সংক্ষিপ্ত
পুলিশের বক্তব্য, “সে ফর্মাল জামাকাপড় পরে ঘুরে বেরাত এবং যেসব আবাসনে রক্ষী বেশি নেই, সেগুলির ভেতরে গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ত। তার গাড়িতে মাইনে করা ড্রাইভারও রাখা ছিল।”
সল্টলেকের সৌরভ আবাসনে দুই বছরের পুরনো চুরির ঘটনায় সোমবার বিধাননগর পুলিশ একজন হাই-ফ্লাইং চোরকে করেছে। সেডান গাড়িতে ঘোরাফেরা করত এই হাই প্রোফাইল চোর। কর্পোরেট ফর্মাল পোশাক পরে ২৫ বছর ধরে প্রায় ১৪ টি রাজ্যে ১ হাজার ২০০টি চুরির ঘটনা ঘটানো এই মূর্তিমানের নাম নাদিম কোরেশি, বয়স ৪৫ বছর। মুম্বই এবং পুনেতে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক নাদিম, তাঁর ছেলেমেয়েরা প্রত্যেকে নামীদামি স্কুলে পড়াশোনা করে। গাজিয়াবাদ পুলিশ তাকে তিহার জেল থেকে বাংলায় নিয়ে এসেছে।
“দেশ জুড়ে চুরির মামলায় মোস্ট ওয়ান্টেড ছিল। চুরির কায়দা ছিল অভিনব এবং এজন্য তাকে অপরাধের দৃশ্যে সহজে ধরা যেত না। সৌরভ আবাসনের দুটি ফ্ল্যাটে ১২ লাখ টাকার একটি ডাকাতি করার পরে আমরা তাকে ২০২১ সালে প্রথম খুঁজে পাই। কোনা এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত আমরা তাকে ট্র্যাক করেছিলাম, কিন্তু তারপরে আমরা তাকে হারিয়ে ফেলি।” জানিয়েছেন নগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
অফিসাররা অবশেষে জানতে পারেন যে, রাজস্থান পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে এবং অপরাধের সাথে তার জড়িত থাকা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ কর্তারা কলকাতা থেকে সেখানে পৌঁছন। “গাজিয়াবাদের একটি চুরির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে তাকে তিহার জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ২০২১ সাল থেকে সে সেখানেই বন্দী ছিল। আমরা জেল কর্তৃপক্ষের সামনে একটি প্রোডাকশন রিমান্ড রেখেছিলাম, শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে আমরা অনুমতি পাই এবং গাজিয়াবাদ পুলিশ তাকে বাংলায় নিয়ে আসে। সল্টলেক আদালত তাকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে।”
পঞ্চম শ্রেণি অবদি পড়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল নাদিম। গাজিয়াবাদে তার নিজ গ্রামে গবাদি পশু চুরি করে অপরাধের জগতে প্রবেশ করে সে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে এলাকার ত্রাস হয়ে ওঠে। কয়েক বছর ধরে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান, ওড়িশা এবং অন্যান্য রাজ্যে চুরি করে বেরিয়েছে। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের নারায়ণপুর এবং বাগুইআটিতে একই ধরনের চুরির অপরাধ করে পালিয়ে গিয়েছিল। পুলিশের বক্তব্য, “সে ফর্মাল জামাকাপড় পরে ঘুরে বেরাত এবং যে সব আবাসনে রক্ষী বেশি নেই, সেগুলিতে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করত। তার গাড়িতে মাইনে করা ড্রাইভারও রাখা ছিল। বিল্ডিংয়ে ঢুকে সে একেবারে ওপর তলা পর্যন্ত লিফট নিয়ে যেত। সেখান থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকের তালাবদ্ধ ফ্ল্যাটগুলি দেখতে যেত। যেগুলো অনেকদিন ধরে তালাবদ্ধ থাকত না, সেই ফ্ল্যাটগুলিকে সে লক্ষ্যবস্তু করত।”
এ পর্যন্ত নাদিম কুরেশি অন্তত আটবার গ্রেফতার হয়েছে এবং সর্বশেষ ২৩টি মামলায় সে ঘোষিত অপরাধী। এমনকি “নাদিম গ্যাং” নামে একটি দলকে চুরির শিক্ষাও দিচ্ছিল সে, এই দলের সদস্যরা একইভাবে চুরি করে বেরায়।