সংক্ষিপ্ত

বৈঠকে মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস অনেক আন্দোলনের ফসল। অনেক যুদ্ধের পর দল এই বটবৃক্ষের জায়গায় পৌঁছেছে। পশ্চিমবঙ্গই তাঁদের সবকিছু। বাংলাই তৃণমূলকে সবকিছু দিয়েছে। বাংলাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। 

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী (West Bengal Chief Minister) তিনি। আর তার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের দলীয় সংগঠনের রাশও নিজের হাতে তুলে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এখন থেকে বাংলার সংগঠন দেখবেন তিনি নিজেই। বৃহস্পতিবার দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। ২ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরে (Netaji Indoor) তৃণমূলের (TMC) সাংগঠনিক নির্বাচন রয়েছে। সেখানে দলের চেয়ারপার্সন (Chair person) হিসেবে নির্বাচিত হবেন মমতা। আর তার আগে এই বার্তা দিতে দেখা গেল তাঁকে। এই পরিস্থিতিতে যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

বৈঠকে মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস অনেক আন্দোলনের ফসল। অনেক যুদ্ধের পর দল এই বটবৃক্ষের জায়গায় পৌঁছেছে। পশ্চিমবঙ্গই তাঁদের সবকিছু। বাংলাই তৃণমূলকে সবকিছু দিয়েছে। বাংলাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশিই সাংসদদের বৈঠকে স্পষ্টভাবে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, দলীয় দফতরে বা প্রকাশ্যে বসে দল সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা চলবে না। যদি কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকে, তা দলের অন্দরেই জানাতে হবে। সাংসদদের কোনও সমস্যা থাকলে তা জানাতে হবে লোকসভায় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Sudip Banerjee)। রাজ্যে বিধায়ক বা অন্য নেতাদের কোনও সমস্যা থাকলে তা জানাতে হবে সুব্রত বক্সিকে (Subrata Bakshi)।

আরও পড়ুন- 'ঘোরাফেরার স্বাধীনতা নেই রাজ্যে', রাজ্যপাল ও মানবাধিকার কমিশনকে চিঠি শুভেন্দুর

বৃহস্পতিবারের এই ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রায় সব সাংসদই। মমতার সঙ্গে ছিলেন অভিষেক (Abhishek Banerjee), সুদীপ এবং সুব্রত বক্সি। অভিষেক গোয়া থেকে ফিরে বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি এসে বৈঠকে যোগ দেন। বাকিরা যোগ দেন ভার্চুয়ালি। বাংলার বিভিন্ন জেলায় আসন্ন পুরভোট নিয়েও বৈঠকে নির্দেশ দেন মমতা। জানান, সাংসদদের প্রার্থী বা ওই সংক্রান্ত কোনও মতামত বা বক্তব্য থাকলে তাঁরা যেন পার্থ এবং সুব্রত বক্সির সঙ্গে কথা বলেন। মমতা নিজে তা নিয়ে ওই দুই নেতার সঙ্গে পরে কথা বলে নেবেন বলেও জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন- 'কমিউনিস্টরা কাউকে ওপরে উঠতে দেয়নি, বুদ্ধদেবকেও পদ্মশ্রী নিতে দিল না', বিস্ফোরক দিলীপ

প্রসঙ্গত কয়েকদিন ধরেই প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে নানারকম মন্তব্য করে চলেছিলেন দলের নেতা-মন্ত্রীরা। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বভারতীয় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেকের ‘ব্যক্তিগত মতামত’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। একমাত্র মমতাকেই তাঁর ‘নেতা’ হিসেবে দাবি করে কল্যাণ বলেছিলেন, অন্য কাউকে তিনি নেতা মানেন না। এও বলেছিলেন, "গোয়া, ত্রিপুরায় অভিষেক সাফল্য পেয়ে দেখান! তার পর তাঁকে নেতা বলে মেনে নেব!" এনিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই দলের মধ্যে জলঘোলা হয়েছিল। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নেমেছিলেন দলের মহাসচিব তথা তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর হস্তক্ষেপে কিছুটা হলেও এই সমস্যা থেমে যায়। এনিয়ে গোয়া সফরেও প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। 

আরও পড়ুন- 'পুরভোটে কুঁড়ি হবে, পদ্ম ফুটবে না', ‘মায়ের ডাকে’ তারাপীঠে পুজো দিয়ে BJP-কে খোঁচা অনুব্রতর

আর এই পরিস্থিতির মাঝেই বৃহস্পতিবার সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকটি ডাকেন মমতা। সেখানে মমতা একদিকে যেমন বলেছেন, "দলের দফতরে বসে বা প্রকাশ্যে দল বা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করবেন না। যা বলার দলীয় মঞ্চে বলুন।" কারণ, সাম্প্রতিক বিতর্কের সময় কয়েকজন সাংসদ বিভিন্ন সময় দিল্লিতে দলীয় কার্যালয়ে, সংসদে তৃণমূলের কার্যালয় এবং সেন্ট্রাল হলে বসে অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। আর এই মন্তব্যের মাধ্যমে তাঁদেরই মমতা বার্তা দিয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। পাশাপাশিই, তিনি এও বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাই দলের অগ্রাধিকার। বাংলার বিষয় তিনিই বুঝে নেবেন। 

এদিকে সংসদের বাজেট অধিবেশনের মধ্যেই তৃণমূলের সাংগঠনিক ভোটের আয়োজন করা হবে। ফলে ওই ভোটে অংশ নেওয়ার জন্য বাজেট অধিবেশন ছেড়ে বাকি সাংসদরা কলকাতা ফিরলেও মমতার নির্দেশ, দিল্লিতেই থেকে যাবেন সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও জহর সরকার।