জলপাইগুড়ির জঙ্গলে রুকরুকা নদীর পাশে অবস্থিত দেবী চৌধুরাণীর কালীমন্দির, যেখানে মায়ের হাতে অস্ত্রের বদলে থাকে নরমুণ্ড ও সুরাপাত্র। কথিত আছে, স্বয়ং দেবী চৌধুরানী এখানে বজরায় চেপে এসে পুজো শুরু করেন। 

চারিদিকে চলছে পুজো পুজো রব। আর কদিন পরই মা কালীর আরাধনা করার পালা। এবার কালীপুজো পড়েছে ২০ অক্টোবর। সোমবার মা কালী পুজিত হবে বিভিন্ন মণ্ডপে মণ্ডপে। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রীতি মেনে মায়ের পুজো করা হয়। অধিকাংশ জায়গায়ই থাকে আলাদা ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের কারণে অন্যান্য পুজো থেকে একেবারে আলাদা জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরাণীর কালীমন্দির।

জঙ্গলে ঘেরা চারদিক। পাশ দিয়ে হয়ে চলেছে রুকরুকা নদী। রয়েছে শ্মশান। তার মাঝেই রয়েছে দেবী চৌধুরাণীর কালীমন্দির। এখানে মা কালীর হাতে কোনও অস্ত্র নেই। দেবীর এক হাতে নরমুণ্ড। অপর হাতে সুরাপাত্র।

কথিত আছে, মন্দিরের পাশ গিয়ে বয়ে যাওয়া রুকরুকা নদী দিয়ে বজরায় চেপে আসতেন দেবী চৌধুরণী। তার হাতেই পুজো শুরু হয় এখানে। আগে বটগাছের নীচে মায়ের পুজো হত। সে সময় বিশালাক্ষী রূপে দেবীর পুজো করতেন ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান এলাকার আদিবাসীরা। এরপর বেশ কিছুদিন এখানে পুজোর দায়িত্ব নেয় জলপাইগুড়ির রাজ পরিবার।

জঙ্গলের মাঝে মায়ের পুজো খুভ বেশদিন চালাতে পারেনি তারা। রাজ পরিবার হাতগুটিয়ে নিলে এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের কাঁধে তুলে নেন পুজোর দায়িত্ব। স্থানীয়দের দাবি, রুকরুকা নদীতে যে বজরা চলাচল করত, কয়েক দশক আগেও তার প্রমাণ ছিল। মন্দির চত্বরে যে বটগাছ রয়েছে, ইংল্যান্ডের এক উদ্ভিদ বিজ্ঞানীকে দিয়ে পরীক্ষা কয়িয়ে জানা গিয়েছে সেটার বয়স চারশো বছরেরও বেশি।

এই মন্দিরে এক সময় নয়ন নামে এক কাপালিক ছিল। সে পাতু দাস নামে একজনকে বলি দিয়েছিলেন। সেই অপরাধে তাঁর ফাঁসি হয়। জলপাইগুড়ি মন্দির চত্বরে রয়েছে পঞ্চমুন্ডীর আসন। এখানে কৌশিকী অমাবস্যার রাতে সাধনার জন্য আসেন তান্ত্রিকরা। প্রতি বছরের মতো এবছরও মন্দিরে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। এক বিশেষ নিয়ম মেনে পুজিত হন মা কালী।