সংক্ষিপ্ত

পঞ্চায়েত নির্বাচন আর বিধানসভা নির্বাচন বা লোকসভার নির্বাচন- যেকোনও ক্ষেত্রেই বীরভূমের নির্বাচনে অনুব্রত মণ্ডল ছিল শেষ কথা। কিন্তু তিহার জেলে থেকে কী সেই ক্যারিশ্মা দেখাতে পারবেন কেষ্ট।

 

গরুপাচার মামলায় দিল্লির তিহার জেলে দিন কাটছে বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডলের। আপাতত সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার কোনও আশাই নেই। আগামী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন। অন্যান্য জেলাগুলির মত বীরভূমেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল ছাড়া বীরভূমের নির্বাচন কিছুটা হলেও মৃয়মাণ।

 

আসুন দেখেনি বীরভূমের নির্বাচনে ঠিক কতটা কার্যকরী ছিলেন অনুব্রত মণ্ডলঃ

১. ফিরে দেখা

২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল-জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের মধ্যে ৪২টি দখলে রেখেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত সমিতির ১৯ আসনই তৃণমূলের দখলে ছিল। গ্রামসভার আসন সংখ্যা ১৬৭টি। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে ছিল ১৬৪, বিজেপির ২টি আর অন্যান্যদের দখলে ছিল ১টি আসন। বলা যাতে পারে ২০১৮ সালে কার্যত বিরোধী শূন্য ছিল বীরভূম।

২. কেষ্টর ক্যারিশ্মা

পঞ্চায়েত নির্বাচন আর বিধানসভা নির্বাচন বা লোকসভার নির্বাচন- যেকোনও ক্ষেত্রেই বীরভূমের নির্বাচনে অনুব্রত মণ্ডল ছিল শেষ কথা। প্রচার থেকে শুরু করে ভোটের কাজকর্ম - সবেতেই তিনি ছিলেন মধ্যমণি। তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্পূর্ণ আস্থা রেখতেন তাঁর ওপর। প্রার্থী দাঁড় করানো পর্যন্তই তিনি দায়িত্ব নিতেন। প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার গুরুভার কিন্তু কেষ্টর ওপরই পডৃত।

৩. প্রার্থী নন অনুব্রত

কোনও নির্বাচনেই তিনি প্রার্থী হননি। কিন্তু বীরভূমের ভোট মানেই অনুব্রত মণ্ডল। বিরোধীদের কথায় অনুব্রতর মেশিনারী। যাইহোক যে কোনও নির্বাচনেরই শেষ, কথা রেজাল্ট। সেখানে সফল তিনি।

৪. গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব

অনুব্রত মণ্ডলের উপস্থিতিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল ছিল বীরভূমে। কিন্তু ভোটে তাঁর আঁচ কখনই তিনি পড়তে দেননি। কিন্তু এবার অনুপস্থিত অনুব্রত মণ্ডল। রীতিমত সক্রিয় অনুব্রতর বিরোধী শিবির অর্থাৎ কালজ শেখরা। শতাব্দী রায়ও কিন্তু বিরোধী শিবির। আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনুব্রতর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতেন। এই অবস্থায় বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেস ছত্রভঙ্গ বলা যেতেই পারে।

৫. দায়িত্বে মমতা

বীরভূমের সাংগঠনিক পদ একাধিক জনকে দিলেও সভাপতির পদে রয়েছেন অনুব্রত। তবে তাঁর অনুপস্থিতিতে মমতাই মূল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এই অবস্থায় প্রায়ই বীরভূম খবরের শিরোনামে থাকে। কারণ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কাজল শেখদের কলকাতার নেতৃত্ব কতটা নিয়ন্ত্রম করতে পারবে তাই নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

৬. অনুব্রতর গ্রেফতারি

অনুব্রতর গ্রেফতারির প্রভাব কিছুটা হলেও ভোটবাক্সে পড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস ছত্রভঙ্গ অন্যদিকে দুর্নীতির- দুইয়ের ষাঁড়াশি আক্রমণ মোকাবিলার মত শক্ত নেতার বড়ই অভাবে বীরভূমে। একাধিক নির্বাচনে অনুব্রতকে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তাতেই তিনি সফল হয়েছেন বলেও দিনের শেষে দাবি করেছেন।

৭. অনুব্রত সেন্টিমেন্ট

বীরভূমের দাপুটে নেতা। অনেকে অনুগামী। তাদের সেন্টিমেন্ট একত্রিত হয়ে তৃণমূলকে সাফল্য দিতে পারে- অনেকে আবারও এমনটাও মনে করছে। বাবার সঙ্গে মেয়েকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তৃণমূলের পক্ষেও যেতে পারে।

৮. বিজেপির অবস্থান

বীরভূমে একটা সময় শক্তিশালী সংগঠন তৈরি করেছিল বিজেপি। দুধকুমার - থাকতেন খবরের শিরোনামে। বিজেপিতেই তিনি বর্তমানে কোনঠাসা। বীরভূমে বিজেপির সেই শক্তিশালী ভিত অনেকটাই নড়বড়ে। বিধানসভা নির্বাচনের পর অনেকেই সন্ত্রাসের কারণে গ্রাম ছাড়ে। তাতে রাজ্য নেতাদের পাশে না থাকারও অভিযোগ রয়েছে। যাইহোক সবমিলিয়ে বিজেপি কিছুটা ব্যাকফুটে।

৯. বামেদের অবস্থা

একটা সময় বীরভূম সিপিএম-এর শক্তিশালী গড় ছিল। রামচন্দ্র ডোম বোলপুরের দীর্ঘ দিনের সাংসদ ছিলেন। জিতেছেন, ১৯৯১, ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৯ সালে। কিন্তু তারপর থেকেই বীরভূমে তৃণমূল শক্তিশালী হতে থাকে। অন্যদিকে দুর্বল হতে থাকে বামেরা। যাইহোক এবার মহম্মদ সেলিম কিছু মিটিং মিছিল করেছেন। কিন্তু তারপরও সংগঠনের অবস্থার প্রমাণ দেবে ভোটবাক্স। কারণ গণতন্ত্রে ভোটই শেষকথা।

১০. অনুব্রতর কথা

ভোটমানেই অনুব্রত মণ্ডলের হুমকি। যদিও তিনি সেগুলিকে হুমকি বলতে নারাজ। গুড়-বাতাসা, চড়াম চড়াম- এই সব শব্দগুলি কিন্তু এবার ভোট থেকে হাওয়া।

আরও পড়ুনঃ

ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর তুলনা, দাড়ি নিয়ে কটাক্ষ বিজেপি নেতার

আলৌকিক উদ্ধারকাজ: নিশ্চিত মৃত্যুর হাতে থেকে বেঁচে আসার সেরা ১০টি হাড়হিম করা ঘটনা রইল ছবিতে

পঞ্চায়েত নির্বাচনে গতবারের মত তৃণমূলের হাতেই একচেটিয়া ক্ষমতা থাকবে? প্রশ্ন বাকি দলগুলির অবস্থান নিয়েও