সংক্ষিপ্ত
- আমফানের দাপটে লণ্ডভণ্ড দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা
- কাকদ্বীপ-কুলতলি-কৈখালি-পাথরপ্রতিমায় বাঁধে ফাটল
- ভেসে গিয়েছে কচুবেড়িয়া জেটি
- ক্যানিং হাসপাতালে উড়ে গিয়েছে টিনের চাল
আয়লার ক্ষয়ক্ষতি এখন পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এবার সুাপর সাইক্লোন আমফান বাংলার একাধিকং জেলাকে কার্যত শ্মশান বানিয়ে দিয়ে গেল। যতটা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাস্তবে দেখা গেল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
নবান্ন থেকে জানান হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় আমফানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগামর। ভেঙে পড়েছে, রাস্তা, ঘরবাড়ি, ব্রিজ। আমফান মোকাবিলায় বুধবার নবান্নেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড়ের ধ্বংসলীলা নিয়ে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, করোনার থেকেও পরিস্থিতি ভয়াবহ, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি।
ইতোমধ্যে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে জানা গেছে, কচুবেরিয়ার জেটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে। কাকদ্বীপ, কৈখালি, কুলতলি, পাথরপ্রতিমায় একের পর এক বাঁধ ভেঙে পড়েছে। বানভাসী হতে চলেছে বহু গ্রাম। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হাজার-হাজার কাঁচা বাড়ি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গোসাবার ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে এনেছে প্রশাসন। এ ছাড়া কুলতলি থেকে ১০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। ভেঙেছে একের পর এক নদী বাঁধ। বিঘার পর জমি জলের তলায়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারিত হতে লেগে যাবে কয়েকদিন।
আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সুন্দরবন-সহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮৫ কিমি বেগে ঝড় বয়ে গিয়েছে। আয়লার সময়ে উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। আর কলকাতায় আয়লার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। আমফানের তাণ্ডবের সময়ে দমদমে ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটার এবং কলকাতার আলিপুরে ১১৪ কিলোমিটার। রাত পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে ২৪৪.২ মিলিমিটার। হাওয়া অফিসের খবর, মে মাসে কলকাতায় এক দিনে এত বৃষ্টি আগে দেখা যায়নি।
আমফানে ঘটেছে মৃত্যুও। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'ইতোমধ্যেই আমাদের কাছে দশ-বারো জনের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছেছে।'
ঘূর্ণিঝড় আমফান তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে হাওড়াতেও। সেই ঝড়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল ৩২ বছরের এক যুবকের। বেলুড়ের হারাধন মুখার্জি রোডের বাসিন্দা ওই যুবক ভোরে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গেলে , চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকালের ঝড়ে বেলুড়ের বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙেছে। ছিঁড়েছে বিদ্যুতের তার। সেগুলি সরানোর কাজ শুরু করেছেন পুরসভার কর্মীরা।হাওড়াতে এক কিশোরীরও মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তাঁর নাম লক্ষ্মী কুমারী সাউ(১৩)। টিনের চাল উড়ে গলা কেটে তাঁর মৃত্যু হয়।
উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট মহকুমায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে এখনও পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বসিরহাট মহকুমার মিনাখাঁ ধুতুরদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বারগা গ্রামে নূরজাহান বেগম নামে এক মহিলার ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে ওই মহাকুমার মাটিয়া থানার মমিনপুর গ্রামে ঘর চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে মহন্ত দাস নামে ২২ বছরের এক যুবকের।
পশ্চিম বর্ধমানেও বয়ে যায় ঝড়। গাছ ভেঙে আটকে যায় বহু রাস্তা। পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। ঝড়ের প্রভাব পড়েছে বর্ধমান শহরেও।
ঘূর্ণিঝড় উমপুনের তাণ্ডবে পূর্ব মেদিনীপুরের ইটাবেড়িয়া ও ভূপতিনগরে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। লণ্ডভণ্ড সৈকত শহর দিঘা। ভেঙে পড়েছে শয়ে শয়ে গাছ। কাঁথিতে ধূলিসাৎ বহু কাঁচা বাড়ি।