সংক্ষিপ্ত

গাড়ি সংস্থা প্রশ্ন তুলেছিল, নিহত গৃহবধূর কোনও আর্থিক উপার্জন ছিল না। তিনি গৃহবধূ ছিলেন। তাহলে তাঁর সম্ভাব্য উপার্জন হিসাবে এত টাকা চাওয়া হয় কী করে? সেই প্রসঙ্গেই যুগান্তকারী শুনানি দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি। 

‘গৃহবধূরা বেকার নন’, মহিলাদের গৃহস্থালির কাজেরও পারিশ্রমিক রয়েছে। কোনও মহিলা অফিসে চাকরি বা ব্যবসা করে টাকা রোজগার না করলেও তিনি কোনও ছুটি না নিয়ে ৩৬৫ দিন বাড়ির কাজকর্ম করেন, এই কাজ অবশ্যই পারিশ্রমিক বা বেতন যোগ্য, একটি দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ মামলায় রায়ে এমনই জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলায় নিম্ন আদালতের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ বহাল রেখেছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।

২০০৮ সালে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলায় ব্যাখ্যা করেছিল যে, যাঁরা বাড়িতে থাকেন, তাঁদের বেকার বলে গণ্য করলে হবে না। তাঁদের কাজের জন্য প্রত্যেকদিন ১০০ টাকা করে ধার্য করতে হবে।


পশ্চিমবঙ্গে গত ২০০৬ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন বর্ধমানের ক্ষীরগ্রামের লুফতা বেগম নামে এক মহিলা । পরে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ছেলে মীর শামিম বর্ধমান জেলা আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর অভিযোগ, মোটর অ্যাক্সিডেন্ট ক্লেম ট্রাইব্যুনাল থেকে ক্ষতিপূরণের যথেষ্ট অর্থ তাঁরা পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেন মৃতের ছেলে। কারণ, যে গাড়িটির দ্বারা দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই গাড়িটির বিমা করা ছিল। 

মৃতার পরিবারকে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু, তা মেনে নেয়নি নিহতের পরিবার। কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই পরিবার। তাঁদের হয়ে আদালতে মামলা লড়েন আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। তিনি ২০০৮ সাল থেকে মৃতা গৃহবধূর সম্ভাব্য উপার্জনের হিসাব দিয়ে আদালতে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পালটা সংস্থার তরফে প্রশ্ন তোলা হয় যে, মৃতা কোনও উপার্জন করতেন না। তিনি গৃহবধূ ছিলেন। তাহলে তাঁর সম্ভাব্য উপার্জন হিসাবে এত টাকা চাওয়া হয় কী করে?

এই মামলারই শুনানিতে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তা ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের উল্লেখ করেন। সেখানে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যাঁরা গৃহবধূ তাঁদের বেকার ভাবলে চলবে না। তাঁদের শ্রমের মূল্য তা গণ্য করতে হবে।'

এরপর হাইকোর্টে ওই বিমা সংস্থাকে ৪ লক্ষ ৫১ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তার সিঙ্গেল বেঞ্চ স্পষ্ট জানায় যে, ওই মহিলার ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্য টাকা অবিলম্বে তাঁকে দিতে হবে।

বিচারপতি বলেন, “কোনও গৃহিণী মহিলার আয়কে আর পাঁচজন উপার্জনকারীর সঙ্গে তুলনা করা চলে না। কারণ তিনি শুধু উপার্জনই করেন না, গোটা সংসার এবং পরিবারকে আগলে রাখেন।” তাঁদের থেকে আয়ের নথি বা তথ্য জানতে চাওয়া অপ্রত্যাশিত বলেই মত কলকাতা হাইকোর্টের। পনেরো বছরের পুরনো একটি ঘটনা নিয়ে এই মামলার শুনানি চলে কলকাতা হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার সেই মামলা উঠেছিল বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের বেঞ্চে।

বিচারপতি এদিন এজলাসে বলেন, ”কে বলেছে, গৃহবধূরা বেকার? সংসারে গৃহবধূদের অবদান অনেক বড়। তাঁরা কোনও ছুটি না নিয়ে ৩৬৫ দিন সংসারের যাবতীয় কাজ করেন। একই কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করালে যে খরচ হত, তা ব্যয় করতে হয় না ওঁদের দৌলতেই। তাই সংসারে ওঁদের কাজের আর্থিক মূল্যও রয়েছে। আর সেই জন্যই গৃহবধূদের বেকার বলা যাবে না। তাঁদেরকেও উপার্জনকারী হিসাবেই দেখতে হবে।”

বৃহস্পতিবার এই মর্মে এক গৃহবধূর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা দেওয়ার নিদান দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তাই বাকি আরও ৪ লক্ষ ৫১ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হবে বিমা সংস্থাটিকে।