সংক্ষিপ্ত
দীপাবলির নিশি রাতে মায়ের কোন পুজো হয় না। কারণ কথিত রয়েছে আকালিপুরের গুহ্যকালী নিশি রাতে সামনের শ্মশানে লীলা করেন।
কালীমূর্তি (Kali Idol) প্রতিষ্ঠিত থাকলেও কালীপুজোর রাতে(Dipabali) এই মন্দির (Temple) বন্ধ (Closed) থাকে। শুনতে অবাক লাগলেও, এমনই ঘটে নলহাটির(Nalhati) আকালিপুরের কালীমায়ের মন্দিরে। দীপাবলির নিশি রাতে মায়ের কোন পুজো হয় না। কারণ কথিত রয়েছে আকালিপুরের গুহ্যকালী নিশি রাতে সামনের শ্মশানে লীলা করেন। এমনই ব্যতিক্রম কালী মন্দির হল বীরভূমের ভদ্রপুর আকালিপুরের মহারাজা নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত গুহ্যকালি মন্দিরে।
বীরভূম হল ‘তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান। রামপুরহাট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং নলহাটি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ভদ্রপুর গ্রামের কাছে অবস্থিত, প্রায় ৩০০ বছর প্রাচীন দেবী 'গুহ্যকালিকা' (দেবী গোপন কালী) মন্দির। অষ্টভুজাকৃতির এই মন্দির ভদ্রপুর রাজ বাড়ির পুত্র মহারাজা নন্দকুমার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা যায়। এই বিখ্যাত 'কালীমূর্তি'তে কোনও শিবের স্থান নেই। দেবীর শরীরে সাপ জড়িয়ে রয়েছে।
Kalipuja 2021- ধুপধুনোর গন্ধে মা কালীকে অনুভব, বয়রা গাছের নীচে শুরু হল কালীপুজো
কিংবদন্তি অনুসারে, ‘সর্পাসিনী’ দুই হাত, নর-মুণ্ড-মল্লিনী দেবী ‘মগধরাজ জরাসন্ধ’ পুজো করতেন। পরবর্তীকালে, এটি কাশীর রাজা চেথ সিংয়ের প্রাসাদে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পুজো করা হয়। ব্রিটিশ গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস রাজা চেথ সিংয়ের প্রাসাদ লুঠ করার সময় অনেক সম্পত্তি সহ মূর্তিটি লুঠ করেন। গঙ্গা দিয়ে যাত্রা করার সময়, কলকাতা যাওয়ার পথে দেওয়ান মহারাজা নন্দকুমার মূর্তিটি উদ্ধার করেন। তারপর ব্রহ্মানী নদীর তীরে, আকালিপুর গ্রামের একটি বটবৃক্ষের পাশে এই দেবীর পূজা করার সিদ্ধান্ত নেন।
মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন মহারাজা নন্দকুমার। কিন্তু মন্দিরের কোণগুলি বজ্রপাতে ভেঙে পড়ে। মন্দিরের চূড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এরই মধ্যে মহারাজ নন্দকুমারকে হেস্টিংয়ের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অকালমৃত্যুতে মন্দিরের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মৎস্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ। ২০০৪ সালের ২০ জানুয়ারী মন্দিরের অসমাপ্ত শিখর সম্পূর্ণ করা হয়।
Kalipuja 2021- এই গ্রামে আলো জ্বালেন মা মৌলিক্ষা, মা কালীর সঙ্গে পুজো পান বামাক্ষ্যাপাও
মন্দিরের পুরোহিত দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের এখানে মা বসে রয়েছে সাপের কুণ্ডলীর উপর। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী মা প্রতি রাতে মন্দির থেকে বেরিয়ে লীলা করেন। তাই প্রতিদিন রাতে মাকে শয়ন করিয়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কালী পুজোর দিনও তার ব্যতিক্রম ঘটে না। তাই কালী পুজোর রাতে সর্বত্র যখন পুজো পাঠ চলে তখন আমাদের মন্দির থাকে বন্ধ"।
মন্দিরের সেবাইত বিজন রায় বলেন, "এখনে প্রাচীন রীতি মেনে পুজো দেওয়া হয়। তাই কালী পুজোর রাতে এখানে কোন পুজো হয় না"। উল্লেখ্য, কালীপুজো মানেই প্রদীপের সজ্জা, আলোর রোশনাই আর বাজির শব্দ। এই একটা দিন ছোট-বড় সকলেই সকল দুঃখ ভুলে আনন্দে মেতে ওঠেন। মা কালী যেমন পুজিত হন বাঙালি ঘরে, তেমনই অবাঙালি পরিবারগুলিতে পালিত হয় দিওয়ালি। সেখানে পুজিত হন ধনদেবী।
KaliPuja 2021-মুসলিম জমিদারের হাতে শুরু হয় তিন বোনের বুড়ি কালী পুজো
এমনকী, বহু বাঙালি পরিবারও এই দিন লক্ষ্মী দেবীর পুজো হয়ে থাকে। তবে, করোনা অতিমারীর প্রকোপে এই বছরও দুর্গাপুজো কেটেছে কিছুটা আশঙ্কায়। কালী পুজো অবধি ঠিক কী অবস্থা থাকবে না নিয়ে কিছুটা ভয় থেকেই যাচ্ছে। তাও সকলেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সতর্কতা মেনে।
৪ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার কালীপুজো। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষে অমাবস্যা তিথিতে পুজিত হবেন মা। এদিন অমাবস্যা তিথি পড়ছে ৪ নভেম্বর সকাল ৬.৩০ মিনিটে। আর অমাবস্যা থাকবে ৫ নভেম্বর মধ্যরাত মানে ২.৪৪ মিনিট পর্যন্ত।