সংক্ষিপ্ত
১৯২৮ সালের ২৬ মে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু প্রথমে হিলিতে গিয়েছিলেন। এরপর হিলির বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা প্রতাপ চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে দেখা করেন। প্রতাপ চন্দ্রের বানানো সারদাভবন পাঠাগার দেখে প্রশংসা করেছিলেন নেতাজি।
১৯২৮ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhas Chandra Bose) পা রেখেছিলেন তৎকালীন দিনাজপুর জেলার (Dinajpur District) হিলিতে। দার্জিলিং মেল (Darjeeling Mail) ধরে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। ওই সফরে বালুরঘাট জেলা কংগ্রেসের (Congress) পার্টি অফিস উদ্বোধন করেছিলেন। যা প্রায় ৫০ বছর আগে আত্রেয়ীর গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। পাাশাপাশি একাধিক সমাবেশও করেছিলেন তিনি। এরপর রাত কাটিয়েছিলেন বালুরঘাটের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা সুরেশ, সুশীল ও সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। কিন্তু, প্রায় দশ বছর আগে সেই বাড়িও ভাঙা পড়েছে প্রমোটারদের চক্করে। এখন বাড়ির অর্ধেক অংশকে রক্ষা করে সেটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বংশধররা।
জানা গিয়েছে, ১৯২৮ সালের ২৬ মে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু প্রথমে হিলিতে গিয়েছিলেন। এরপর হিলির বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা প্রতাপ চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে দেখা করেন। প্রতাপ চন্দ্রের বানানো সারদাভবন পাঠাগার দেখে প্রশংসা করেছিলেন নেতাজি। এরপর হিলির জমিদার কুমুদনাথ দাসের কাছারি বাড়িতে উঠেছিলেন। সেখানে রাত কাটিয়েছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, নেতাজি কাছারি বাড়ির যে ঘরে ছিলেন, সেখানে কোনও শৌচালয় ছিল না। যার ফলে নেতাজির জন্য রাতারাতিই একটি শৌচাগার বানানো হয়েছিল। যা এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। হিলিতে কংগ্রেস নেতা নিশিথনাথ কুণ্ডু, প্রতাপ চন্দ্র মজুমদার-সহ একাধিক নেতারা মিলে নেতাজিকে হিলির বারোয়ারিতলায় নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার পর সভা করেছিলেন।
আরও পড়ুন- 'রাজপথে নেতাজির মূর্তি, গান্ধীবাদীদের কাঁটা ঘায়ে যেন নুনের ছিঁটা', বিস্ফোরক অনুজ ধর
এরপর হিলি থেকে সোজা বালুরঘাটে গিয়েছিলেন নেতাজি। বালুরঘাটে (Barulghat) কংগ্রেস ঘাট এলাকায় জেলা কংগ্রেসের একটি পার্টি অফিস উদ্বোধন করে বিশাল জনসভা করেন তিনি। সেই সময় বালুরঘাট থেকে দক্ষিণে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত পত্নিতলা ও ধামোরহাটে দুর্ভিক্ষ চলছিল। যা নিয়ে বিট্রিশ সরকার উদাসীন ছিল। নেতাজি ওই এলাকায় গিয়ে সভা করেছিলেন। এরপর ব্রিটিশ সরকার দুর্ভিক্ষগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রাণ পাঠাতে বাধ্য হয়। সেই দিন বালুরঘাটের কংগ্রেস নেতা সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে রাত কাটিয়ে পরের দিন হিলির রেল ধরে ফিরে যান।
আরও পড়ুন- রাজ্যের জন্য সুখবর, বাংলাকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিশ্ব ব্যাঙ্কের
প্রসঙ্গত, বালুরঘাটের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে নেতাজির রাত্রী যাপনের বিভিন্ন স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু পারিবারিক ভাবে বাড়ির অর্ধেক অংশ ভেঙে যায়। বাড়িটি যাতে অক্ষত রেখে সেটিকে হেরিটেজ (Heritage) করা যায় তার জন্য আদালতেও গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি একই দাবি তুলেছেন হিলির বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক হিমাংশু সরকার। তিনি বলেন, "নেতাজির অনেক স্মৃতি থাকলেও কোনও স্মৃতি সৌধ নেই। নেতাজি যে এখানে এসেছিলেন, তা জেলাবাসীকে জানান দিতে হিলি হোক কিংবা বালুরঘাট, একটা স্মৃতি সৌধ বানালে ভালো হয়।"
এবিষয়ে সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্য তপান্ত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "প্রায় দশ বছর আগে আমার বাড়ির অংশ বিক্রি হয়ে যায়। সেই সময় আমি জেলাশাসক, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালকে জানিয়েছিলাম। তারপরেও বাড়ির অর্ধেক অংশ রক্ষা হয়নি। এখন আমার বাড়ির যে অংশটুকু রয়েছে সেখানে যেভাবে বসবাস করছি সেই ভাবেই করতে চাই। নেতাজির সব স্মৃতি বালুরঘাটের এক ব্যবসায়ীর কাছে দেওয়া আছে। তবে স্মৃতি সংরক্ষিত হলে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির সঙ্গে নেতাজির সম্পর্কের কথা।"
আরও পড়ুন- ধোঁয়ায় ঢাকল এলাকা, ডোমজুড়ে ভস্মীভূত থার্মোকল কারখানা
ইতিহাস গবেষক সমিত দাস বলেন, "বালুরঘাট শহরে নেতাজি এসে বিভিন্ন রকম সভা ও কর্মসূচি করেছিল। কিন্তু তাঁর স্মৃতির জন্য শহরের মূর্তি ছাড়া বড় কোনও স্মারক নেই। তাই নেতাজি যে জায়গাগুলিতে এসেছিলেন বা যেখানে কর্মসূচি করেছিলেন, সেই জায়গাগুলি সংরক্ষণ করে হেরিটেজ বানালো হলে খুব ভালো হয়।"