সংক্ষিপ্ত
প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘অ্যাসিড খাওয়ার কারণে’ তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, তাহলে নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে কেন ফ্ল্যাটের দিকে ইশারা করলেন ওই মহিলা?
ভুয়ো আদালতে হাজির হতে বাধ্য করার আট ঘন্টা পরে বেহালার বড়িশার পূর্বপাড়ায় ৪৫ বছর বয়সী মহিলার রহস্যজনক মৃত্যু। স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে ২২ বছর ধরে চালানো মুদি দোকানের মালিকানা থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে তাঁকে একটি নথিতে স্বাক্ষর করানো হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় প্রোমোটার এবং ফ্ল্যাট মালিকদের ষড়যন্ত্রের ফলেই এই মৃত্যু বলে দাবি করেছেন মহিলার স্বামী বিরেন্দর সাউ। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ধৃতরা সকলেই ওই মহিলার বাড়ির পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এবং সেখানেই ভুয়ো আদালতের আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
সোমবার দুপুর সাড়ে তিনটের দিকে লক্ষ্মী দেবী সাউ নামের ওই মহিলাকে তাঁর দোকানের কাছে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘অ্যাসিড খাওয়ার কারণে’ তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি (অপরাধ বিভাগ) মুরলিধর শর্মা নিশ্চিত করেছেন যে, অ্যাসিড খাওয়ার কারণেই নিহতের মৃত্যু হয়েছে।
মহিলার মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী বীরেন্দর তাঁদের পাশের বিল্ডিংয়ের তিন বাসিন্দার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এঁরা হলেন ৬৪ বছর বয়সী কিশোর কুমার গুপ্ত, ৪৮ বছর বয়সী সমীর চক্রবর্তী এবং ৪৯ বছর বয়সী নকুল চন্দ্র শি। বিরেন্দর সাউ অভিযোগ করেছেন যে, এই তিনজনই এর আগে তাঁর স্ত্রীকে ‘ভয়ানক পরিণতি’-র হুমকি দিয়েছিল এবং এরাই পরবর্তীকালে তাঁকে হত্যা করেছে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হরিদেবপুর পুলিশ অপরাধমূলক হুমকি দেওয়া ও হত্যা করার মামলা নথিভুক্ত করেছে এবং বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার ধৃতদের আলিপুর আদালতে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিসি (বেহালা) সৌম্য রায়। এই ঘটনায় প্রতিরোধের কোন প্রাথমিক লক্ষণ না থাকলেও, পুলিশ অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে যে তারা লক্ষ্মী দেবীকে অ্যাসিড খাওয়াতে বাধ্য করেছিল কিনা।
“২০১০ এবং ২০১২ সালের মধ্যে আমাদের বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আমরা দোকানটা বিক্রি করব এবং স্থানান্তর করব কিনা। তখন দোকানটিতে খড়ের চাল ছিল। প্রায় সাত মাস আগে, আমরা এটাকে পাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যে মুহূর্তে আমরা কংক্রিটের ছাদ তৈরির চেষ্টা করি, তখনই এরা হস্তক্ষেপ করে। পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরাও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছি,” জানিয়েছেন নিহতের কন্যা খুশি কুমারী সাউ ওরফে পুষ্পা। একটি কংক্রিটের ছাদ নির্মাণের জন্য নাগরিক সংস্থা থেকে একটি পরিকল্পনা অনুমোদন প্রয়োজন।
পুষ্পা জানান, আমাদের পরিবারকে পাশের বিল্ডিংয়ে একটি মিটিংয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছিল, যেখানে লক্ষ্মী দেবীকে কিছু নথিতে সই করানো হয়। “আমার মা বলেছিলেন তিনি সম্পত্তি ছাড়বেন না। সোমবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে আমরা একজন প্রতিবেশীর কাছ থেকে ফোন পাই যে, আমার মা রাস্তায় পড়ে আছেন এবং তাঁকে খুব অসুস্থ দেখাচ্ছে। আমরা সেখানে ছুটে গিয়ে দেখি যে, মা ফ্ল্যাটের দিকে ইশারা করছেন এবং বোঝাতে চাইছেন যে তিনি কিছু খেয়ে ফেলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়। তিনি সেখানেই মারা যান,” পুষ্পা বলেন।
ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা দাবি করেছেন যে তাঁরা কেবল অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং কোনও ভুয়ো কোর্টের আয়োজন করা হয়নি। এক বাসিন্দার দাবি, “ওদের একটি টয়লেট ছিল, যেটা ফুটো হয়ে গিয়েছিল। সেটা থেকে বর্ষাকালে গোটা এলাকায় নোংরা উপচে পড়ত। আমরা সেটা মেরামত করতে বলেছি। আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং কেউ ওনাদের চাপ দেয়নি। আমরা ওনার মৃত্যুর সাথে কোনভাবেই জড়িত নই।”
মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আঞ্চলিক বিক্ষোভকারীরা ওই বিল্ডিংয়ে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে, এই ভয়ে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা গেট বন্ধ করে রেখেছেন। তবে, বিক্ষোভের বিষয়টি পুলিশের তরফে অস্বীকার করা হয়েছে।
‘তৃণমূলি সন্ত্রাস’-এর পরেও বাংলায় বিজেপির লড়াই প্রশংসনীয়: দলের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে মোদীর বার্তা
রাজ্যের সমস্ত উপাচার্যকে নয়া রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের আহ্বান, মঙ্গলবার রাজভবনে বৈঠক
অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে কত বাড়ল জ্বালানির দাম? দেখে নিন আজকের রিপোর্ট