সংক্ষিপ্ত
২০১৭ বন্যা ত্রাণ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শাসকদলের নব-নিযুক্ত মহিলা ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই অভিযোগ উঠেছে মালদা।
২০১৭ বন্যা ত্রাণ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শাসকদলের নব-নিযুক্ত মহিলা ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই অভিযোগ উঠেছে মালদা। অন্যদিকে সেই তৃণমূল নেত্রীই জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে সম্বর্ধনা নিয়েছে। এমনই ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আর সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই বিরোধীরা আবারও নিশানা করেছে শাসক দলকে। পাশাপাশি জেলা জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনেরও ডাক দেওয়া হয়েছ।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৭ সালে। বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়ে রয়েছেন শাসকদলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমানে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক নব নিযুক্ত মহিলা সভাপতি জয়শ্রী কর্মকার এবং তার স্বামী বাপি পাল। হরিশ্চন্দ্রপুরের সিপিএম , কংগ্রেস এবং বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ ২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে শাসকদলের একের পর এক জন-প্রতিনিধি এবং হেভি ওয়েট নেতারা অভিযুক্ত হয়েছেন। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস, বিরোধী দল-নেত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী সুজাতা সাহা এবং শিশু নারী ত্রাণ কর্মাদক্ষ রোশনারা খাতুনের বিরুদ্ধে বন্যার ত্রাণ নিয়ে কেলেঙ্কারি করার অভিযোগে মামলা পর্যন্ত হয়। এই মামলায় রোশনারা খাতুনের জেল পর্যন্ত হয়। অন্যদিকে সুজাতা সাহার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি আদালত থেকে জামিন পান। পাশাপাশি কোয়েল দাস আদালত থেকে জামিন নেন। কিন্তু ওই একই মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির
প্রাক্তন সভাপতি জয় শ্রী কর্মকার এবং তার স্বামী বাপি পাল। প্রশাসনের তরফ থেকে এই দুজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে। কিন্তু রহস্য জনক ভাবে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দুজনেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিরোধীদের আরও অভিযোগ জয়শ্রী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের হয়েছে তাতে রাজ্যের কোনো আদালতেই জামিন পাওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি নতুন কমিটিতে ব্লক তৃণমূলের মহিলা সভাপতির পদ পেয়েছেন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জয়শ্রী কর্মকার। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসার পরও কী ভাবে তিনি পদ পেলেন তা নিয়ে দলের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
হরিশ্চন্দ্রপুরের বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধী নেতৃত্বের দাবি ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতি-গ্রস্তদের টাকা ব্যাপক ভাবে নয়-ছয় করে ছিলেন তৃণমূলের নেতা থেকে শুরু করে জন-প্রতিনিধিরা। এই নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং কোর্টে মামলা দায়েরও করা হয়। পরবর্তীকালে পুলিশি তদন্তে শাসকদলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমানে পূর্ত কর্মদক্ষ জয়শ্রী কর্মকার এবং তার স্বামী ব্যাপী পালের নাম উঠে আসে। কিন্তু রহস্য জনক ভাবে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার তো দূরের কথা প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি বলে অভিযোগ বিজেপি কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃত্বের। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এই ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে এবং তাদের খাতায় জয়শ্রী কর্মকার ও বাপি পাল পলাতক হিসাবেই দেখানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
কিন্তু জয়শ্রী কর্মকার ও তার স্বামী পলাতক হিসাবে চিহ্নিত হলেও শাসকদলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেলা নেতৃত্বের পাশাপাশি ছবি তুলতে দেখা যাচ্ছে জয়শ্রী কর্মকারকে। এমনকি সম্প্রতি মহিলা ব্লক সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় শাসক দলের জেলা মহিলা সভাপতি মৃণালিনী মাইতির হাত থেকে সংবর্ধনা নিতে দেখা গেছে জয়শ্রী কর্মকারকে। পাশাপাশি সেই সব ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়েছে। আর এরপরেই বিতর্ক দানা বেধেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে।
অভিযুক্তদের গ্ৰেফতার প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন বিষয়টি কি অবস্থায় আছে খোঁজ নিয়ে বলতে হবে। তবে খোঁজ নিচ্ছি।
উত্তর মালদা জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, জয়শ্রী কর্মকার বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত এবং তারা নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশের চোখে সে পলাতক। কিন্তু সে আবার শাসকদলের মহিলা ব্লক সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে এবং জেলা নেতৃত্ব তাকে সম্বর্ধনা দিচ্ছে। সেই ছবি ঘোরাঘুরি করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পুলিশ যদি অতি দ্রুত ব্যবস্থা না হয় দরকার হলে আমরা থানার সামনে ধরনা দেব।
সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য জামিল ফিরদৌস বলেন, তৃণমূলের উঁচু থেকে নিচুতলা পর্যন্ত দুর্নীতি। হরিশ্চন্দ্রপুরে বন্যা ত্রাণ নিয়ে ব্যাপক হারে দুর্নীতি হয়েছিল। সেই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত থাকার পরেও তৃণমূল নেত্রীকে মহিলা ব্লক সভাপতি করা হয়েছে। তার স্বামীও অভিযুক্ত। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। দরকার হলে তাদের গ্রেফতারের দাবীতে আমরা থানা ঘেরাও করবো।
কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি আব্দুস শোভান বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে অভিযুক্তরা জামিন পাইনি। তাদের গ্রেপ্তার করার কথা, কিন্তু পুলিশ করছে না। অতি দ্রুত গ্রেপ্তার না হলে কংগ্রেস এর তরফ থেকে থানা ঘেরাও করে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে। এলাকার মানুষ সব কিছু বুঝতে পারছি আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এর জবাব মানুষ দেবে।
যদিও ফোনে যোগাযোগ করা হলে মহিলা তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণালিনী মাইতি বলেন, উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী নব-নির্বাচিত ব্লক সভাপতিদের আমরা সম্বর্ধনা দিয়েছি। বাকি বিষয়ে আমি ঠিক জানিনা। যদিও এই নিয়ে এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব মুখে কুলুপ এঁটেছে। স্বাভাবিক ভাবে অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
কাল প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাতে কমিশন হবে বিক্রান্ত, উন্মোচিত হবে নৌবাহিনীর নতুন পতাকা
বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আসন থাকবে ফাঁকা, ব্লকে একাই বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা