সংক্ষিপ্ত

মৃত্যু হওয়ার পরও তাঁর দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেননি কেউই। বেলা পর্যন্ত সেখানেই পড়েছিল দেহ। জিআরপির তরফেও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল না। শুধু সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। সোমবার সকালে এই ছবি ধরা পড়েছে শিয়ালদহ বজবজ শাখার আকরা স্টেশনে। 

সেভাবে কোনও দিনই কাজ (Work) জোটেনি। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে তাই স্টেশনেই (Station) কাটত দিন। কোনভাবে দিন গুজরান করতেন। আর যেখানে হাতে কাজই নেই, সেখানে কোনও শরীর খারাপ হলে তার চিকিৎসা (Treatment) করানো একেবারে 'বাহুলতা'। ফলে চিকিৎসার অভাবে স্টেশনেই মৃত্যু (Death in Akra Station) হয় রাজু ঘোষ (৪২) নামে এক ব্যক্তির। এদিকে মৃত্যু হওয়ার পরও তাঁর দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেননি কেউই। বেলা পর্যন্ত সেখানেই পড়েছিল দেহ। জিআরপির (GRP) তরফেও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল না। শুধু সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। সোমবার সকালে এই ছবি ধরা পড়েছে শিয়ালদহ বজবজ শাখার (Sealdah-Budge Budge Division) আকরা স্টেশনে। 

আকরা স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের (Ticket Counter) ঠিক সামনেই দেহটি শোয়ানো ছিল। রাতে হয়তো সেখানেই পরিবারের সঙ্গে ঘুমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সকালে আর ওঠা হয়নি। সোমবার সকালটা আর দেখতে পারেননি তিনি। রাতেই ঘুমের মধ্যে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এদিকে সপ্তাহের প্রথম দিন হওয়ায় সকাল থেকেই স্টেশনে ভিড় ছিল। টিকিট কাউন্টারের কাছে দেহ পড়ে থাকতে দেখে সবারই কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছিল। তাই কোনওরকমে তাঁকে অবহেলার চোখে দেখে নিজের পা বাঁচিয়ে টিকিট কাটছিলেন যাত্রীরা। অবশ্য সেই দেহ সরিয়ে নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য করার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন না কেউই। স্টেশন মাস্টার থেকে পথচলতি মানুষ বা প্রশাসনের কারও কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। এরপর বাধ্য হয়ে স্থানীয় কিছু লোকজন মহেশতলা থানায় খবর দেন। তাঁরা বিষয়টি শুনে জানান, এটা সম্পূর্ণ জিআরপির বিষয়। তাই তাঁরা কোনও কিছুই করতে পারবেন না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনে ভিড় আরও বাড়ছিল। সেই সময় মৃতদেহ ওই এলাকায় পড়ে থাকায় চাপ আরও বেড়ে যায়।  

আরও পড়ুন- স্বামী পরকীয়ায় মত্ত, সারাক্ষণ ব্যস্ত মোবাইলে, সুবিচারের দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে ধর্না যুবতীর

তারপর স্থানীয়রাই ১০০ নম্বরে ফোন করেন। সেই ফোন করার পর বিভিন্ন মহল থেকে জিআরপিতে ফোন করা হয়। নড়েচড়ে বসেন সবাই। সকাল নটার সময় জিআরপির প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে আসলেও যেহেতু স্টেশনের উপরে মৃতদেহটি পড়েছিল তাই ডাক্তারি সার্টিফিকেট ছাড়া সেই দেহ কোনভাবেই নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ৪ ঘণ্টা পরে স্থানীয় একটি ডাক্তারকে ডেকে এনে মৃতের ডেথ সার্টিফিকেট করানো হয়। কিন্তু, সেটি  হাতে পাওয়ার পর সমস্যা দেখা দেয় এই দেহ হস্তান্তর কাকে করা হবে। কারণ মৃত রাজু ঘোষ-এর স্ত্রী ও তিন সন্তান বর্তমান হলেও তাঁদের কারও কাছেই কোনও নাম ঠিকানার সরকারি নথি ছিল না। আসলে বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে পা দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু, তারপর তাঁদের ঠিকানা বলতে ছিল শিয়ালদহ-বজবজ শাখার বিভিন্ন স্টেশন। এমনকী নির্দিষ্ট কোনও রুজি-রুটিও ছিল না। কী করা হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। 

আরও পড়ুন- বন্যাত্রাণের টাকা তছরুপের অভিযোগ, 'মুখ ঢেকে' থানায় আত্মসমর্পণ তৃণমূলের পঞ্চায়েত কর্মাধ্যক্ষের

খবর যায় স্থানীয় তৃণমূল পুরো পিতা আতিবর রহমানের কাছে। তিনি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তাঁর নিজস্ব প্যাডে বালিগঞ্জ জিআরপিকে লিখিত অনুরোধ করেন যেন রাজু ঘোষের স্ত্রী পূজা ঘোষকে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি রাজুর মৃতদেহ হস্তান্তরের পর শেষকৃত্যও তিনি নিজের দায়িত্ব নিয়ে আকরা শ্মশানে করাবেন বলে জানান। দীর্ঘ টালবাহানার পর যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তখন ঘড়িতে বাজে বেলা ১২টা।

আরও পড়ুন- উপনির্বাচন ঘিরে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ, আসানসোলে মনোনয়নপত্র জমার দিলেন শত্রুঘ্ন