পুরুলিয়ায় সম্প্রতি প্রাণী সম্পদ দফতর থেকে ২২০টি ছাগল বিলি করা হয়েছে বিলি করার একদিনের মধ্য়েই ছাগলগুলো মরতে শুরু করেছে একে-একে এই পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে চাপানউতোর, তৃণমূল নেতারা আমলাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন আর  প্রাণী সম্পদ দফতরের তরফে হয় মুখে কুলুপ আঁটা হচ্ছে, নয়তো বলা হচ্ছে, সুস্থ ছাগলই তো বিলি করা হয়েছে

স্বনির্ভর করতে গ্রামের মানুষকে দেওয়া হল ছাগলআর কিছুদিনের মধ্য়েই ছাগলগুলো সব একে-একে মরতে শুরু করলপুরুলিয়ায় আপাতত এই ছাগল-মৃত্য়ুকে ঘিরেই শুরু হয়েছে চাপা অসন্তোষখোদ শাসকদলই আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মুখর হয়েছে সেখানে

কী ঘটেছিল?

স্থানীয় মানুষদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে গত ১৩ মার্চ পুরুলিয়ার ঝালদা দু-নম্বর ব্লকে সবমিলিয়ে ৪৪টি গোষ্ঠীকে পাঁচটি করে মোট ২২০টি ছাগল বিলি করা হয়অভিযোগ, বিলি করার পরেরদিন থেকেই একটা-একটা করে ছাগল মরতে শুরু করেআপাতত যেগুলো বেঁচেও আছে, সেগুলোও ধুকছে বাঁচার কোনও সম্ভাবনাই নেই এমতাবস্থায় শাসকদলের নেতারা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের বিরুদ্ধে তাঁদের বক্তব্য়, খোদ মুখ্য়মন্ত্রী জেলায় এসে বলে গিয়েছেন, ভালো মানের সুস্থ ছাগল যাতে বিলি করা হয় অথচ আমলারা দুর্বল ছাগল বিলি করছেন যাতে করে বদনাম হচ্ছে সরকারের

ঝালদা দু-নম্বর ব্লকের বড়তলিয়া গ্রামের দুজন, যাঁরা ছাগল পেয়েছেন, সেই নির্মল কুমার ও সহদেব কুমার মৃত ছাগল নিয়ে এদিন বিএলডিও-র কাছে হাজির হন। তাঁদের অভিযোগ, "প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর থেকে আমরা ছাগল নিয়ে বাড়ি নিয়ে গেলে দুটি ছাগল মারা যায়। বাকি তিনটি ছাগল বাচঁবে কিনা ঠিক নেই। এর থেকে ছাগল না দিলেই ভালো হতো।" এ বিষয়ে ঝালদা দু নাম্বার ব্লকের BLDO তাপস দাস গুপ্ত জানান, "আমার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কিছুই বলার নির্দেশ নেই।" ছাগল মৃত্যুর খবর যাতে প্রকাশ্যে না আসে তা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তিনি এক প্রকার ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, "যা বলার উচ্চ অধিকারিকরাই বলবেন।"

যদিও ঝালদা দু-নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অরুণ কুমার বিশ্বাস বলেন, "এবিষয়ে আমার কাছে কোনও অভিযোগ নেই। এ ধরনের অভিযোগ পেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। তবে গুণগতমান দেখেই কিন্তু ছাগল বিলি করা হয়েছে।"

এদিকে এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষিপ্ত জেলার শাসননেতারাতাঁদের কথায়, মুখ্য়মন্ত্রীর নির্দেশ ছিল ভালোমানের ছাগল বিলি করারআমলারা দুর্বল ছাগল বিলি করেছেনআর তার ফলেই এই ঘটনা ঘটেছেযাতে করে মুখ পুড়ছে দল আর সরকারেরপুরুলিয়া জেলা পরিষদ সদস্য তৃণমূল কংগ্রেসের রমেশ সিং ঘাটুয়াল তো সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ করেন আমলাদের বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, "যেখানে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে যে, স্বাস্থ্যবান সুস্থ ছাগল দিতে হবে, সেখানে সেই নির্দেশকে গ্রাহ্য না-করে এই দফতরের আমলারা নিম্নমানের ছাগল দিচ্ছেন। আমাদেরও কথাও শুনছেন না। এইভাবে যেমন মানুষকে হয়রান করছেন তেমনি সরকারকেও বদনাম করছেন। তাই এর তদন্ত হওয়া দরকার। কারণ এই কয়েকদিনে ৪০-৪৫ টি ছাগল মারা গেছে। বাকি যে সমস্ত ছাগল এখনও বেঁচে আছে সেগুলিও মারা যাবে বলে খবর পাচ্ছি।"