সংক্ষিপ্ত
এই ভয়াবহ কান্ড ঘটে যেতেই মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকার ফেরিঘাটগুলির বেহাল চিত্র ফুটে উঠতে শুরু করেছে। এদিকে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্স এর মধ্যে দম আটকে মৃত চিকিৎসাধীন রোগী সারথি মন্ডল স্থানীয় গৌরীপুর গ্রামের বাসিন্দা।
সটান নৌকার ওপর থেকে মুমূর্ষ রোগী সমেত অ্যাম্বুলেন্স গঙ্গায় পড়ে গেল (ambulance sank in the Ganges)। মুহুর্তে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হল রোগীর (Patient died)। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল সোমবার মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) রেজিনগর এলাকায়। অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে দম আটকে মৃত্যু হওয়া ঐ রোগীর নাম সারথি মন্ডল (৫৮)। ঘটনার জেরে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা ড্রাইভার সহ বাকি ৩ জন কোনরকমে উদ্ধার হয় স্থানীয় বাসিন্দা ও বিপর্যয় মোকাবিলা টিমের তৎপরতায়। শেষ পাওয়া খবরে জানা যায় তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরই চরম প্রশাসনিক নজরদারির অভাবের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন স্থানীয় গঙ্গা ঘাট পারের বাসিন্দারা। তাদের দাবি, একদিকে ফেরিঘাট মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের ইচ্ছে, পাশাপাশি প্রশাসনিক নজরদারির অভাব। এই দুই এর ফলে নিত্যদিন গঙ্গায় নৌকা পারাপারের ক্ষেত্রে চরম প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে মালবাহী ছোটখাটো গাড়ি দেদার তোলা হয়। ফলে যেকোন মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র"।
এদিকে এই ভয়াবহ কান্ড ঘটে যেতেই মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকার ফেরিঘাটগুলির বেহাল চিত্র ফুটে উঠতে শুরু করেছে। এদিকে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্স এর মধ্যে দম আটকে মৃত চিকিৎসাধীন রোগী সারথি মন্ডল স্থানীয় গৌরীপুর গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কোমরের সমস্যায় জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছিলেন। তার চিকিৎসা চলছিল। এদিন তার পরিবারের সদস্যরা সারথি বাবুকে চিকিৎসকের কাছ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরে নিয়ে আনছিলেন। সেই সময় সকলে তারা এসে হাজির হয় রেজিনগরের গঙ্গার তীরবর্তী ফেরিঘাটে। যোগাযোগব্যবস্থার আর কোন সুগম বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা এই পথ বেছে নেয়।
সেক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে থাকা অন্যরা নৌকার উপর দাঁড়িয়ে থাকেন। অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে চালক ও রোগী সারথি বাবু থাকেন। সেইমতো গাড়ির চালক পাড় থেকে গাড়ি নৌকায় তোলার জন্য স্টার্ট দিতেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে অ্যাম্বুলেন্স এর সামনের চাকা গড়িয়ে গিয়ে সরাসরি পরে গঙ্গার জলে। বিকট আওয়াজ শুনে স্থানীয়রা তড়িঘড়ি ছুটে আসে ফেরিঘাটে। ইতিমধ্যে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে চালকের আসনে থাকা ড্রাইভার গাড়ির জানালার ভিতর দিয়ে কোনরকমে বেরিয়ে সাঁতার কেটে পারে উঠতে পারলেও, শত চেষ্টা করেও অ্যাম্বুলেন্স এর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ হয় সারথি বাবু।
পরবর্তীতে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিপর্যয় মোকাবিলা টিম এসে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে ক্রেনের সাহায্যে পারে তুলে আনে। ততক্ষনে কার্যত নিস্তেজ হয়ে যান হতভাগ্য সারথি বাবু। তাকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা সেখানেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এইদিকে ঘটনা এমন পরিণতিতে রীতিমতো হতবাক এলাকার মানুষজন থেকে শুরু করে মৃতের পরিবারের লোকজন।
পরিবারের সদস্যরা আক্ষেপ করে বলেন,"এটা খুবই দুঃখজনক যে কেবলমাত্র নজরদারি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার জন্য এইভাবে পরিবারের কর্তাকে চলে যেতে হল। এর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন"। যদিও প্রশাসনিক নজরদারির অভিযোগ স্বভাবসিদ্ধভাবে অস্বীকার করে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা। ঘটনার পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে আগামী দিনে মুর্শিদাবাদের গঙ্গার তীরবর্তী ফেরিঘাটের নিরাপত্তা নিয়ে।