সংক্ষিপ্ত

 দুই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য জনসমাগন হয়নি। তাই অনেক আশা নিয়ে কৌশিকী আমাবস্যায় ব্যবসাপাতি ভাল হবে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তেমনভাবে জমল না তারাপীঠের কৌষিকী অমাবস্যা। মাথায় হাত লজ মালিক থেকে সমসত স্তরের ব্যবসায়ীদের।

দুই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য জনসমাগন হয়নি। তাই অনেক আশা নিয়ে কৌশিকী আমাবস্যায় ব্যবসাপাতি ভাল হবে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তেমনভাবে জমল না তারাপীঠের কৌষিকী অমাবস্যা। মাথায় হাত লজ মালিক থেকে সমসত স্তরের ব্যবসায়ীদের। হোটেল ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এরজন্য সংবাদ মাধ্যমকে দায়ী করা হলেও পুন্যার্থীরা কাঠগড়ায় খাঁড়া করেছেন পুলিশ এবং সেবাইতদের একাংশকে। প্রতিবছর পুলিশ মন্দিরের ছয় কিলোমিটার আগেই গাড়ির গতি রুখে দেওয়ায় ভক্তরা মুখ ফিরিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কথিত আছে মহিষাসুর বধের পর শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন স্বর্গের দেবতারা। শেষে দেবতারা মহামায়ার তপস্যা শুরু করেন। সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী নিজ কোষ থেকে উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত করে এক পরমাসুন্দরী দেবী মূর্তিতে আবির্ভূত হন। নিজ কোষ শরীর থেকে বের হওয়ার জন্য তিনি হলেন কৌশিকী। কৌশিকীদেবী আবার তারা ও কালীতে রূপান্তরিত হন। আবার শোনা যায় কৌশিকী অমাবস্যার দিন তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় সাধক বামাক্ষ্যাপা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ফলে ওই দিন মা তারার পুজো দিলে এবং দ্বারকা নদীতে স্নান করলে পুণ্যলাভ হয় এবং কুম্ভস্নান করা হয়। এই বিশ্বাসে আজও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ওই দিনটিতে তারাপীঠে ছুটে আসেন।
    
করোনা অতিমারির কারণে গত দু’বছর বন্ধ ছিল তারাপীঠ মন্দিরের দরজা। ফলে পুন্যার্থীরা চাইলেও তারাপীঠে আসতে পারেননি। করোনা প্রকোপ কমতেই দু’বছর পর এবার কৌশিকী অমাবস্যায় মন্দিরের দরজা সারা রাত খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছিল এবার পাঁচ লক্ষাধিক পুন্যার্থীর জমায়েত হবে। সেই হিসাব ধরে প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়েছিল। তার প্রথম ধাপ হিসাবে অমাবস্যার সকাল থেকেই মন্দিরের ছয় কিলোমিটার আগে মনসুবা মোড়ে চার চাকা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে মন্দিরে পৌঁছতে পুন্যার্থীদের গাড়ি ছেড়ে অটো, টোটো কিংবা বিপজ্জনক যন্ত্রচালিত ভানের উপর ভরসা করে পৌঁছতে হয়েছে। এই তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে তারাপীঠ বিমুখ হয়েছেন পুন্যার্থীরা। 

ঝাড়খণ্ডের রাঞ্ছির বাসিন্দা হিমাংশু শ্রীবাস্তব, বিহারের ভাগলপুরের বাসিন্দা শেখর কুমার সিং, শিলিগুড়ির মুকেশ আগরওয়ালরা পুলিশি অতিসক্রিয়তার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তারা বলেন, “আমরা দামি গাড়ি নিয়ে তারাপীঠে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ গা জোয়ারি করে মন্দিরের ছয় কিলোমিটার আগে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর আমাদের গাড়ি রুখে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে গাড়ি অসুরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রেখে মন্দিরে যেতে হয়েছে। এমনকি লাইসেন্স নেই এমন বিপজ্জনক যন্ত্রচালিত ভ্যান যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর থেকে আমরা এই সময় তারাপীঠে আসব না”। একই অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন কলকাতার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস, তারক চট্টোপাধ্যায়রা। তারা বলেন, “এমনিতেই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে লজ বুকিং করা হয়েছিল। কিন্তু লজের দরজা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে যেতে পারছি না। ফলে মন্দিরে গিয়ে গাড়ি নিয়ে চিন্তা থেকে যাচ্ছে। বিষয়টি আগেই আমাদের কেউ কেউ বলেছিলেন। এবার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। এই দিনে আর তারাপীঠে আসব না”।

বিহারের বাসিন্দা অজিত সিং, নিতু সিংরা বলেন, “দিন পনেরো আগে অন লাইনে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনদিনের প্যাকেজের এসি রুম বুকিং করে ছিলাম। একদিকে মাত্রাতিরিক্ত লজ ভাড়া, তারপর পুলিশের অতিসক্রিয়তায় আমরা বিরক্ত। তারপর মন্দিরে গিয়ে পুজো দেওয়ার জন্য একশ্রেণীর সেবাইত যেভাবে মোটা অঙ্কের টাকা হাঁকছে তাতে পুন্যার্থীরা বিরক্ত। তারাপীঠে পুন্যা লাভ করতে এসে টাকার শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে”।
    
যদিও লজ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুনীল গিরি পুন্যার্থীরা তারাপীঠ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “লজ ভাড়া নিয়ে সংবাদমাধ্যম ধারাবাহিক অপপ্রচার করার জন্যই মানুষ আসেননি। এই সময় লজের ভাড়া অতিরিক্ত নেওয়া হয় না। মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাই এবার কৌষিকী অমাবস্যায় মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন”।
    
তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা যেমন আশা করেছিলাম তেমনটা হয়নি। তার বেশ কয়েকটা কারণ রয়েছে। আমরা এনিয়ে মন্দির কমিটিতে আলোচনা করব”।

কৌশিকী অমাবস্যার প্রচারে তারাপীঠ যেন 'বদলাপুর', তৃণমূলের প্রচারে গায়েব অনুব্রত মণ্ডল

'পুজো কমিটিগুলি বেশি খরচ করলে গরীব মানুষ উপকৃত হবে', পুজো অনুদান মমতার পাশে কুণাল

আরও সম্পত্তি সুকন্যা মণ্ডলের নামে, অনুব্রত-কন্যার বহু জমিজমার হদিশ পেল সিবিআই