সংক্ষিপ্ত
কেন্দ্রের তরফ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকেও। বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছিল মুর্শিদাবাদ, মালদা, দিনাজপুর ও নদিয়া জেলার পুলিশ সুপারদের।
দেশ জুড়ে এখন উৎসবের মেজাজ। বড়দিন, নববর্ষ কাটিয়ে অবশ্য এবার কাজে ফেরার পালা। তবে এরই মধ্যে মিলেছে ভয়াবহ খবর। বড়দিন থেকে শুরু করে নববর্ষ পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের টহলদারিও বাড়ানো হয়েছে। এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলেই স্থানীয় থানায় খবর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বম্ব স্কোয়াডকেও। তবে এরই মাঝে নাকি পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জায়গায় বিস্ফোরণের প্ল্যান কষেছিল জঙ্গিরা।
অসম পুলিশের এসটিএফ- এর তরফে বিষয়টি ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগকে। কেন্দ্রের তরফ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকেও। বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছিল মুর্শিদাবাদ, মালদা, দিনাজপুর ও নদিয়া জেলার পুলিশ সুপারদের।
মুর্শিদাবাদ ও মালদহের তিনটি পর্যটন কেন্দ্রে হামলা করার পরিকল্পনা করেছিলেন বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠী আনসারুল্লাহের বাংলা শাখা। ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য ধৃত সাজিবুল ইসলামকে জেরা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে সূত্রের খবর। অসম পুলিশ এই বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে জানিয়েছে। হামলা করতে কী পরিকল্পনা করা হয়েছিল তারও আভাস পাওয়া গেছে। কোন জঙ্গিকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা জানা গিয়েছে। অসম পুলিশের জেরায় ধৃত সাজিবুল স্বীকার করেছে নতুন বছর উপলক্ষে ভিড়ে ঠাসা এই রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। মুর্শিদাবাদ এবং মালদহে সীমান্ত এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে নাশকতা ঘটিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে ওপার বাংলায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের।
মহিলাদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা দলের প্রভাব বিস্তার করা, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পরিকল্পনা বাস্তবায়ণে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা, আই এস জঙ্গিদের কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আত্মঘাতী মডিউলে সদস্যদের বাছাই করা, ধর্মীয় শিক্ষার নামে টোপ দিয়ে মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকার কিশোরদের মগজ ধোলাই করে জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখানোর মতো কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল।
ধৃত জঙ্গি জানিয়েছে, গত অক্টোবরে বাংলাদেশে ভারত লাগোয়া একটি সীমান্তবর্তী গ্রামে আনসারুল্লাহ বাংলা দলের প্রধান জসিম উদ্দিন রহমানির নেতৃত্বে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে হামলার দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছিল। কাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সাজিবুল জেরায় তা জানিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ নাশকতা ঘটাতে আত্মঘাতী বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের।
জেরায় ধৃত জঙ্গি জানিয়েছে, গত অক্টোবরে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভারত লাগোয়া একটি সীমান্তবর্তী গ্রামে আনসারুল্লাহ বাংলা দলের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানির সঙ্গে বৈঠক করেছিল শাব। তাকেও দিন কয়েক আগে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই আরও তিন জনকে ইতিমধ্যেই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানতে পেরেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বৈঠকে উপস্থিত ছিল আব্বাস আলি ও সাজিবুল। সেখানেই হামলার দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছিল।
ধর্মীয় শিক্ষার নামে টোপ দিয়ে মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকার কিশোরদের মগজধোলাই করে জঙ্গি সংগঠনের নাম লেখানোর দায়িত্ব ছিল আব্বাসের সহযোগী মনিরুল শেখের। আর মুস্তাকিনের কাঁধে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংগঠন বিস্তারের কাজে সাজিবুল ভিন্রাজ্য কিংবা দেশের বাইরে থাকলে স্থানীয় এলাকায় মডিউলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার।
জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী করতে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় সংগঠন প্রধানের বক্তৃতার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। অসম পুলিশের এসটিএফ- এর সদস্য প্রধান মহন্ত দাবি করেন, মুর্শিদাবাদকে ভিত্তি করে আনসারুল্লাহ বাংলা দল সারা দেশে জাল তৈরি করেছিল। স্লিপার সেলগুলিকে সক্রিয় করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। ভিড়ে ঠাসা এলাকাগুলি ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য।