সংক্ষিপ্ত

ওড়িশার রেল দুর্ঘটনার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের পদত্যাগের দাবিতে সরব তখন চলুন একবার ফিরে দেখি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সময়ের রেলের দুর্ঘটনার ছবি।

 

ওড়িশার রেল দুর্ঘটনা নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। বিরোধীরা একে একে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। যদিও দুর্ঘটনার দিন থেকে ঘটনাস্থলে থেকেই উদ্ধারকাজ তদারকি করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি জানিয়েছেন, 'এই সময়টা রাজনীতি করার নয়।' যাইহোক রেল দুর্ঘটনা নিয়ে সবথেকে বেশি সরব হয়েছেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও তৃণমূলের দাবি করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও যশবন্তপুর এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় সবথেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে এই রাজ্যের মানুষের। একটি ট্রেন বাংলা ছেড়ে যাচ্ছিল। অন্য ট্রেনটি বাংলায় আসছিল। তৃণমূলের দ্বিতীয় নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। শনিবার ওড়িশা গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি একটা সময় রেলমন্ত্রী ছিলেন। আসুন এবার জেনেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় রেলদুর্ঘটনার তথ্যাবলী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবার নয় দুই দফায় রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু কোনও বারই মন্ত্রিত্বের মেয়াদ পূর্ণ করেননি। প্রথমবার রেলমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১৯৯৯ সালের ১৩ অক্টোবার। অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা। সেই সময় তাঁর কাজের মেয়াদ ছিল মাত্র ১ বছর ১৫৩ দিন। ২০০০ সালে মমতা রেল বাজেট পেশ করেন। কিন্তু তারপর তাঁর সঙ্গে এনডিএ-কর মতবিরোধ হওয়ায় মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। সাময়িক বিরোধ বলা যায়। তারপর আহাও ২০০৪ সালে এনডিএ-তে ফিরে যান। তবে সেই সময় রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পাননি। পরিবর্তে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল কয়লা ও খনি মন্ত্রক।

দ্বিতীয়বার মনমোহন সিং-র মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন মমতা। সেই সময়ও তিনি দায়িত্ব ছিলেন ২২ মে ২০০৯ থেকে ১৯মে ২০১১। ২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম সরকারের পতন হয়। মহাকরণ দখল করেন মমতা। এবারও মেয়াদ পূর্ণ করেননি তিনি। ১ বছর ৩৬২ দিন দায়িত্বে ছিলেন। তারপর রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি অবশ্য তার পরিবর্তে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁরই দলের দীনেশ ত্রিবেদীকে। পরবর্তী সময় রেলমন্ত্রী হন এককালে মমতার অত্যান্ত ঘনিষ্ট মুকুল রায়।

যাইহোক এই দুই মেয়াদে অর্থাৎ মমতা রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮৯৩টি। যারমধ্যে দুটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৫৪টি। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৮৯৩টি। এই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৪৫১। বিজেপি সরকারের একটি সূত্র এমনটাই দাবি করেছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকলীন সবথেকে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। ২০১০ সালের ২৪ মে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে , সেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৫০ জনের। তখন এই রাজ্যে ছিল বাম শাসন। মাওবাদীদের তাণ্ডবে অশান্ত ছিল জঙ্গলমহল। সেখানেই দুর্ঘটনার কারণ দায় গিয়ে পড়েছিল সিপিআই(এম) ও মাওবাদীদের ওপর। কিন্তু সেবার মমতা পদত্যাগ করেননি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি টুইট করে বলেছেন, 'সেই সময় কী পিসি পদত্যাগ করেছিল?' এখানেই শেষ করেননি শুভেন্দু। তিনি আরও বলেছেন, অশ্বিনী বৈষ্ণব আইআইটির প্রাক্তন ছাত্র ও আইএএস। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তিনি সবথেকে যোগ্য ব্যক্তি। তবে অটলবিহারীর মন্ত্রিসভায় থাকাকালীন পঞ্জাবে রেলদুর্ঘটনায় ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময় তিনি পদত্যাগ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। যদিও অটলবিহারী বাজপেয়ী তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। কিন্তু তারপরই এই রাজ্যের পুরভোটের কারণে এনডিএ-থেকে সাময়িক বিরতি নিতে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়েছিলেন তিনি।

অন্যদিকে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের পদত্যাগ নিয়ে বিরোধীরা সরব। সরব বিজেপির একাংশ। কিন্তু বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, রেলমন্ত্রী হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে যোগ্য। শিক্ষিত। বিষয়টা ভাল বোঝেন। দুর্ঘটনার সঙ্গে মন্ত্রিত্বের কোনও যোগ নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ

From The India Gate: সিপিএম নেতার ৫০ লক্ষ টাকার গাড়ি! প্রশ্ন উঠলেও দল নীরব

Odisha Train Accident: বিরোধীরা যখন রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরব তখনই বিজেপির হাতিয়ার এই তালিকা

Odisha Train Accident: 'সিগন্যাল মেন লাইনে-করমণ্ডল গেল লুপ লাইনে', প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