সংক্ষিপ্ত
নির্বাচন কমিশন যে হলফনামা দিয়েছে তাতে একেবারেই সন্তুষ্ট নয় আদালত। ওই হলফনামা আদালতের তরফে গ্রহণ করা হয়নি। এদিন রায়দান স্থগিত রাখে আদালত। পাশাপাশি বৃহত্তর বেঞ্চে এর শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছে।
ভবানীপুরে উপনির্বাচন (Bhabanipur By Election) না হলে রাজ্যে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে। এই দাবি তুলে নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission) চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী (H. K. Dwivedi Chief Secretary)। আর সেই বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। তারপরই ৩০ সেপ্টেম্বর ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন (By Election) হবে বলে জানিয়েছিন কমিশন। তা নিয়েই বৃহস্পতিবারই নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই জবাব দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, তার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন যে হলফনামা দিয়েছে তাতে একেবারেই সন্তুষ্ট নয় আদালত। ওই হলফনামা আদালতের তরফে গ্রহণ করা হয়নি। এদিন রায়দান স্থগিত রাখে আদালত। পাশাপাশি বৃহত্তর বেঞ্চে এর শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচন
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই তৃণমূল (TMC) ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তারপরই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কটাক্ষের শিকার হন তিনি। নির্বাচনের প্রচার মঞ্চ থেকেও একাধিকবার তাঁর দিকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা। আর তখন থেকেই ঠিক করেছিলেন তাঁর হাতের তালুর মতো পরিচিত ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে নয়, নির্বাচনে লড়াই করবেন নন্দীগ্রাম (Nandigram) থেকে। কারণ সেখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শুভেন্দু। তাই নির্বাচনে অন্যতম হেভিওয়েট আসন ছিল এটি। সেখানে জেতার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও ফল প্রকাশের পর সম্পূর্ণ হতাশ হতে হয় তাঁকে। ওই কেন্দ্রে শুভেন্দুর কাছে হেরে যান তিনি।
এদিকে রাজ্যের বাকি আসনগুলির মধ্যে বেশিরভাগেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল। তার ফলে বিপুল ভোট পেয়ে ফের ক্ষমতায় এসেছে ঘাসফুল শিবির। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছে মমতা। কিন্তু, এই পদের জন্য টিকে থাকতে গেলে ৫ নভেম্বরের মধ্যে যে কোনও আসন থেকে জিততে হবে তাঁকে। তাই ভবানীপুর আসন থেকেই উপনির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অন্যদিকে, নির্বাচনে এই আসনে তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করেছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, জয়ী হওয়ার পরই সেই আসনের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। আর সেই কারণেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভবানীপুর আসনে নির্বাচন করতে চাইছিল তৃণমূল। যদিও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনের প্রয়োজন নেই বলে যুক্তি দেখিয়েছিল বিজেপি। পরে মুখ্যসচিবের চিঠির প্রেক্ষিতে এই আসনে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করে কমিশন।
আরও পড়়ুন- 'মৃত মানুষকে নিয়ে নাটক করছে BJP', ভবানীপুরে প্রচারে এসে বিস্ফোরক ফিরহাদ
প্রশ্নের মুখে নির্বাচন কমিশন
এই নির্বাচন নিয়ে কমিশনকে একাধিক প্রশ্ন করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। তাঁর প্রশ্ন করেন, "কেন সাংবিধানিক সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যসচিব? মুখ্যসচিবের ভূমিকা ঠিক কী?" জবাবে কমিশনের তরফে উল্লেখ করা হয়, রাজ্যপালও এর আগে কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। শুনেই বিচারপতি রাজেশ বিন্দল প্রশ্ন করেন, "এবার কি রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যসচিবের তুলনা করবেন? কেন আপনারা একটাই কেন্দ্রকে বেছে নিলেন উপনির্বাচনের জন্য? বাকিগুলিতে কি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হত না?"
মুখ্যসচিবের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
পাশাপাশি মুখ্যসচিবের চিঠি দেওয়ার এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। মুখ্যসচিব প্রশাসনিক পদে থেকে নির্বাচনের জন্য কোনও চিঠি লিখতে পারেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কেন শুধু ভবানীপুরের ভোটের জন্যই আবেদন জানানো হল? বাকি কেন্দ্রে নির্বাচন বাকি থাকা সত্ত্বেও কেন সে সব কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন।
আরও পড়ুন, Mainul Haque: অভিষেকের 'হাত' ধরেই তৃণমূলে যোগ দিলেন মইনুল হক
কেন ইস্তফা দিলেন শোভনদেব?
ভবানীপুর কেন্দ্রে কেন দ্বিতীয়বার নির্বাচনের প্রয়োজন হচ্ছে তা নিয়েও মামলার শুনানিতে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। এই আসন থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। পরে ওই আসন তিনি ছেড়ে দেন। এখন সেই আসনেই লড়বেন মমতা। এই প্রসঙ্গেই বিচারপতির প্রশ্ন, "কেন আসন ছাড়লেব শোভনদেব? একটা আসনের জন্য কতবার টাকা খরচ হবে?"
অন্যদিকে, ভবানীপুর বিধানসভা উপনির্বাচন নিয়ে করা জনস্বার্থ মামলায় একটি নতুন প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে, যার শুনানি আগামী দিনে চলবে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী দিনে বৃহত্তর স্বার্থে এই শুনানি হবে বলেও জানিয়েছে হাইকোর্ট।