সংক্ষিপ্ত

রাজ্যের বুকে ভয়ানক এক খুন। 

তারপর মৃতের হাত-পা এবং মুন্ডু কেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এদিক-সেদিক। শুধু তাই নয়, ক্যামেরাতে ধরে রাখা হয়েছিল শরীর থেকে হাত-পা এবং মুন্ডু কাটার সেই দৃশ্যও।

তদন্তে নেমে মৃতের কাটা হাত এবং পা কয়েকদিনের মধ্যেই খুঁজে বের করেছিল পুলিশ। কিন্তু মুন্ডু খুঁজে বের করতে গিয়ে রীতিমতো কালঘাম ছুটে গেছিল পুলিশের। চারিদিক তোলপাড় করে দেওয়া হুগলির সেই বিষ্ণু মাল হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া আটজনের মধ্যে সাতজনকেই ফাঁসির সাজা দিল চুঁচুড়া আদালত। আর একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড।

সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ এটা সাড়ে তিন বছরের লড়াই। বিষ্ণু একজন মেয়েকে ভালবাসত। সেই কারণে, ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়। মুরগি কাটার চপার দিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা হয় সেই দেহ। ওই বীভৎস ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম। আদালত আজ সাতজনকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। অন্যদিকে, একজনের সাত বছরের জেল হয়েছে। এই মামলা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

গত ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর, চুঁচুড়ানিবাসী বিষ্ণুকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেছিল বিশাল এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা। অভিযোগ উঠেছিল, সেই রাতেই চাঁপদানি এলাকায় একটি বাড়িতে বিষ্ণুকে নৃশংসভাবে খুন করেন বিশাল। এরপর সেই দেহ ৬ টুকরো করে শেওড়াফুলি এবং বৈদ্যবাটির বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এক যুবতীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিশাল। সেই যুবতী তাতে সাড়া দেননি। কারণ, সেই যুবতীর সঙ্গে আগেই বিষ্ণুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আর সেইকথা জানার পরেই আক্রোশবশত বিষ্ণুকে খুন করেছিলেন বিশাল। এরপরেই তদন্তে নেমে একে একে বিশালের শাগরেদদের গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা।

বিষ্ণুকে খুনের পর তাঁর কাটা মুন্ডু নিয়ে রাতভর বসেছিলেন বিশাল। তারপর সকাল হলে মুন্ডুটি নিয়ে একটি সাইকেলে বেরিয়ে যান। প্রায় কুড়ি দিন পরে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় কয়েকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে যান বিশাল। জীবনতলা থানার পুলিশই পরে তাঁকে চন্দননগর পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তাঁকে জেরা করেই বিষ্ণুর কাটা মুন্ডু মিলেছিল। সেটি উদ্ধার হয়েছিল বৈদ্যবাটি খালের ধার থেকে, প্লাস্টিকে মো়ড়া অবস্থায়।

ওই মামলায় গত সোমবার মূল অভিযুক্ত বিশাল দাস এবং তাঁর সাত সঙ্গী— রামকৃষ্ণ মণ্ডল, রথীন সিংহ, রাজকুমার প্রামাণিক, রতন ব্যাপারি, বিনোদ দাস, বিপ্লব বিশ্বাস, মান্তু ঘোষ এবং শেখ মিন্টুকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক শিবশঙ্কর ঘোষ। মান্তুকে সাত বছরের কারাবাসের সাজা দিয়েছেন বিচারক। বাকিদের ফাঁসির সাজা হয়েছে। বিষ্ণু হত্যাকাণ্ড সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা রাজ্যে। গ্রেফতার হওয়ার পর বিশাল এবং তাঁর শাগরেদদের যত বার বৃহস্পতিবার ছিল রায়দানের দিন। এদিন অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে পোস্টার হাতে জড়ো হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। শেষপর্যন্ত, দোষীদের ফাঁসির সাজা হওয়ায় খুশি বিষ্ণুর পরিবারও। আদালত চত্বরে কেঁদেও ফেলেন তাঁর মা, বাবা এবং বোন।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।