সংক্ষিপ্ত
সবে ডাক্তারি করা শুরু করেছেন, নামডাকও হয়েছে, সেই সময় প্রেমে পরলেন একজন যুবতীর যার বাবা আবার বিরাট নামকরা ডাক্তার। সেই নামকরা ডাক্তারের কাছে গেলেন তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে একদিন ।
বাংলার রূপকার, রাজ্যের ইতিহাস লিখেছিলেন নিজের হাতে। সেই ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে ফিরে দেখা তাঁরই জীবনের এক ঘটনাকে। যদিও এই কাহিনীর সঙ্গে জড়িয়ে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচল। তবু এ কাহিনী মন ছুঁয়ে যায় পাঠকদের।
এক কথায় ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়কে বলা হত ধন্বন্তরী। অথচ ডাক্তার হবার খুব যে ইচ্ছে ছিল তেমনটা মোটেও বলা যায় না। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ফর্মের জন্য আবেদন করেছিলেন। ডাক্তারির ফর্মটা আগে আসায় ওইটাই আবেদন করে পূরণ করে পাঠিয়ে দিলেন। শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফর্ম যখন এল ততক্ষণে ডাক্তারিতে ভর্তি হয়ে গেছেন। শুরু সেখান থেকেই।
সবে ডাক্তারি করা শুরু করেছেন, নামডাকও হয়েছে, সেই সময় প্রেমে পরলেন একজন যুবতীর যার বাবা আবার বিরাট নামকরা ডাক্তার। সেই নামকরা ডাক্তারের কাছে গেলেন তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে একদিন । বিয়ের প্রস্তাব শুনে মেয়ের বাবা সদ্য ডাক্তার বিধানকে জিজ্ঞাসা করলেন “তোমার মাসিক আয় কত বাবা?” সবে ডাক্তারি করা শুরু করেছেন তখন। ফলে রোজগারও তেমন নয়। রোজগার শুনে মেয়ের বাবা তরুণ বিধানকে বললেন- তোমার যা মাইনে, আমার মেয়ের হাতখরচ তার চেয়ে বেশি। এই রোজগারে মেয়ের সারা বছরের খরচা সামাল দেবে কিভাবে!!
সেই দিন তরুণ বিধানের কাছে কোন উত্তর ছিলনা। সেই যে আঘাত পেলেন, এরপর বাকি জীবনটা চিরকুমারই থেকে গেলেন। ১৯৪৮-এ যখন ডাক্তারি পেশা ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করছেন তখন ডাক্তারি থেকে ওনার মাসে আয় ছিল ৪২০০০ টাকা। সেই সময় ৪২০০০ টাকা মানে আজকের বাজারে কত সেটা বোঝাতে একটা ছোট্ট হিসেব দেওয়া যাক। ১৯৪৭-এ ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল- ৮৮.৬২ টাকা যা বেড়ে এখন প্রায় ২৯০০০ টাকা। অর্থাৎ এই ৭০ বছরে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৩২৭ গুণ।সেই হিসেবে ওনার সেই সময়ের ৪২০০০ টাকা প্রতি মাসে, আজকের হিসেবে দাঁড়ায় ১,৩৭,৩৪০০০ টাকা।
উল্লেখ্য, মেয়ের বাবা ছিলেন, স্বনামধন্য চিকিৎসক স্যার নীলরতন সরকার। সেদিনের তরুণ প্রেমিক মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বাসস্থানের জন্য গড়ে তুললেন কল্যাণী উপনগরী, লেক টাউন, লবণহ্রদ নগর। স্যার নীলরতনের মেয়ের নাম ছিল কল্যাণী। জনশ্রুতি শোনা যায় নিজের জীবনের প্রথম প্রেমিকাকে এভাবেই অমর করে রেখেছিলেন বিধান রায়। তবে অনেকেই আজ এই চির পরিচিত গল্প বিশ্বাস করতে চান না। কারণ বিধান রায় নিজেই একবার বিয়ের ব্যাপারে বলেছিলেন কাজের সঙ্গেই আমার বিয়ে হয়েছে!