সংক্ষিপ্ত

২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও আসেনি কোনও ফোন ইউক্রেনের ডাক্তারি পড়ুয়া বঙ্গ সন্তানের। ধ্বংসস্তুপ কিভে বাঙ্কারের মধ্যে লুকিয়ে ছিল কিভ মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুম হামিদ পারভেজ, শেষ ফোনে এটাই জেনেছিল বাবা-মা।

মালদহ-তনুজ জৈনঃ-   চব্বিশ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও আসেনি কোনও ফোন ইউক্রেনের ডাক্তারি পড়ুয়া বঙ্গ সন্তানের। । ধ্বংসস্তুপ কিভে বাঙ্কারের মধ্যে লুকিয়ে ছিল কিভ মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুম হামিদ পারভেজ ( Hamid Parvez staranded in Ukraine)। খাওয়া নেই, জল নেই। শুক্রবার সকাল ১১টায় শেষ যোগাযোগ হলে বাবা মাকে জানিয়েছিল বাঙ্কারে লুকিয়ে আছে, খাবার শেষ। বাইরে অনবরত গোলা বর্ষন ( Russia Ukraine War  ) আর সাইরেনের আওয়াজ। এর পরেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। টানা কয়েকদিন ধরে নিজের ছেলের আর খোঁজখবর পাননি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের মিটনা হাইস্কুলের শিক্ষক মহম্মদ মোমিনুদ্দিন। ছেলের খোঁজ না পেয়ে চরম উৎকন্ঠায় আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁদের। একরাশ শুন্যতা বাড়ি জুড়ে। যখন বিভিন্ন জায়গায় একে একে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ুয়াদের ঘরে ফেরার খবর মিলছে তখন মাসুম হামিদ পারভেজের কোনও খবর নেই। সরকারি ভাবেও কোনও তথ্য মেলেনি। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলছেন বাবা মোমিনুদ্দিন। 

মালদহ জেলার হরিশচন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পাড়া মজ্জিড পাড়ার বাসিন্দা মাসুম হামিদ পারভেজ। এই মুহূর্তে যিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে রয়েছেন। মাসুম এমবিএসের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বাবা মোহাম্মদ মমিনউদ্দীন স্থানীয় একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। মা হামেদা খাতুন গৃহবধূ। মাসুমের ২ দিদি রয়েছে বিবাহিত এবং এক ছোট ভাই রয়েছে। মাসুমের জন্য এখন দুশ্চিন্তায় সকলেই। তাদের বাড়ির ছেলে যাতে ঠিক ঠাক ভাবে বাড়ি ফিরে যায় সেই জন্য পথ চেয়ে রয়েছে বাবা-মা। ফোনে প্রত্যেকদিন কথা হলেও কিছু দিন ভাবে ঠিকঠাক কথা হচ্ছে না। ২৪ তারিখ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই মাসুম তার বন্ধুদের সাথে হোস্টেল থেকে গিয়ে আশ্রয় নেয় একটি বাঙ্কারে। খাবার-দাবার বলতে সাথে থাকা ফল এবং বিস্কুট। তাও শেষ হয়ে গেছে কয়েকদিনে।

আরও পড়ুন, 'বিমানে মৃতদেহ আনতে জায়গা বেশি লাগে', ইউক্রেনে ভারতীয় ছাত্রের মৃ্ত্যুতে বিস্ফোরক বিজেপি বিধায়ক

নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে কয়েকদিন ধরে মাসুমের সঙ্গে ঠিক করে কথা বলতে পারছে না তার বাবা-মা। ফেরার জন্য সে কিছু ব্যবস্থা করতে পেরেছে কি না সেই বিষয়েও বুঝতে পারছে না বাড়ির লোক। এদিকে দিন যত বাড়ছে ইউক্রেনের যুদ্ধ ততই ভয়ানক রূপ নিচ্ছে। রুশ সেনার দখলে চলে যাচ্ছে ইউক্রেনের একের পর এক শহর। ভারত সরকার 'অপারেশন গঙ্গা' নামে একটি অভিযানের মধ্য দিয়ে দেশের ছেলে মেয়েদের দ্রুত ফেরাচ্ছে। বহু ভারতীয় ছাত্র পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী পশ্চিমি দেশগুলো থেকে বিমান ধরছে। বর্তমানে ইউক্রেনের বেশির ভাগ জায়গায় আর থাকার মতো অবস্থা নেই। সাথে কিছুদিন আগে কর্নাটকের একজন ছাত্রের মৃত্যুর পর প্রত্যেকের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। এরকম অবস্থায় মাসুমের ফেরার ব্যাপারে কতটা কী করতে পেরেছে তা নিয়ে স্পষ্ট জানে না তার বাড়ির লোক। কারণ শেষ কয়েকদিন সঠিক ভাবে কথাই হচ্ছে না ছেলের সাথে। এরকম অবস্থায় বাবা,মায়ের আর্জি তাদের ছেলে এবং প্রত্যেক ছাত্রই যাতে সঠিক ভাবে ফিরে যায় নিজের ঘরে।

আরও পড়ুন, রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে গুলিবিদ্ধ আরও ১ ভারতীয় ছাত্র, কিয়েভের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

মাসুমের বাবা মোমিনুদ্দিন বলেন, ছেলের বছর চতুর্থ বর্ষ। ১৫ তারিখ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি আসত। কিন্তু তার মাঝেই যুদ্ধ বেধে গেল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ছেলে তার সঙ্গীদের সাথে বাংকারে থাকছে। খাওয়ার বলতে সাথে থাকা কিছু শুকনো খাওয়ার। ঠিক ভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আমরাও ছেলের সঙ্গে ঠিক করে কথা বলতে পারছি না। আমরা শুধু চাইছি আমার ছেলে এবং ওর বন্ধুরা সকলে যাতে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরে যায়।"মাসুমের মা হামেদা খাতুন বলেন, ছেলে ভেবেছিল পরীক্ষাটা শেষ করে আসবে। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ বেধে গেল। এরকম অবস্থায় ওরা তো বেশিদিন থাকতে পারবে তো। তাই আমরা চাইছি সকলে দেশে ফিরে যাক। ছেলে না ফেরা পর্যন্ত প্রবল দুশ্চিন্তায় আছি। সঠিক ভাবেে কথা হচ্ছে না। মায়ের মন তাই ভারাক্রান্ত। পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হচ্ছে। আতঙ্ক সমগ্র ইউরোপ জুড়ে। এরকম অবস্থায় নিজের দেশের লোকদের দ্রুত উদ্ধার করে করে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করছে ভারত। যুদ্ধ আবহ তে ভারত একমাত্র দেশ যারা দায়িত্ব করে নিজের নাগরিকদের ফেরাচ্ছে। ভারতের বহু ছাত্র-ছাত্রী দেশে ফিরেছে এখনও অনেকে প্রতীক্ষারত। প্রত্যেক দেশবাসীর কামনা সকলে যাতে সঠিক ভাবে নিজের দেশে ফিরে যায়।