বৈঠক শেষঃ 'আন্দোলন শুরু করলে শেষও করতে হবে! তোমাদের ভালোবাসি', বললেন মমতা
- FB
- TW
- Linkdin
বৈঠকের শুরুতেই আলোচনা শুরু করেন ডাক্তাররা (Junior Doctors)
কথা বলছেন তারা।
সোমবার বিকেল ৪.৩০ মিনিট নাগাদ নবান্নে পৌঁছন জুনিয়র ডাক্তাররা
মুখ্যসচিব তাদের বিকেল সাড়ে ৪টের মধ্যে নবান্নে পৌঁছতে বলেছিলেন। ঠিক বিকেল ৫টা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ছিল এদিন।
এদিন নবান্নে নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে গেলেন আন্দোলনকারীরা
তাই তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরেই শুরু হয়ে যায় বৈঠক। শুধু তাই নয়, বৈঠকের লাইভ সম্প্রচারও শুরু হয়ে যায়।
আলোচনা শুরু হয়ে গেছে
আন্দোলনকারী চিকিৎসক আসফাকুল্লা নাইয়া জানান, “এর আগে প্রতিবারই বৈঠকের আগে কম সময় পেয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। সেই কারণেই, নিজেদের মধ্যে জিবি করে বৈঠক সেরে আসতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছিল।"
অন্যদিকে, জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদারের কথায়, “আরজি কর-কাণ্ড ঘটেছে প্রতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার কারণে।"
স্টেট টাস্ক ফোর্সে চিকিৎসকদের সংখ্যা বৃদ্ধির আর্জি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসক দেবাশিস হালদার
তিনি এই কমিটিতে জুনিয়র ডাক্তারদের রাখার দাবি তুলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘কমিটি কখনই সিলেক্টেড নয়, ইলেক্টেড হতে হবে।’’
এদিকে আবার নবান্নের এই বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমও। জুনিয়র ডাক্তাররা যে ১০ দফা দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ করছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল এই নারায়ণস্বরূপ নিগমের অপসারণ।
বৈঠকে উঠে এল ‘থ্রেট কালচার’-এর প্রসঙ্গ। এই প্রসঙ্গে বিরুপাক্ষ এবং অভীকের নাম নিতেই থামিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা (Mamata Banerjee)। তাঁর কথায়, ‘‘উপস্থিত নেই যখন, তখন নাম নেবেন না। নাম নিলে তো তাঁকেও তাঁর কথা বলার জায়গা দিতে হবে।"
গত ১৪ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুড়ের অভিযোগে ধৃতদের জামিন দেওয়া হয়েছে
সেই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মতামত জানতে চাইলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘এটা নতুন দাবি’’। চিকিৎসকেরা পাল্টা জানান, এটা তাদের দাবি নয়। মতামত জানতে চাইছেন তারা।
এরপরেই নবান্নে উপস্থিত জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে চা পরিবেশন করা হল
আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসচিবের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। আপনি প্রমাণ চেয়েছেন। স্যারের হাত দিয়ে বেশ কিছু চিঠি বেরিয়েছে।’’ পাল্টা মমতা বলেন, ‘‘একটা মানুষ অভিযুক্ত কি না, প্রমাণ না পেলে তাঁকে অভিযুক্ত করা যায় না।’’ ফলে, মতপার্থক্য তৈরি হয়।
এরপরেই নবান্নে উপস্থিত জুনিয়র ডাক্তারদের চা পরিবেশন করা হল।
মুখ্যসচিব কী বললেন?
মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, “ইতিমধ্যেই অনেকটা কাজ এগিয়ে গেছে। প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজে যাতে নিরাপদ পরিবেশ থাকে, তা আমাদেরও লক্ষ্য। আমরা স্টেট লেভেল টাস্ক ফোর্স করেছি। গ্রিভ্যান্স রিড্রেসল সেল গঠন করা হয়েছে। ইমেইল আইডি দিয়েছি, যেখানে অভিযোগ জানাতে পারবেন আপনারা।"
মুখ খুললেন মমতা
“কোথায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা যায় আর কোথায় যায় না, তা নিয়েও স্পষ্ট জানানো হবে আপনাদের। কেউ কেউ ইচ্ছা মতো কাউন্সিল তৈরি করছেন। কাজটা তো তোমরাই করবে। তাই তোমাদের মতামতকে অবশ্যই স্বাগত জানাই।অনেক অধ্যক্ষ এবং সুপার নিজেদের কাজ ঠিকমতো করেন না। তোমাদের সঙ্গে আমিও একমত। তারা শুধু রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। আগে ডাক্তারদের সংখ্যা ছিল মাত্র চার হাজার। আমরা এসে তা বৃদ্ধি করে ১৭ হাজার করেছি। মোট ৩৫টি মেডিক্যাল কলেজ করেছি। পেডিয়াট্রিক বিভাগ এখন প্রায় ৬০০। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিও হয়েছে। সেগুলো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র।"
মুখ্যমন্ত্রী আরও যোগ করেন, “আগে ডাক্তারের সংখ্যা ছিল চার হাজার। আমরা এসে তা বৃদ্ধি করে ১৭ হাজার করেছি। ৩৫টি মেডিক্যাল কলেজ করেছি। পেডিয়াট্রিক বিভাগ প্রায় ৬০০। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়েছে। ওগুলো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। সেখানে সব চিকিৎসক দিলে হাসপাতাল চলবে কী করে? আমি একদমই চাইনা যে র্যাগিং হোক।"
ওদিকে এখনও অনশন চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “আরজি করের প্রিন্সিপাল কেন ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করলেন? কী ভাবে নিজে সিদ্ধান্ত নিলেন? রাজ্য সরকারকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না? এটা থ্রেট কালচার নয়? তদন্ত না করে কাউকে সাসপেন্ড নয়। ইচ্ছেমতো একদম কাজ করবেন না। কেউ কাউকে থ্রেট করবেন না। আমি ক্ষমতায় বলে থ্রেট করতে পারি না কাউকে।"
পাল্টা জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত জানান, "কমিটি তদন্ত করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপর তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এইভাবে তাদেরকে না জানিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে না। প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও আলোচনা না করে সাসপেন্ড কেন?’’
