখে চিনতে পারেন।
সীমান্তবর্তী হাঁসখালি, গাজনা, বগুলা, গেদের বিভিন্ন বাজারে নিজের ভাইয়ের মতো ওই যুবকের ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আরিফুল। এখনও পর্যন্ত কেউই আরিফুলকে ইতিবাচক খবর দিতে পারেননি। তবু হাল ছাড়তে নারাজ বাংলাদেশি ওই যুবক। তিনি বলেন, 'ওকে যখন আমাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম, তখন আমরা খুবই গরিব ছিলাম। ওর বাবা-মায়ের ঠিকানা জোগাড় করার চেষ্টা তখন করতে পারিনি। ও আমার নিজের ভাইয়ের মতোই। তাই ওকে নিজের বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। সন্তান বোবা হলেও বাবা মায়ের কাছে সে সন্তানই। ওকে ওর পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দিতে কষ্ট আমাদের একটু হবে ঠিকই, কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ওর দেখা হয়ে গেলে তার থেকে বড় শান্তির কিছ হয় বলুন তো ! সেই উদ্দেশ্যেই আমার ভারতে আসা।'
আরিফুল জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে থাকা ওই যুবক সম্ভবত হিন্দু ঘরের। কিন্তু সেসব ভেবে কখনও ওই যুবককে তাঁর পরিবার দূরে ঠেলে দেয়নি।
নিজের ভাইয়ের মতো করে বড় করা ওই যুবককে শেষ পর্যন্ত আরিফুল তাঁর আশল পরিবারের হাতে তুলে দিতে পারবেন কি না, তা সময় বলবে। কিন্তু ধর্ম আর কাঁটাতারের ঊর্দ্ধে উঠে আরিফুল যে মানবিকতার প্রমাণ রেখেছেন, প্রশংসা করছেন সবাই।