সংক্ষিপ্ত
মাধ্যমিক ফেল, সে-ই কিনা রাজ্য পুলিশের ডিএসপি! কলকাতার বুকে ধরা পড়ল মুর্শিদাবাদের যুবক।
মাধ্যমিকটাও পাস করতে পারেনি। অথচ, সেই কিনা কলকাতার বুকে ঘুরে বেড়াত নীল বাতি লাগানো গাড়ি চড়ে। কারণ, তার পরিচয়, রাজ্য পুলিশের ডিএসপি! অবশ্য, তার জারিজুরি বেশিদিন চলল না। ভুয়ো আইএএস অফিসার, ভুয়ো সিবিআই অফিসারের পর, শনিবার, খোদ পুলিশের ভিতরেই ভুয়ো অফিসার ধরা পড়ল। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হল মুর্শিদাবাদের যুবক মাসুদ রানা। অথচ, তার এই জালিয়াতির বিষয়ে কিচ্ছু জানত না বলে দাবি করেছে তার বাড়ির লোক এবং পাড়া-প্রতিবেশীরা। এই নিয়ে গ্রামে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
মুর্শিদাবাদের সোনাডাঙ্গা গ্রামের ছেলে মাসুদ রানা। বাবা মিনহাজুদ্দিন কৃষিকাজ করেন। তিন ছেলে মেয়ের সবার বড় মাসুদ। ছেলেকে পড়াশুনা শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করতে চেয়েছিলেন বাবা-মা। ভর্তি করে দিয়েছিলন স্থানীয় কোলান হাই স্কুলে। কিন্তু, মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আর স্কুল-মুখো হয়নি তাদের গুণধর ছেলে। তারপর, বলতে গেলে বাবার ঘাড়ে বসেই কাটিয়েছিল বেশ কয়েক বছর। বাবা-ভাই জমিতে হাড় ভাঙা খাটুনি খাটতেন। সে কৃষিকাজ তো দূরের কথা, তাদের জন্য একবেলা জমিতে খাবার পর্যন্ত নিয়ে যায়নি। মাসুদের ভাই আব্দুল ওয়াহাবই এই কথা জানিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের সোনাডাঙ্গা গ্রামে ধৃত মাসুদের বাড়ি, গ্রেফতারির খবর জানাাজানি হতেই বাড়ির সামনে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা
বছর পাঁচেক আগে মাসুদের বিয়ে দিয়েছিল বাড়ির লোকজন। যদি বিয়ে করে ছেলের মতি স্থির হয়। বিয়ের পর মাসুদের একটা ছেলেও হয়েছিল। কিন্তু, তাও কোনও কাজ সে করত না। এই নিয়েই শুরু হয়েছিল দাম্পত্য কলহ। বছর দুয়েক আগে সন্তান কোলে বাপের বাড়ি চলে যান সিরিনা। ওয়াহাব জানিয়েছে এরপরই তার দাদার কলকাতায় যাতায়াত শুরু হয়। কয়েকদিন পর থেকে বাড়ি আসা কমিয়ে দেয়। বাড়িতে সে জানিয়েছিল, কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে। এতদিন পর্যন্ত বাড়ির লোক তাই জানত। অথচ কলকাতায় সে ভুয়ো ডিএসপির পরিচয়ে অপকীর্তি করে বেড়াত। তাই শনিবার, মাসুদের গ্রেফতার হওয়ার খবরে বিস্মিত তার পরিবার এবং পাড়া প্রতিবেশী।
আরও পড়ুন - এ পথে চলতে পারে না গাড়ি, তাই ৬টি অটো-অ্যাম্বুল্যান্স তৈরি করলেন এই মহিলা ক্যাফে-মালিক
আরও পড়ুন - ভারত কি ড্রোন হামলার জন্য প্রস্তুত, কী জানালেন অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল নবীন নভলানি
আরও পড়ুন - বাংলাদেশেই তৈরি হবে চিনের টিকা - ভারতই দেখালো পথ, ঢাকাও কি হবে ইসলামাবাদ
পুলিশের হাতে বড় ছেলে ধরা পড়েছে জানা ইস্তক মুখে ভাত তোলেননি মাসুদের মা মাসুদা বিবি। সকালে নামাজ পড়ে ফেরার পথে খবরা পেয়েছিলেন বাবা মিনহাজুদ্দিন। তারপর থেকেই তিনি একেবারে নির্বাক হয়ে গিয়েছেন। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মাসুদকে বাইরে থেকে দেখে একেবারে সাদাসিধা, সহজ-সরল বলেই মনে হত। সে যে শেষমেষ এমন মারাত্মক কান্ড ঘটিয়ে বসেছে, তা এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
এদিকে, এই ঘটনার পিছনে অন্য কোনও মাথা আছে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন মাসুদের ভাই ওয়াহাব। তিনি জানিয়েছেন, মাসুদ শেষবার যখন বাড়িতে এসেছিল, সেইসময় বারবার করে রবি মুর্মু নামে একজনের কল আসছিল তার ফোনে। দু'দিন ধরে রবি মুর্মু ফোন করে গেলেও, মাসুদ সেই ফোন ধরছিল না। শেষে ওয়াহাবই মাসুদকে বলেন ফোনটা ধরতে। ওইপাশ থেকে কে কী বলেছিল, তা ওয়াহাব শুনতে পায়নি। তবে তার দাদা, ফোনের এইপাশ থেকে বলেছিল, 'আমি ওই কাজ আর করব না', এমনটাই দাবি করেছে সে। মাসুদ ধরা পড়ার পর থেকে সে আক্ষেপ করে চলেছে, সেইদিন যদি দাদাকে জিজ্ঞেস করত, কী কাজ না করার কথা বলছে সে, তাহলে হয়তো তার দাদাকে গ্রেফতার হতে হত না।