ওদিকে মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, সব দাবি মেনে কাজ মিটতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।
মুখ্যমন্ত্রী সাসপেনশন নিয়ে জানালেন, তদন্ত করা হবে এই বিষয়ে
কোনওরকম পক্ষপাতিত্ব করা চলবে না। আগামী দিনে দেখা হবে বিষয়টি। সরকারকে না জানিয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কীভাবে তৈরি করা হল এবং কীভাবে সাসপেন্ড করা হল তাদের, সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে মমতা বলেন, রোগী কল্যাণ সমিতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি থাকবে। সেইসঙ্গে, তিনি যুক্ত করেন, ‘তোমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে, বোনেদের দেখে রাখার। বোনেদের দায়িত্ব রয়েছে ভাইদের দেখে রাখার।’’
অপরদিকে, সুপ্রিম কোর্টে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবীকে তীব্র কটাক্ষ করলেন তিনি। বললেন, কোর্টে ওই মহিলা আইনজীবী দাবি করেছেন যে, রাজ্যের হাসাপাতালে তুলোও পাওয়া যায় না। এরপরেই তিনি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের প্রশ্ন করেন, ‘‘এটা কি সত্যি? এতে তো রাজ্যের মুখ পুড়ল।’’
মমতার অভিযোগ, “রঙ কিংবা পরিচয় জানার দরকার নেই। যদিও আমি জানি সব। ৫৬৩ জন আন্দোলন চলার সময় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করে টাকা নিয়েছেন।’’ তাঁর কথায়, জুনিয়র ডাক্তারদের স্ট্রাইকের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। জনগণের টাকা পুরো অন্য জায়গায় চলে গেছে। তিনি বলছেন, "তোমরা সাধ্যমতো অনশন করেছ, ভাল করেছ। আমি ২৬ দিন টানা অনশন করেছি। কেউ আসেনি। আমি মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকে পাঠিয়েছি। রোজ খবর নিয়েছি তোমাদের। ঘণ্টায় ঘণ্টায় রিপোর্ট নিই আমি।’’
আন্দোলনকারী ছাত্রীর অভিযোগ তুলেছেন
টাস্ক ফোর্স কী কাজ করছে এবং সেই দলের সদস্য কতজন, তা নিয়ে কিছুই তারা জানেন না। ওদিকে দেবাশিস বলেন, টাস্ক ফোর্সে সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। শুধু তাই নয় অনিকেত বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। ‘থ্রেট কালচার’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক অভিযুক্তের পরীক্ষার খাতা পরখ করা হলে দেখা যাবে, তিনি ১০ নম্বরও পাননি। অথচ পদক পেয়ে বেরিয়ে গেছেন। এমনকি, হাউজ স্টাফও হয়েছেন। মমতা তার পাল্টা বলেন, অনেকের বিরুদ্ধেই অনেক অভিযোগ রয়েছে।
জুনিয়র ডাক্তারদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী
তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সরকার কীভাবে কাজ করবে? আমার কাছে একটি পরিবার আসার কথা। তাদেরও মেয়ে মারা গেছেন। তাই আমায় যেতে হবে। আন্দোলন শুরু করলে শেষও করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের দাবিতে ২১ দিন ধর্না দিয়েছিলাম। সিঙ্গুর নিয়ে আমি ২৬ দিন অনশন করেছি। তখন কিন্তু কেউ আসেনি। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ভালবাসতেন বলে তিনি এসেছিলেন। তোমাদেরও আমি ভালোবাসি। তাই আলোচনায় কোনও ফাঁক রাখা হয়নি। মন খুলে কথা বলেছ সবাই।’’
ওদিকে স্টেট টাস্ক ফোর্সের মতো কলেজেও একটি কমিটি গড়ার ডাক জুনিয়র ডাক্তারদের। সেইসঙ্গে, কলেজস্তরে র্যাগিংয়ের অভিযোগ এলে কে খতিয়ে দেখবে? অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি নাকি টাস্ক ফোর্স? এবার সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
আন্দোলনকারী এক মহিলা চিকিৎসক বললেন ‘‘আন্দোলন আপনার থেকেই শিখেছি।’’ মমতা জানালেন, তিনি যখন অনশন করেছেন, প্রশাসনের তরফ থেকে কেউ আসেননি। নবান্নের তরফ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল যে, ৪৫ মিনিটের বৈঠক হবে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি পুরোটাই বদলে গেল। প্রায় ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটের বৈঠক শেষ হল কিছুক্ষণ আগে।